সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ০৯:৪৫ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
প্রয়াত সাংবাদিকদের স্মরণে পটুয়াখালী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবে দোয়া ও ইফতার ভাঙ্গায় দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে ছাগল বিতরণ ময়মনসিংহে ৫২ ঘন্টায় সাজিত হত্যাকাণ্ডের মুলহোতা মন্টি গ্রেফতার গাজীপুরে ৫ জনকে আটক করে ৩ জনকে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা ও ২ জনকে ননএফআইআর চরভদ্রাসনে আব্দুল করিম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নগদ অর্থ বিতরণ ভাঙ্গায় হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন, হৃদরোগে মৃত্যুর অভিযোগ দৈনিক প্রলয় প্রত্রিকার উদ্যোগে ময়মনসিংহে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ময়মনসিংহের নিষিদ্ধ পল্লীতে তরুণী বিক্রি, দেহ ব্যবসায়ী ক্রেতা সর্দারনী লাভলী অধরা! নিরাপদ ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে মহাখালী বাস টার্মিনালে বিশেষ অভিযান পরিবর্তিত বিশ্বে, এশিয়ার দেশগুলোর ভাগ্য একে অপরের সাথে জড়িত- ড.মুহাম্মদ ইউনূস

বিপনী বিতান গুলোতে উপচে পরা ভীর থাকলেও ক্রেতা কম পাবনার ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গীর দোকানগুলোতে

মামুন হোসেন, পাবনা সংবাদদাতা

আর মাত্র ক’দিন বাদেই মুসলিমদের বর ধর্মীও উৎসব পবিত্র ঈদ উল ফিতর। বছরের দুটি ঈদের মধ্য এ ঈদের আমেজ তুলনামূলক অনেক বেশি। নতুন জামাকাপড় ছাড়া ঈদ যেনো উদযাপনই হয় না। তাইতো পাবনার বিপনী বিতানগুলোতে ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে মুখরিত। কিন্তু উল্টো চিত্র পাবনার লুঙ্গী দোকানগুলোতে। ঈদকে সামনে রেখে যেকোনো সময়ের তুলনায় এবার তাদের বেচা বিক্রি তিন ভাগের এক ভাগ। দোকানিরা বলছেন, দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, পোশাকে আধুনিকতা ও যাকাতের ধরণ পরিবর্তনের কারণে এমন দশা তাদের।

পাবনা জেলা শহরের সবচেয়ে পুরনো লুঙ্গীর দোকানগুলো বড় বাজার এলাকার বেনিয়া পট্টির ব্যাংক রোডে। এখানে বড় বড় প্রায় ১৫ থেকে ২০ টি দোকান রয়েছে। এখানকারই একটি প্রাচীন লুঙ্গীর দোকান আরমান লুঙ্গী হাউজ। দীর্ঘ ৩৫ বছরের ব্যবসা তাদের। এ দোকানে সর্বনিম্ন ২৫০ থেকে সর্বোচ্চ ১৪৫০ টাকা দামের লুঙ্গী রয়েছে। তবে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা দামের চাচকিয়া লুঙ্গী বেশি বিক্রি করছে এ দোকানি। এ দোকানির দাবি, আর্থিক মন্দা, পোশাক পরিধানের অভ্যাস পরিবর্তন ও যাকাতের ধরণ পরিবর্তনের ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ঈদে বেচা বিক্রি বিবেচনায় বেহাল দশা তাদের। এব্যাপারে এ দোকানের স্বত্ত্বাধিকারী আজিম উদ্দিন জানান, সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা বেচা বিক্রি হয়। এবছরের ঈদের বাজারে প্রতিদিন এখন বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা। সর্বোচ্চ একদিন ১৮ হাজার টাকা বিক্রি হয়েছে। অথচ লুঙ্গীর ভালো দিনে বা অন্তত ৫ থেকে ১০ বছর আগেও ঈদের সামনে প্রতিদিন লাখ টাকার বেশিও লুঙ্গী বিক্রি হয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে ধীরে ধীরে ঈদে লুঙ্গী বিক্রি কমতে শুরু করেছে। তবে গতবছর ঈদের বাজারেও ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকাও বিক্রি হয়েছে। এবছর সেগুলো সোনালি অতীত।

প্রতি লুঙ্গীতে ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। শ্রমিক ও সুতার দাম বাড়ায় এ দরবৃদ্ধি। তবে বেচা কেনায় এটি মুল সমস্যা নয় জানিয়ে তিনি বলেন, দেবার লোকগুলো পলাতক। বড় বড় ঠিকাদার ও রাজনৈতিক নেতারা এসব বেশি দান করতেন। কিন্তু তারা তো পলাতক। অন্যান্য যারা আছেন তারা টুকটাক নিচ্ছেন। এছাড়া যাকাতের টাকায় শাড়ি লুঙ্গী দেন বিত্তশালীরা। মানুষের চাহিদা বিবেচনায় যাকাতের ধরণ পাল্টেছে। তারা এখন নগদ টাকা যাকাত হিসেবে দান করেন। সবকিছু মিলিয়ে বেচা বিক্রির বেহাল দশা। ৩৫ বছরের ব্যবসায় এতো খারাপ অবস্থা যায়নি বলেও জানান তিনি।

সরেজমিনে পাবনার লুঙ্গী দোকানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি দোকানের সামনে প্লাস্টিক বা কাঠের টুল পেতে দোকানের সামনে ক্রেতার আশায় বসে রয়েছেন বিক্রয়কর্মীরা। এই পট্টিতে কেউ ঢুকলেই দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন তারা। তবে তেমন ক্রেতার সাড়া মিলছে না। দুইচারজন এসেছেন নিজের ব্যবহার ও যাকাতের লুঙ্গী ক্রয় করতে। এসব ক্রেতারা নিজে পরার জন্য সর্বোচ্চ দুইটি ও যাকাতের জন্য ৫ থেকে ৭টির বেশি কিনছেন না। তবে এদের নিয়েই কিছুটা ব্যস্ততা দোকানিদের।

