ঢাকা ০৩:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কুড়িগ্রাম জেলা উন্নয়ন ও বাস্তবায়ন পরিষদ কমিটি গঠিত এজাহারভুক্ত সব পুলিশ কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করার নোটিশ বন্যায় ডুবে গেছে সবজি ক্ষেত, বিপাকে কৃষক দূর্গাপুরে বন্যার পানিতে ডুবলো কৃষকের স্বপ্নের পান বরজ সীমান্তে বিজিবির অভিযানে মিয়ানমারের নাগরিকসহ আটক ২ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে ২৭৬৩৭ জন নিয়োগ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেই আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম এখন সিলেটের জেলা প্রশাসক চিকিৎসকদের দোষারোপ করে লাভ নেই, সচেতন হতে হবে: স্বাস্থ্য উপদেষ্টা চলতি সপ্তাহেই চূড়ান্ত নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রকাশ: ইসি সচিব ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক

খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে : জামায়াত আমির

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:৪১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৫৪ বার পড়া হয়েছে

প্রলয় ডেস্ক

লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তা ছিল রাজনীতির সাধারণ আলোচনা। সুনির্দিষ্ট কোন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়নি। রাজনীতিবিদরা একসঙ্গে বসলে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হবে-এটাই স্বাভাবিক।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চেয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতেই হবে, সেটা শর্তারোপ করিনি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছেন। আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে চাই। তিনি তার কথার মর্যাদা রক্ষা করবেন, আশা করি।

জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনটি ‘ম্যান্ডেটরি’ (বাধ্যতামূলক) দাবি পূরণ হলেই আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে বলে আমি মনে করি। এগুলো হলো-দৃশ্যমান সংস্কার, গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর সম্মানবোধ।

ইংল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ সফর শেষে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি সেই সফর অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বক্তব্য দেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্রাসেলসে ইইউ ৬ টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জামায়াত প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। এসময় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সহ দলের আরো চার জন উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে ইইউ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের নির্বাচনের তারিখ, সংস্কার ও পতিত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার সম্পর্কে আমাদের কাছে জানতে চান।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তাদেরকে আমরা বলেছি, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা গণতন্ত্রের কোন ভিত্তি রচনা করতে পারবে না, বরং তা অতীতের মত অগ্রহণযোগ্য ও আরেকটি খারাপ নির্বাচন হবে। আমরা সেই নির্বাচন চাই না।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কাজে যত সহযোগিতা করবে তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। তা না হলে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা সেই নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে যে পরিবেশ এসেছে তাতে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এরমধ্যে প্রধান হচ্ছে-দৃশ্যমান গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবনা সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। এসব সংস্কার অবশ্যই করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রথমত, সংস্কারের প্রধান অংশীজন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে যদি তারা সহযোগিতা করে তাহলে দ্রুত নির্বাচনে পরিবেশ হবে। তারা যদি সহযোগিতা না করে যদি গতানুগতিক নির্বাচন হয় তাহলে আগের মতো নির্বাচন হবে। যার দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার জাতিকে দেখাতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ও শহীদ পরিবারে আস্থা ফিরে আসে। শহীদের আত্মা যাতে প্রশান্তি পায়।

তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে। যাতে এমন না হয়, আমি জিতে গেলেই নির্বাচন সুষ্ঠু, না জিতলে দুষ্ট- এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর জন্য সবার এনগেজমেন্ট প্রয়োজন। এটি সরকারের তরফ থেকেই হতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে হতে পারে, সিভিল সোসাইটির উদ্যোগেও হতে পারে।

জামায়াত আমির বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আমাদের দেশের নির্বাচনের সময় সম্পর্কে জানতে চান। আমরা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। আমরা মনে করি এ সময় গ্রহণযোগ্য। তবে এটা যাতে অতিক্রম না করে।

এর আগে বুধবার ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াত আমির বলেন, আগামী রমজানের আগে নির্বাচন হলে ভালো হয়। জুনের দিকে নির্বাচন দিলে তখন বর্ষা, ঝড়-ঝাপটাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে। তখন আবার ইলেকশনটা পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। আমরা এজন্য চাচ্ছি ওই আশঙ্কার আগেই যাতে ইলেকশনটা হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার জামায়াত আমির বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারির কথা বলেছি। তবে এটা তখনই হতে পারে যখন শর্তগুলো পূরণ হবে। শর্ত পূরণ ছাড়া মার্চ-ফেব্রুয়ারি কোনো কিছু ঠিক থাকবে কি না, নির্বাচনের কমিটমেন্ট ঠিক থাকবে কি না তা আল্লাহই জানেন।

