ঢাকা ০৩:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

মন্ত্রীর ভাতিজা পরিচয়ে নান্দাইলে দাপট চালানো সেই যুবলীগ নেতা ফারুক গ্রেফতার

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৬:২২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৪৯৯ বার পড়া হয়েছে

নান্দাইল সংবাদদাতা

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামের ভাতিজা ও নান্দাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবু নাঈম ভূঁইয়া ফারুক অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) গভীর রাতে উপজেলার রসুলপুরে পারিবারিক বাসভবন থেকে তাকে আটক করে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ।

তাকে ঘিরে নান্দাইলের জনমনে দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও অভিশাপ জমে ছিল। অভিযোগ রয়েছে,সাবেক মন্ত্রীর ‘ভাতিজা’ পরিচয়ে তিনি নান্দাইলে একপ্রকার ছায়া-শাসন কায়েম করেন—যার কেন্দ্রে ছিল টেন্ডারবাজি,চাঁদাবাজি,নিয়োগ-বাণিজ্য, মাদক কারবারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিরোধীদের দমনপীড়ন।

চব্বিশের ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লব’-এ হামলার নির্দেশদাতা-

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় নান্দাইলে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে তার নাম উঠে আসে।

স্থানীয় আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, ফারুকের ছত্রচ্ছায়ায় সেদিন শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা হয়,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ছাত্রদের মারধর ও হয়রানি চালানো হয়।

সবখানেই কমিশনের রাজত্ব-

উপজেলা প্রকল্প, এলজিইডি ও শিক্ষা অবকাঠামোর প্রায় সব সরকারি কাজ তার নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।স্থানীয় এক ঠিকাদার জানান,“সরকারি টেন্ডারে অংশ নিতে গেলেই ফারুকে কমিশন দিতে হতো।না দিলে কাজ আটকে যেত,কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হয়েছেন।”

এছাড়া স্থানীয় কয়েকটি মাদকচক্র ফারুকের প্রত্যক্ষ আশ্রয়ে পরিচালিত হতো বলেও দাবি করছেন এলাকাবাসী।

বিএনপি ও জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’, চাকরি থেকে বরখাস্ত করানো,এমনকি বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করার মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

গ্রেপ্তারে স্বস্তি, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন-

তার গ্রেপ্তারের খবরে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখা গেলেও অনেকে বলছেন,এতদিন ধরে তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন নীরব ছিল?

স্থানীয় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “ফারুক ছিল সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের প্রতীক।আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় সে যা খুশি তাই করেছে। আজ তার গ্রেপ্তারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এখনও বহু সন্ত্রাসী বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

পুলিশ বলছে, আরও তদন্ত হবে-

নান্দাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আবু নাঈম ফারুককে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে।তদন্তে যদি আরও তথ্য উঠে আসে,তাহলে নতুন ধারায় মামলাও করা হবে।”

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মতে,এটি ক্ষমতাসীন দলের ‘ক্লিন আপ’অভিযানের অংশ হলেও যদি তা শুধুই দলীয় কোন্দল সামাল দেওয়ার কৌশল হয়,তাহলে তাতে জনগণের আস্থা ফেরানো যাবে না।

নিউজটি শেয়ার করুন

মন্ত্রীর ভাতিজা পরিচয়ে নান্দাইলে দাপট চালানো সেই যুবলীগ নেতা ফারুক গ্রেফতার

আপডেট সময় : ০৬:২২:৪৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫

নান্দাইল সংবাদদাতা

আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালামের ভাতিজা ও নান্দাইল উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক আবু নাঈম ভূঁইয়া ফারুক অবশেষে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) গভীর রাতে উপজেলার রসুলপুরে পারিবারিক বাসভবন থেকে তাকে আটক করে নান্দাইল মডেল থানা পুলিশ।

তাকে ঘিরে নান্দাইলের জনমনে দীর্ঘদিন ধরে আতঙ্ক, ক্ষোভ ও অভিশাপ জমে ছিল। অভিযোগ রয়েছে,সাবেক মন্ত্রীর ‘ভাতিজা’ পরিচয়ে তিনি নান্দাইলে একপ্রকার ছায়া-শাসন কায়েম করেন—যার কেন্দ্রে ছিল টেন্ডারবাজি,চাঁদাবাজি,নিয়োগ-বাণিজ্য, মাদক কারবারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিরোধীদের দমনপীড়ন।

চব্বিশের ‘জুলাই-আগস্ট বিপ্লব’-এ হামলার নির্দেশদাতা-

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের সময় নান্দাইলে শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগ ও যুবলীগ কর্মীদের হামলার নির্দেশদাতা হিসেবে তার নাম উঠে আসে।

স্থানীয় আন্দোলনকারীদের ভাষ্য, ফারুকের ছত্রচ্ছায়ায় সেদিন শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা হয়,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঢুকে ছাত্রদের মারধর ও হয়রানি চালানো হয়।

সবখানেই কমিশনের রাজত্ব-

উপজেলা প্রকল্প, এলজিইডি ও শিক্ষা অবকাঠামোর প্রায় সব সরকারি কাজ তার নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।স্থানীয় এক ঠিকাদার জানান,“সরকারি টেন্ডারে অংশ নিতে গেলেই ফারুকে কমিশন দিতে হতো।না দিলে কাজ আটকে যেত,কেউ কেউ মারধরেরও শিকার হয়েছেন।”

এছাড়া স্থানীয় কয়েকটি মাদকচক্র ফারুকের প্রত্যক্ষ আশ্রয়ে পরিচালিত হতো বলেও দাবি করছেন এলাকাবাসী।

বিএনপি ও জামায়াতপন্থী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা মামলা’, চাকরি থেকে বরখাস্ত করানো,এমনকি বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করার মতো ভয়ঙ্কর অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।

গ্রেপ্তারে স্বস্তি, প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন-

তার গ্রেপ্তারের খবরে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখা গেলেও অনেকে বলছেন,এতদিন ধরে তার বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও প্রশাসন কেন নীরব ছিল?

স্থানীয় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, “ফারুক ছিল সন্ত্রাস ও দুঃশাসনের প্রতীক।আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় সে যা খুশি তাই করেছে। আজ তার গ্রেপ্তারে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও এখনও বহু সন্ত্রাসী বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছে।”

পুলিশ বলছে, আরও তদন্ত হবে-

নান্দাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “আবু নাঈম ফারুককে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে।তদন্তে যদি আরও তথ্য উঠে আসে,তাহলে নতুন ধারায় মামলাও করা হবে।”

স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের মতে,এটি ক্ষমতাসীন দলের ‘ক্লিন আপ’অভিযানের অংশ হলেও যদি তা শুধুই দলীয় কোন্দল সামাল দেওয়ার কৌশল হয়,তাহলে তাতে জনগণের আস্থা ফেরানো যাবে না।