ঢাকা ০৫:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

থানায় সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকে যৌন নির্যাতন, বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১২:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৬২ বার পড়া হয়েছে

প্রলয় ডেস্ক

ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভুবনেশ্বরে একটি পুলিশ স্টেশনে এক নারীকে যৌন নির্যাতন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে ওই নারী ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত তার স্বামী পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে তাদের ওপর বর্বর আচরণ করা হয়।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ৪ জন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং একজনকে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি, ওড়িশা সরকারের নির্দেশে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশকে দিয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ৬০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন। খবর বিবিসির।

অভিযোগের বিবরণ জানা যায়, ৩২ বছর বয়সী ওই নারী আইনে গ্রাজুয়েট। তিনি ভুবনেশ্বরে একটি রেস্তোরাঁ চালান। ভুক্তভোগীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় তিনি নিজের ওপর হওয়া নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। ভিডিওতে তাকে একটি হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় দেখা যায়।

বারবার কান্নায় ভেঙে পড়া ওই নারী জানান, রেস্তোরাঁ বন্ধ করে মধ্যরাতে তিনি স্বামীকে নিয়ে ভারতপুর থানায় যান, কারণ রাস্তা থেকে কিছু লোক তাদের উত্ত্যক্ত করছিল। তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে দ্রুত একটি পেট্রোল কার পাঠানোর অনুরোধ জানালেও পুলিশ তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি। এসময় কোন কারণ ছাড়াই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে পুলিশ।

ওই নারী বলেন, যখন তিনি পুলিশের আচরণের প্রতিবাদ করেন এবং নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন, তখন পুলিশ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ তার স্বামীকে লকআপে বন্দী করে ফেলে। এসময় দুই নারী পুলিশ সদস্য ভুক্তভোগীর চুল ধরে টেনে, শারীরিকভাবে আঘাত করে। ওই নারী জানান, তাতে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখা হয়। এসময় তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয় এবং থানায় এক পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে যৌন হয়রানি করে।

তিনি অভিযোগ করেন, ওই রাতে থানার ইনচার্জ তাকে একাধিকবার ধর্ষণের হুমকি দেন এবং তার পোশাক খুলে মারধর করেন।

স্থানীয় পুলিশ বলেছে বলছে ভিন্ন কথা। তার জানিয়েছে, ওই নারী এবং তার স্বামী মদ্যপ অবস্থায় থানায় এসেছিলেন এবং তাদের আচরণ ছিল আক্রমণাত্মক । পুলিশ আরো অভিযোগ করে, ওই নারী এক পুলিশ সদস্যকে চড় মারেন এবং অন্য এক নারী পুলিশ সদস্যকে কামড়ে দেন।

তবে, ৩ দিন পর আদালত ঘটনার শিকার নারীকে জামিনে মুক্তি দেয়। মুক্তি পেয়েই ওই নারী পুলিশের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, পুলিশ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরো ঘটনাটি ভারতীয় গণতান্ত্রিক সমাজের আদর্শের পরিপন্থী।

এ ঘটনার পর গোটা ভারতজুড়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দেশর সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তারা ওই নারীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্ট দেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনীও ওড়িশার উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি লিখে অভিযোগ জানায়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয় ওই নারীর স্বামী একজন সেনা কর্মকর্তা। তাকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ ১৪ ঘণ্টা থানায় আটক রেখেছে এবং তার স্ত্রীর ‘সম্মান ও মর্যাদার প্রতি মারাত্মক আঘাত’ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও নারী অধিকার কর্মীরা জানান ওই নারীর বাবাও একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার। তিনি ঘটনার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে তার মেয়েকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছেন। এসময় পুলিশ ভুক্তোভূগীর পরিবারের কাউকেই তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোন কিছুই জানায়নি।