তিনি বলেন, আমাদের দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বন্ধুপ্রতীম অন্য দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আসুন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করি। আমরা জনগণের ওপর রায় ছেড়ে দিই। তারা যাকে পছন্দ করবে তারাই দেশ পরিচালনা করবে, বাকিরা বিরোধী দলে থাকবে বা কেউ কেউ গঠনমূলক প্রতিবাদও করবে। জাতির প্রত্যাশা পূরণে রাজনীতিবিদ ও মিডিয়ার শক্তিশালী ভুমিকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আমরা নির্বাচনের দাবি করতে পারি, দিনক্ষণ ঠিক করে দিতে পারি না। আমরা ফেব্রুয়ারির ভিতরেই নির্বাচন হতে হবে-এমন কথা বলিনি। অনেকগুলো কারণে বলেছি, নির্বাচন এই সময়েই হতে পারে। দাবি পূরণ হলে তার আগে হলে আপত্তি নেই, পরে হলেও সমস্যা নেই। সময়ের প্রয়োজন হলে আরো অপেক্ষা করা হবে।

ইইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, এই সফরের লক্ষ্য ছিল-বিশ্বের অন্যতম উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র ইইউ‘র সঙ্গে আমাদের দেশকে সম্পৃক্ত করা। নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া। এ সফর ছিল জাতির জন্য প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি না, রাজনৈতিক দল, জনগণের দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছি।

তিনি বলেন, প্রথম বৈঠকের বিষয় ছিল-টেকসই গণতন্ত্র। উন্নয়ন পার্টনার হিসেবে তারা কি সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষা বিনিময় প্রোগ্রাম, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়, শ্রমিকদের অধিকার, প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে

লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামাত আমির বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদের জুলুম-নির্যাতনের শিকার আমরা যেমন হয়েছি, বিএনপিও হয়েছে। তবে প্রথম ও শেষ আঘাতটা আসে আমাদের ওপর।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়াও নির্মম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি একদিকে মজলুম, অন্যদিকে অসুস্থ। দেশ ছাড়ার আগে তার সঙ্গে সাক্ষাতেরে ইচ্ছা করলেও সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাই বেলজিয়াম সফর শেষে পাশের দেশে অবস্থানরত খালেদা জিয়াকে দেখতে যাই। তিনি আমাদেরকে ভালবাসা ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। সৌজন্য সাক্ষাতের উদ্দেশ্য থাকলেও যেহেতু তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায় তিনি থাকেন, স্বাভাবিকভাবে তার সঙ্গেও দেখা হয়েছে। আর রাজনীতিকরা এক জায়গায় বসলে রাজনৈতিক কথা হবে না-এটা বাস্তব নয়। রাজনৈতিক কথা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ে নয়। নির্বাচন ও বিচার সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে যে ধরণের বিরোধ হয়, এটা কোন বিরোধই নয়। নির্বাচনের পর তারা সবাই মিলেমিশে চলে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকুক, নইলে রাজনীতি অন্ধ হয়ে যাবে। তবে মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। দেশকে ভালবাসলে সমঝোতা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসার জায়গায় যেতে হবে। এটা করতেই হবে, কতে দিব না-এগুলো রাজনীতির ভাষা নয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের ‘ফরমাল’ মিটিং ছিল না। এজন্য বিএনপি বা আমাদের পক্ষ থেকে কেউ এটা মিডিয়াতে দিইনি। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি তার ফেসবুকে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা নৈতিক দায়িত্ব পালনে করেছি। মিডিয়ায় এ নিয়ে আলোচনায় হওয়ায় আমরা খুশি। বিশ্লেষকদের এ আলোচনায় ভাল কিছু উঠে আসতে পারে।

তিনি বলেন, শারীরিকভাবে খালেদা জিয়া এখন ভাল বোধ করছেন। পারিবারের সদস্যদের সঙ্গে রয়েছেন। মানসিকভাবেও এখন তিনি ভালো। তিনি কখন দেশে আসবেন তারিখ সঠিক জানি না। তবে আলাপ করে মনে হয়েছে, সামনের মাসে প্রথম দিকে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তারেক জিয়ার আসার বিষয়ে কিছু জানতে পারিনি। তিনি নিজের দেশে ফিরবেন-এটাই স্বাভাবিক।

মিট দ্য প্রেসে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়েতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, হামিদুর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।

নিউজটি শেয়ার করুন

খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে : জামায়াত আমির

আপডেট সময় : ১১:৪১:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

প্রলয় ডেস্ক

লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে তা ছিল রাজনীতির সাধারণ আলোচনা। সুনির্দিষ্ট কোন এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়নি। রাজনীতিবিদরা একসঙ্গে বসলে রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হবে-এটাই স্বাভাবিক।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান প্রশ্নের জবাবে এ কথা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চেয়েছি। ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতেই হবে, সেটা শর্তারোপ করিনি। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ডিসেম্বর থেকে পরের বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছেন। আমরা তার ওপর আস্থা রাখতে চাই। তিনি তার কথার মর্যাদা রক্ষা করবেন, আশা করি।