বেচা বিক্রি প্রসঙ্গে কথা হয় নুরানী লুঙ্গী হাউজের আলী হাসানের সাথে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় ঈদে বেচা বিক্রি তিন ভাগের এক ভাগ। গড়ে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা বিক্রি হচ্ছে। এই যে আপনি এসেছেন (এ প্রতিবেদক), এখন আপনার সাথে কথা বলার সুযোগই পাবার কথা না। অথচ বসে আছি। সামনে দুই একদিন বেচাকেনা একটু বাড়তে পারে বলে ধারণা করছি। সেই আশাতেই রয়েছি।

পাবনার লুঙ্গী পট্টির আরেকটি প্রাচীন লুঙ্গীর দোকান আরাফ লুঙ্গীর ঘর। এ দোকানের আহসানালুল্লাহ মুন্সী জানান, সবচেয়ে পুরনো লুঙ্গীর দোকান এটি। চাচকিয়া লুঙ্গীর জন্য পাবনায় এ দোকানের বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। বাপ দাদারা এই ব্যবসা করেছেন। তিনিও এই প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে হাল ধরেছেন লুঙ্গী ব্যবসার। তবে ব্যবসায় যে মন্দা যাচ্ছে তাতে এটি কতদিন ধরে রাখতে পারবেন সেটি নিয়ে তার রয়েছে দুশ্চিন্তা।

দিন যাচ্ছে লুঙ্গী ও তাঁতশিল্পজাত পণ্যের দুর্দিন আরো জেঁকে বসছে। এভাবে চললে বাপ দাদার ব্যবসা কয়দিন চালাতে পারবো তা বলা মুশকিল জানিয়ে তিনি বলেন, এটাই ঈদের বিক্রির সবচেয়ে ভালো সময়। এখনই যাকাত ফিতরা প্রদানকারীরা শাড়ী লুঙ্গী কিনে অসহায়দের দেবেন। কিন্তু এখনো বিক্রির যে হাল সে নিয়ে আর কি বলব।

ক্রেতা ও বিক্রেতারা বলছেন, সময় পাল্টেছে। এখন ট্রাউজার আর হাফ প্যান্টেই অবসর সময় কাটান অধিকাংশরা। যার কারণে লুঙ্গীর চাহিদা কম। মানুষের ব্যাপক অভাব। লুঙ্গীর চেয়ে খাবার ও অন্যান্য সামগ্রীর চাহিদা মেটানোই দায় হয়ে পড়েছে। এদিক চিন্তায় যাকাতের ধরণও পাল্টেছে। শাড়ি লুঙ্গীর বদলে এখন নগদ টাকাই বেশি দান করছেন বিত্তবানরা। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনও নগদ টাকাই প্রদান করছেন। কারণ অসহায়রা নগদ টাকাতেই অধিক খুশি। সবমিলিয়ে লুঙ্গী বাজারে ঈদ নেই।

অবসর সময়ে পরতে লুঙ্গী কিনতে এসেছেন ক্রেতা শামীম আহমেদ জুয়েল। তিনি প্রাইভেট ফার্মে জব করেন। লুঙ্গী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের মত লুঙ্গী পরা হয় না, বেসরকারি চাকুরীতে ডিউটির শেষ নেই। যেটুকু সময় অবসর যায় এতে দুই একটা লুঙ্গী থাকলে চলে, পরা কম হয় জন্য নষ্টও কম হয়। এজন্য খুব বেশি কেনাও হয় না। অনেকদিন পর পরার জন্য দুটি লুঙ্গী নিতে আসলাম। প্রসেস ছাড়া লুঙ্গিগুলো দেখতেছি। সম্ভবত এগুলোই নিবো যেনো আরামদায়ক হয়।

বেসরকারি কলেজের শিক্ষক মোনায়েম আলী খান। স্ত্রী নিয়ে যাকাতের লুঙ্গী কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবছরই যাকাত দেই। পূর্বে যাকাত বলতে শাড়ি লুঙ্গীই ছিলো। এজন্য সেসময় বেশ সংখ্যক শাড়ি ও লুঙ্গী কেনা হতো। কিন্তু এখন ততোটা নেই। যারা যাকাত নেবেন তাদের অধিকাংশই আগেই এসে অনুরোধ করেন নগদ টাকা দিতে। শাড়ি লুঙ্গীর চেয়ে নগদ টাকা নাকি তাদের বেশি কাজে আসে। তাই এবছর ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দামের মধ্যে গোটা পাঁচেক লুঙ্গী নিবো। একই দামের মধ্যে শাড়ি নিবো ৫ থেকে ৭টি। বাকিদের নগদ টাকা দিতে হবে।

তাঁতশিল্প তথা লুঙ্গী বুননে পাবনার ঐতিহ্য পুরনো। জেলার সদর উপজেলার দোগাছি ও আটঘরিয়ার চাচকিয়া সহ বিভিন্ন উপজেলার খলিয়া, লক্ষীপুর, গোপালপুর, সুজানগর, সাদুল্লাহপুর ও রাজাপুর নতুনপাড়ায় বুনন করা হয় এই ঐতিহ্যবাহী লুঙ্গীগুলো। আড়াইশো থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা দামের লুঙ্গি তৈরি করে থাকেন তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । দৈনিক প্রলয়