বন্যায় ডুবে গেছে সবজি ক্ষেত, বিপাকে কৃষক

- আপডেট সময় : ০৬:৪১:১৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৮ বার পড়া হয়েছে
পাবনা সংবাদদাতা
উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পাবনায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে তিন উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির ফসল। নষ্ট হয়েছে দেড় হাজার বিঘা জমির উঠতি সবজি ও কলাক্ষেত। ব্যাপক ফসলহানির পাশাপাশি দেখা দিয়েছে গো-খাদ্যের তীব্র সংকট। এদিকে বাজারে সরবরাহ কমায় বাড়ছে সবজির দামও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাবনার হার্ডিঞ্জব্রীজ পয়েন্টে বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই পদ্মার পানি। উজান থেকে প্রচন্ড বেগে আসা তীব্র জলস্রোতে দুঃশ্চিন্তা বাড়ছে নদী পাড়ের মানুষের। পানি উন্নয়ন বোর্ড এর হিসেবে গত কয়েকদিনে প্রতিদিন পদ্মায় পানির উচ্চতা বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার। আরেকটু পানির উচ্চতা বাড়লেই ছাড়াবে বিপৎসীমা।
এতে জেলার সদর উপজেলার চরাতারাপুর, ভাঁড়ারা, দোগাছি, হেমায়েতপুর, গয়েশপুর, দাপুনিয়া, আতাইকুলা, সুজানগরের ভায়না, সাতবাড়িয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলার লক্ষ্মীকুন্ডা সহ আরও বেশকিছু এলাকার পদ্মার চরের ও অন্যান্য নিচু জমি বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। এসব জমিতে ব্যাপকহারে মরিচ, কলা, কুমড়া, লাউকুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ধুন্দল, কড়লা, মিষ্টিকুমড়া ও মুলা সহ বিভিন্ন সবজির আবাদ হয়েছিলো।
গত এক সপ্তাহব্যাপাী অব্যাহতভাবে পদ্মার বৃদ্ধির ফলে ৩-৪ দিনে এসব জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে বাজারে সরবরাহ কমেছে এসব সবজির। এতে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দর বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। সরেজমিনে পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়নের ভগীরথপুর, চর প্রতাপপুর, শানিকদিয়ার ও ঈশ্বরদীর লক্ষ্মীকুন্ডা সহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, পদ্মার চর সহ এসব এলাকায় ব্যাপকহারে আবাদ হওয়া সকল সবজি এখন পানির নিচে। কৃষকরা হাঁটু থেকে গলা পানিতে নেমে সাঁতরে শেষবারের মত কড়লা, কুমড়া, লাউকুমড়া ও ধুন্দল সহ উৎপাদিত সবজি তোলার চেষ্টা করছে। সদ্য বোনা মুলা বেড়ে ওঠার আগেই বন্যার কবলে পড়েছে। ফলে সেগুলোও তুলে নিচ্ছে চাষিরা। ইতোমধ্যে পানির নাগাল পাওয়া সবজির গাছগুলো মরতে শুরু করেছে। পদ্মার চরের অধিকাংশ কলার জমি এখন পানির নিচে।
কৃষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে পদ্মায় এমন পানি দেখেননি তারা। এ অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে ধান, কলা ও মরিচ সহ তাদের হাজার হাজার বিঘা জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। চারণভূমি ডুবে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে গোখাদ্যের সংকট। এতে ঋণগ্রস্থ হয়ে পথে বসার আশঙ্কায় তারা। এব্যাপারে চর প্রতাপপুর গ্রামের কৃষক সানাউল্লাহ বলেন, পদ্মার চরে আমার ২৬০ বিঘা কলার জমি এখন পানির নিচে। অধিকাংশ জমিতে পানি কলা গাছের কাইধ অবধি উঠে গেছে। ২১ বিঘা জমিতে বিভিন্ন সবিজর আবাদ করেছি। ৫ বিঘা মুলা সহ পানিতে ডুবে ১২ বিঘা জমির সব শেষ। লক্ষ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে জমি করেছি, এই লোন কিভাবে শোধ করবো? লক্ষ্মীকুন্ডার কৃষক হোসেন মালিথা বলেন, যার ৩০ বিঘা আবাদ আছে তার ২০, যার ২০ বিঘা তার ১৫ বিঘা সবজির জমিই পানি নিচে। আগাম জাতের সবজি করে কিছুটা লাভের মুখ দেখার আশা করছিলাম। এক বিঘা মুলা আবাদে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ, বেচা বিক্রি ৭০-৮০ হাজার টাকা হবার কথা। সবজির অন্যান্য ৫ বিঘা থেকে এখনো কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা আয়ের কথা ছিলো। কিন্তু সে সবই এখন পানির নিচে। ভগীরথপুরের জফির মাঝি বলেন, তিনটি নৌকা দিয়ে পদ্মার চরে কৃষকদের নদী পারাপার করি। এ ঘাট দিয়ে শুধু চর থেকেই কমপক্ষে ২০ গ্রামের শত শত কৃষক প্রতিদিন গড়ে লাখ দশেক টাকার সবজি আমার নৌকায় পার করতো। ভালো মৌসুমে ২০ টাকার সবিজও পার করেছি। কিন্তু এখন এক লাখ টাকার সবিজও পার হচ্ছে না। বাজারে মাল যাচ্ছে কম, দাম তো বাড়বেই।
দাপুনিয়া ইউনিয়নরে শাহদিয়ার এলাকার বিল্লার প্রামানিক ও মন্ডলপাড়ার শাহিন সহ কয়েকজন কৃষক বলেন, শত শত বিঘা জমির সবজি ডুবে গেছে। কিছু গাছ না ডুবলেও মরে যাচ্ছে। তাতে আমরা বড় ধাক্কা খেলাম। যে ক্ষতি হলো তাতে লোন শোধ দেবো কিভাবে সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। এদিকে বাজারে সবজি নেই। একারণে দাম দ্বিগুণ হবার পথে। তারা বলেন, আমরা মন্ডল মোড় বাজারে সবজি বিক্রি করি। এখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকার ব্যাপারীরা আসে। এখানকার হিসেব অনুযায়ী এক সপ্তাহ আগেও এক পিছ কুমড়ার দাম ছিলো ১৮-২৫ টাকা। এখন তার দাম ৪৫-৫০ টাকা। একইভাবে সব সবজির দাম বেড়েছে। ১৫০০ টাকার এক মণ করলা ৩ হাজার, ৩০ টাকার এক কেজি ঝিঙে ৭০ টাকা ও ৫০০-৭০০ টাকার এক মণ মুলা ১২০০ ও গড়ে ৪৫-৫০ টাকার মিষ্টি কুমড়ার দাম হয়েছে এখন ১০০ টাকা ।
এখন কমবেশি পাওয়া গেলেও পানি এভাবে বাড়তে থাকলে ২-৩ দিন পর আর সবজিই মিলবে না এসব এলাকা থেকে। জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, সুজানগর উপজেলার ৩ দশকি ৫, ঈশ্বরদীর ২৫ ও সদর উপজেলার ২৯৭ দশমিক ৫ হেক্টর সহ জেলার ৩২৬ হেক্টর জমি বন্যা আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ২০১ দশমিক ৫ হেক্টর জমির মরিচ, কলা ও সবজি আক্রান্ত হয়েছে।
এ বিষয়ে পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক বলেন, দ্রুতই যদি পানি নেমে যায় তবে অনেক জমিই বেঁচে যাবে। এর বাইরে আমরা ক্ষয়ক্ষতি ও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের তালিকা করছি। প্রয়োজনে তাদের প্রণোদনা বা সহযোগিতা দেয়া হবে। আর বন্যার প্রভাব যেনো বাজারে অতিরিক্তিভাবে না পড়ে সেদিকটাও আমরা লক্ষ্য রাখছি।