উখিয়ায় পাহাড় কাটার উৎসব, বন ধ্বংস ও জমি ভরাট

- আপডেট সময় : ০২:১১:২৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫
- / ৫২ বার পড়া হয়েছে
শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া
প্রতিদিন কাটা হচ্ছে সবুজ পাহাড়, গচ্ছিত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে, ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়ছে। অথচ বনবিভাগ ও প্রশাসন যেন নির্বিকার দর্শক।
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা—যেখানে একসময় সবুজে ঘেরা পাহাড় আর নিবিড় বনভূমি ছিল প্রকৃতির এক অনন্য উপহার, আজ তা রূপ নিচ্ছে এক নিষ্ঠুর ধ্বংসযজ্ঞের মঞ্চে। প্রতিনিয়ত কেটে ফেলা হচ্ছে পাহাড়, মাটি বহন করছে ট্রাক ও ডাম্পার। সেই মাটি ব্যবহার হচ্ছে কৃষিজমি ভরাটে ও অবৈধ স্থাপনা নির্মাণে। অথচ পুরো প্রক্রিয়া চলছে প্রকাশ্যে, দিনের আলোয়, রাতের আঁধারেও। প্রশাসনের সামনেই নির্বিঘ্নে চলছে এই ‘পরিবেশ হত্যার উৎসব’।
বন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা প্রতি মাসে মোটা অঙ্কের মাসোহারা গ্রহণ করছেন পাহাড় দস্যুদের কাছ থেকে। বিনিময়ে বন কেটে মাটি পাচারকে তারা ‘অদৃশ্য আশীর্বাদ’ দিচ্ছেন। এমনকি অভিযুক্ত চক্রগুলোর মধ্যে অনেকেই স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে তারা বারবার আইন ও নীতিমালাকে উপেক্ষা করে আসছে।
উপজেলার এই ৫টি ইউনিয়ন, রাজাপালং, পালংখালী, রত্নাপালং, জালিয়া পালং,হলদিয়াপালং এলাকায় প্রতিদিন রাতভর এবং দিনভর দাপটের সঙ্গে কাটা হচ্ছে পাহাড়। মিনি ট্রাকের লম্বা সারি দেখা যায় প্রত্যন্ত গ্রামের পথে, যেখানে স্থানীয় প্রশাসন ও বনবিভাগের কোনো নজরদারি নেই। পরিবেশ রক্ষার কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
এই অনিয়মের ফলে উর্বর কৃষিজমি ভরাট হয়ে তা আর কৃষিকাজের উপযোগী থাকছে না। অন্যদিকে, পাহাড়ের গাছপালা কেটে ফেলার কারণে বিলুপ্তির পথে চলেছে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য, হারিয়ে যাচ্ছে পাখি, বন্যপ্রাণী। পাহাড় কাটা ও মাটি সরিয়ে নেওয়ার ফলে ভূমিধসের আশঙ্কাও বেড়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
স্থানীয় সচেতন মহল ও পরিবেশবাদীদের অভিযোগ, প্রশাসনের দায়সারা ভূমিকার কারণেই এই অনিয়ম দিনের পর দিন বেড়ে চলেছে। একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও নেয়া হয়নি কার্যকর ব্যবস্থা। বরং অনেকে মনে করছেন, প্রশাসনের একাংশও এই চক্রের সুবিধাভোগী।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আমরা পাহাড়ে জন্মেছি, পাহাড়ের ছায়ায় বড় হয়েছি। আজ দেখছি সেই পাহাড় গায়েব হয়ে যাচ্ছে টাকার কাছে।
আরেকজন নারী পরিবেশকর্মী শারমিন আক্তার বলেন, এই পরিস্থিতি আর বেশিদিন চলতে দেওয়া যায় না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা বিপজ্জনক পরিবেশ রেখে যাচ্ছি আমরা।
এদিকে স্থানীয় সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।
মাসোহারার জালে জর্জরিত পরিবেশ ব্যবস্থা
পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা
বনকর্মকর্তাদের কার্যক্রম মনিটরিং
স্থানীয় জনসচেতনতা বৃদ্ধি
বিকল্প পুনর্বাসন ও উন্নয়ন পরিকল্পনা
এসব ছাড়া এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব না।
উখিয়ার পাহাড় শুধু মাটি নয়, এটি ছিল জীবনের আশ্রয়, পরিবেশের বুকে অক্সিজেন সরবরাহের ঘাঁটি। এখন সেই আশ্রয় ধ্বংস হচ্ছে লোভ আর দুর্নীতির কাছে।