বড় ছেলে শিক্ষক তবুও বৃদ্ধ মায়ের জায়গা খোলা আকাশের নিচে

- আপডেট সময় : ০৫:১৮:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৬ এপ্রিল ২০২৫
- / ১১৩ বার পড়া হয়েছে
আশিক হোসেন, বদলগাছী
আট সন্তানের জননী সুফিয়া বেগম (৮৬)। স্বামী মৃত মোহাতাব আলি প্রায় আট বছর আগেই মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে রেখে গেছেন ৪০ বিঘা জমি। শেষ বয়সে সেই আট সন্তানের কাছে চেয়েছিলেন একটু আশ্রয় ও দুবেলা খাবার। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস সেই বৃদ্ধা মা এখন যেন তাদের কাছেই বোঝা। তিন বিঘা জমি মেয়েদের নামে লিখে দেওয়াই কাল হলো তার। স্বামীর ৪০ বিঘা সম্পত্তি থাকার পরও তার কপালে জুটছে না শান্তিতে ঘুমানোর জায়গা আর দুবেলা ঠিকমতো খাবার। বয়সের ভারে ঠিকমতো কথাও বলতে পারেন না। তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ের মা তিনি। বড় ছেলে মোতাহার আলি স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, অপর দুই ছেলে মশিউর ও আতোয়ার কৃষি কাজ করেন। আর মেয়েদের বিয়ে অনেক আগেই হয়ে গেছে।
স্বামীর রেখে যাওয়া ৪০ বিঘা সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে ছেলে-মেয়ের মাঝে বাঁধে বিরোধ। এরপর থেকেই কেউ আর মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব নিতে চায় না। তাই তো সম্পত্তির জন্য বৃদ্ধা মায়ের স্থান হলো খোলা আকাশের নিচে।
গেল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭ ঘটিকায় নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার মথুরাপুর ইউপির জগৎনগর গ্রামে এমন নির্দয় হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে। মুহূর্তেই এলাকায় জানাজানি হলে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে এক নজর দেখতে গ্রামবাসীর ঢল নামে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম খোলা আকাশের নিচে পাকা রাস্তার পাশে একটি বালিশে মাথা দিয়ে শুয়ে আছেন। তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকছেন। কিছু বলার চেষ্টা করেও বলতে পারছেন না। বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমের কষ্ট দেখে রাতে মশার হাত থেকে রক্ষার জন্য গ্রামবাসী মশারি টানিয়ে দেন। কিন্তু পরিবারের লোকজনের কেউ এক নজর দেখতেও আসেনি।
গ্রামবাসী বলেন, সুফিয়া বেগমের স্বামীর ৪০ বিঘার প্রায় সব জমিই ছেলেদের দখলে। এ ছাড়া কিছু জমি ছেলেরা আগেই তার বাবার কাছ থেকে লিখে নেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগম তার নামে থাকা তিন বিঘা জমি পাঁচ মেয়েকে লিখে দেন। এরপর ছেলেদের কাছে শত্রু হয়ে যান মা। তারপর থেকেই মায়ের খোঁজ নেন না ছেলেরা। পরবর্তীতে একই গ্রামে বিয়ে হওয়া ছোট মেয়ে আঙ্গুর বেগম ও জামাই ফিরোজ হোসেনের বাড়িতে জায়গা হয় তার।
জামাই ফিরোজ হোসেন বলেন, শাশুড়ি আমার কাছেই ছিল। কোনো ছেলে তার খোঁজ-খবর নেয় না। অসুস্থ হওয়ার খবর শোনার পরও ছেলেরা মাকে দেখতে আসেনি। তাই রাগ করে তার মেয়ে আঙ্গুর বেগম আমার শাশুড়িকে ফাঁকা মাঠে ফেলে আসে।
ছেলেদের সঙ্গে কথা বলার জন্য গেলে সংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর দরজা বন্ধ করে দেন। তবে ঘটনার এক ঘণ্টা পর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে মশিউর রহমান নামের এক ছেলে বৃদ্ধা সুফিয়া বেগমকে খোলা মাঠ থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার বাড়িতে জায়গা দেন।
বদলগাছী থানার উপ-পরিদর্শক নিহার চন্দ্র বলেন, ঘটনা জানার পর এখানে এসেছি। তার ছেলেদের সঙ্গে কথা বলেছি। তার ছেলে মশিউরের কাছে আছে বৃদ্ধা মা সুফিয়া বেগম। মায়ের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব না নিলে ছেলে-মেয়েদের বিরুদ্ধে ভরণ-পোষণ আইনে মামলা করা হবে।
পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইসরাত জাহান ছনি।