জাতির প্রত্যাশা অনুযায়ী তিনটি ‘ম্যান্ডেটরি’ (বাধ্যতামূলক) দাবি পূরণ হলেই আগামী রোজার আগে নির্বাচন হতে পারে বলে আমি মনে করি। এগুলো হলো-দৃশ্যমান সংস্কার, গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর সম্মানবোধ।

ইংল্যান্ডসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের কয়েকটি দেশ সফর শেষে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে তিনি সেই সফর অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ বক্তব্য দেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমন্ত্রণে গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ব্রাসেলসে ইইউ ৬ টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জামায়াত প্রতিনিধি দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়। এসময় জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের সহ দলের আরো চার জন উপস্থিত ছিলেন। সেই বৈঠকে ইইউ নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশের নির্বাচনের তারিখ, সংস্কার ও পতিত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিচার সম্পর্কে আমাদের কাছে জানতে চান।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তাদেরকে আমরা বলেছি, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা গণতন্ত্রের কোন ভিত্তি রচনা করতে পারবে না, বরং তা অতীতের মত অগ্রহণযোগ্য ও আরেকটি খারাপ নির্বাচন হবে। আমরা সেই নির্বাচন চাই না।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কাজে যত সহযোগিতা করবে তত তাড়াতাড়ি নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে। তা না হলে জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা সেই নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, তারা আগামী নির্বাচন নিয়ে জানতে চেয়েছে। আমরা বলেছি, অনেক রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে যে পরিবেশ এসেছে তাতে তিনটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

এরমধ্যে প্রধান হচ্ছে-দৃশ্যমান গ্রহণযোগ্য মৌলিক সংস্কার। এ বিষয়ে আমাদের প্রস্তাবনা সংস্কার কমিশনের কাছে জমা দিয়েছি। এসব সংস্কার অবশ্যই করতে হবে।

তিনি বলেন, প্রথমত, সংস্কারের প্রধান অংশীজন হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। এতে যদি তারা সহযোগিতা করে তাহলে দ্রুত নির্বাচনে পরিবেশ হবে। তারা যদি সহযোগিতা না করে যদি গতানুগতিক নির্বাচন হয় তাহলে আগের মতো নির্বাচন হবে। যার দায় রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে।

দ্বিতীয়ত, গণহত্যাকারীদের দৃশ্যমান বিচার জাতিকে দেখাতে হবে। যাতে সাধারণ মানুষ ও শহীদ পরিবারে আস্থা ফিরে আসে। শহীদের আত্মা যাতে প্রশান্তি পায়।

তৃতীয়ত, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানবোধ থাকতে হবে। যাতে এমন না হয়, আমি জিতে গেলেই নির্বাচন সুষ্ঠু, না জিতলে দুষ্ট- এমন মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এর জন্য সবার এনগেজমেন্ট প্রয়োজন। এটি সরকারের তরফ থেকেই হতে পারে, রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্যোগে হতে পারে, সিভিল সোসাইটির উদ্যোগেও হতে পারে।

জামায়াত আমির বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আমাদের দেশের নির্বাচনের সময় সম্পর্কে জানতে চান। আমরা বলেছি, প্রধান উপদেষ্টা ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছেন। আমরা মনে করি এ সময় গ্রহণযোগ্য। তবে এটা যাতে অতিক্রম না করে।

এর আগে বুধবার ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক শেষে জামায়াত আমির বলেন, আগামী রমজানের আগে নির্বাচন হলে ভালো হয়। জুনের দিকে নির্বাচন দিলে তখন বর্ষা, ঝড়-ঝাপটাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসতে পারে। তখন আবার ইলেকশনটা পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। আমরা এজন্য চাচ্ছি ওই আশঙ্কার আগেই যাতে ইলেকশনটা হয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার জামায়াত আমির বলেন, আমরা ফেব্রুয়ারির কথা বলেছি। তবে এটা তখনই হতে পারে যখন শর্তগুলো পূরণ হবে। শর্ত পূরণ ছাড়া মার্চ-ফেব্রুয়ারি কোনো কিছু ঠিক থাকবে কি না, নির্বাচনের কমিটমেন্ট ঠিক থাকবে কি না তা আল্লাহই জানেন।

