বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ন
সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ রাজিবুল হাসান রাজার বিরুদ্ধে আওয়ামী-লীগের প্রভাব খাটিয়ে টেস্ট কিট প্রাইভেট হাসপাতালে বিক্রি ও রোগীদের সাথে প্রতারণা করে প্রাইভেট ক্লিনিকে টেস্ট বানিজ্য এবং নারী স্টাফদের উত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, মানিকগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের ফুফাতো ভাই সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসরাফিল হোসেনের আশির্বাদে রাজিবুল হাসান রাজা হয়ে যান ল্যাব ইনচার্জ। শুধু রাজা নয়, তার ভাই রবিকে করেন মেডিকেল কলেজের স্টোর ইনচার্জ। আরেক আত্মীয় খোরশেদ আলমকে করেন ফার্মেসি ইনচার্জ। সব মিলিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে রাজত্ব করছে ল্যাব ইনচার্জ রাজার পরিবার। এছাড়াও তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসরাফিলের ছোট ভাই জাগীর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম এর ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ রাজা ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে হাসপাতালে । শুরু হয় তার টেস্ট কিট বাণিজ্য। হাসপাতাল শুরুর পরে থেকেই ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগ পর্যন্ত , হাসপাতালে সরকারিভাবে সরবরাহকৃত টেস্ট কিট গুলো সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টারসহ বিভিন্ন হাসপাতালে বিক্রি করতেন তিনি। হাসপাতালে কীট সরবরাহ থাকা সত্যেও সাধারণ রোগীদের সাথে প্রতারণা করে, রোগীদের এক প্রকার জিম্মি করে অর্থাৎ হাসপাতালে কীট নেই বলে প্রাইভেটে রোগী ভাগিয়েও রমরমা টেস্ট বানিজ্যের সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগের প্রভাব বিস্তার করে বিগত সময় তিনি বিভিন্ন নারী স্টাফদের উত্ত্যক্ত করতেন! এ নিয়ে হাসপাতালে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা রয়েছে। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুফাতো ভাই ইসরাফিলের হয়ে ঢাকুলি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টের দায়িত্ব পালন করে রাজিবুল হাসান রাজা। তবে আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পরেও তার প্রভাব বিস্তার কমেনি এখন সে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে প্রভাব বিস্তার করে হাসপাতালে গড়ে তুলেছেন এক সিন্ডিকেট । হাসপাতালের সাধারণ স্টাফরা ভয় পায় রাজার এই সিন্ডিকেট কে ! রাজার এই আধিপত্য থামাবে কে? প্রশ্ন সচেতন মহলের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী বলেন, রাজা গত ৫ আগষ্ট এর আগে ছিলো আওয়ামী লীগ এবং পরে হঠাৎ করে হয়ে যান বিএনপি। আগে আওয়ামিলীগ এর প্রভাব বিস্তার করতো, এখন বিএনপির প্রভাব বিস্তার করছে।রাজা ততকালীন আওয়ামিলীগ সরকারের সময় টেষ্ট কীট বাহিরের প্রাইভেট হাসপাতালে বিক্রি করেছে।সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের বেসরকারি হাসপাতালে এইসব বাণিজ্য করতেন । এর বাইরে কোন হাসপাতালে গেলে উনি রাগারাগি করতেন ।
তারা আরোও জানায়, সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে শেয়ার কিনেছে রাজা ও তার সহধর্মিণী। সরকারি চাকরি করেও বেসরকারি হাসপাতালের শেয়ার কিনেছেন এবং রোগীদের সাথে প্রতারণা করে, ভূলভাল বুঝিয়ে বিভিন্ন টেষ্ট করার জন্য পাঠিয়ে দেন সুরক্ষা ও মেডিনোভা নামক বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ।
মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজে কর্মরত এক নারী স্টাফ জানান, রাজা আমাকে মাঝে মাঝেই কল দিয়ে একা তার রুমে ডাকতেন। আমি সারা দেই না যার ফলে আমাকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে।
অভিযোগের বিষয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব ইনচার্জ রাজিবুল হাসান রাজা বলেন, অভিযোগ গুলো ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আমার বিরুদ্ধে স্বরযন্ত্র করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ শফিকুল আলম বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে, সরকারি হাসপাতালে প্রভাব বিস্তার করার কোনো সুযোগ নেই ।যদি দোষী সাব্যস্ত হয় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।