তিনি বলেন, আমাদের দল নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। বন্ধুপ্রতীম অন্য দলগুলোর প্রতি আহবান জানিয়ে জামায়াত আমির বলেন, আসুন সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা করি। আমরা জনগণের ওপর রায় ছেড়ে দিই। তারা যাকে পছন্দ করবে তারাই দেশ পরিচালনা করবে, বাকিরা বিরোধী দলে থাকবে বা কেউ কেউ গঠনমূলক প্রতিবাদও করবে। জাতির প্রত্যাশা পূরণে রাজনীতিবিদ ও মিডিয়ার শক্তিশালী ভুমিকা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুর রহমান বলেন, আমরা নির্বাচনের দাবি করতে পারি, দিনক্ষণ ঠিক করে দিতে পারি না। আমরা ফেব্রুয়ারির ভিতরেই নির্বাচন হতে হবে-এমন কথা বলিনি। অনেকগুলো কারণে বলেছি, নির্বাচন এই সময়েই হতে পারে। দাবি পূরণ হলে তার আগে হলে আপত্তি নেই, পরে হলেও সমস্যা নেই। সময়ের প্রয়োজন হলে আরো অপেক্ষা করা হবে।

ইইউ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে জামায়াত আমির বলেন, এই সফরের লক্ষ্য ছিল-বিশ্বের অন্যতম উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র ইইউ‘র সঙ্গে আমাদের দেশকে সম্পৃক্ত করা। নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেয়া। এ সফর ছিল জাতির জন্য প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি না, রাজনৈতিক দল, জনগণের দল হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করেছি।

তিনি বলেন, প্রথম বৈঠকের বিষয় ছিল-টেকসই গণতন্ত্র। উন্নয়ন পার্টনার হিসেবে তারা কি সহযোগিতা করতে পারে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষা বিনিময় প্রোগ্রাম, পিআর পদ্ধতির নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়, শ্রমিকদের অধিকার, প্রবাসী শ্রমিকদের অধিকার, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে

লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জামাত আমির বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদের জুলুম-নির্যাতনের শিকার আমরা যেমন হয়েছি, বিএনপিও হয়েছে। তবে প্রথম ও শেষ আঘাতটা আসে আমাদের ওপর।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে খালেদা জিয়াও নির্মম জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনি একদিকে মজলুম, অন্যদিকে অসুস্থ। দেশ ছাড়ার আগে তার সঙ্গে সাক্ষাতেরে ইচ্ছা করলেও সুযোগ হয়ে ওঠেনি। তাই বেলজিয়াম সফর শেষে পাশের দেশে অবস্থানরত খালেদা জিয়াকে দেখতে যাই। তিনি আমাদেরকে ভালবাসা ও সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। সৌজন্য সাক্ষাতের উদ্দেশ্য থাকলেও যেহেতু তার ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বাসায় তিনি থাকেন, স্বাভাবিকভাবে তার সঙ্গেও দেখা হয়েছে। আর রাজনীতিকরা এক জায়গায় বসলে রাজনৈতিক কথা হবে না-এটা বাস্তব নয়। রাজনৈতিক কথা হয়েছে, তবে সুনির্দিষ্ট কোন বিষয়ে নয়। নির্বাচন ও বিচার সম্পর্কে সাধারণ আলোচনা হয়েছে। কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচনের আগে যে ধরণের বিরোধ হয়, এটা কোন বিরোধই নয়। নির্বাচনের পর তারা সবাই মিলেমিশে চলে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে মতপার্থক্য থাকুক, নইলে রাজনীতি অন্ধ হয়ে যাবে। তবে মতপার্থক্য যেন মতবিরোধে রূপ না নেয়। দেশকে ভালবাসলে সমঝোতা, শ্রদ্ধা ও ভালবাসার জায়গায় যেতে হবে। এটা করতেই হবে, কতে দিব না-এগুলো রাজনীতির ভাষা নয়।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে আমাদের ‘ফরমাল’ মিটিং ছিল না। এজন্য বিএনপি বা আমাদের পক্ষ থেকে কেউ এটা মিডিয়াতে দিইনি। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাবেক প্রেস সেক্রেটারি তার ফেসবুকে এ বিষয়ে স্ট্যাটাস দেয়ায় আলোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা নৈতিক দায়িত্ব পালনে করেছি। মিডিয়ায় এ নিয়ে আলোচনায় হওয়ায় আমরা খুশি। বিশ্লেষকদের এ আলোচনায় ভাল কিছু উঠে আসতে পারে।

তিনি বলেন, শারীরিকভাবে খালেদা জিয়া এখন ভাল বোধ করছেন। পারিবারের সদস্যদের সঙ্গে রয়েছেন। মানসিকভাবেও এখন তিনি ভালো। তিনি কখন দেশে আসবেন তারিখ সঠিক জানি না। তবে আলাপ করে মনে হয়েছে, সামনের মাসে প্রথম দিকে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে তারেক জিয়ার আসার বিষয়ে কিছু জানতে পারিনি। তিনি নিজের দেশে ফিরবেন-এটাই স্বাভাবিক।

মিট দ্য প্রেসে আরো উপস্থিত ছিলেন জামায়েতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান ও আ ন ম শামসুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মাছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, মাওলানা আব্দুল হালিম, হামিদুর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসাইন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল, মহানগর উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন প্রমুখ।