ভারতের নারী অধিকার কর্মী নম্রতা চাড্ডা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ওই নারীকে দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর চোখে বারবার জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমরা তাকে বলেছি, ‘তোমাকে সাহসী হতে হবে। উত্তরে ওই নারী বলেছে, সে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’

চাড্ডা আরো বলেন, পুলিশ একজন নারীর অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে প্রায়োরিটি দিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে শোনার কথা, তাকে শান্ত করার কথা। কিন্তু ঘটনার রাতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। পুলিশ এ ঘটনায় মোটেই তাদের নিয়মিত প্রটোকল মানেনি।

নিউজটি শেয়ার করুন

থানায় সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীকে যৌন নির্যাতন, বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

আপডেট সময় : ১২:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রলয় ডেস্ক

ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ভুবনেশ্বরে একটি পুলিশ স্টেশনে এক নারীকে যৌন নির্যাতন ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ১৫ সেপ্টেম্বর ভোরে ওই নারী ও সেনাবাহিনীতে কর্মরত তার স্বামী পুলিশের কাছে অভিযোগ করতে গেলে তাদের ওপর বর্বর আচরণ করা হয়।

ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর ৪ জন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং একজনকে বদলি করা হয়েছে। পাশাপাশি, ওড়িশা সরকারের নির্দেশে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি চিত্তরঞ্জন দাশকে দিয়ে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা ৬০ দিনের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবেন। খবর বিবিসির।

অভিযোগের বিবরণ জানা যায়, ৩২ বছর বয়সী ওই নারী আইনে গ্রাজুয়েট। তিনি ভুবনেশ্বরে একটি রেস্তোরাঁ চালান। ভুক্তভোগীর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যায় তিনি নিজের ওপর হওয়া নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন। ভিডিওতে তাকে একটি হুইলচেয়ারে বসা অবস্থায় দেখা যায়।

বারবার কান্নায় ভেঙে পড়া ওই নারী জানান, রেস্তোরাঁ বন্ধ করে মধ্যরাতে তিনি স্বামীকে নিয়ে ভারতপুর থানায় যান, কারণ রাস্তা থেকে কিছু লোক তাদের উত্ত্যক্ত করছিল। তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ করে দ্রুত একটি পেট্রোল কার পাঠানোর অনুরোধ জানালেও পুলিশ তাদের অভিযোগ আমলে নেয়নি। এসময় কোন কারণ ছাড়াই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে পুলিশ।

ওই নারী বলেন, যখন তিনি পুলিশের আচরণের প্রতিবাদ করেন এবং নিজেকে একজন আইনজীবী হিসেবে পরিচয় দেন, তখন পুলিশ আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। অভিযোগ অনুযায়ী, পুলিশ তার স্বামীকে লকআপে বন্দী করে ফেলে। এসময় দুই নারী পুলিশ সদস্য ভুক্তভোগীর চুল ধরে টেনে, শারীরিকভাবে আঘাত করে। ওই নারী জানান, তাতে তাকে একটি কক্ষে আটকে রেখা হয়। এসময় তার হাত-পা বেঁধে রাখা হয় এবং থানায় এক পুরুষ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে যৌন হয়রানি করে।

তিনি অভিযোগ করেন, ওই রাতে থানার ইনচার্জ তাকে একাধিকবার ধর্ষণের হুমকি দেন এবং তার পোশাক খুলে মারধর করেন।

স্থানীয় পুলিশ বলেছে বলছে ভিন্ন কথা। তার জানিয়েছে, ওই নারী এবং তার স্বামী মদ্যপ অবস্থায় থানায় এসেছিলেন এবং তাদের আচরণ ছিল আক্রমণাত্মক । পুলিশ আরো অভিযোগ করে, ওই নারী এক পুলিশ সদস্যকে চড় মারেন এবং অন্য এক নারী পুলিশ সদস্যকে কামড়ে দেন।

তবে, ৩ দিন পর আদালত ঘটনার শিকার নারীকে জামিনে মুক্তি দেয়। মুক্তি পেয়েই ওই নারী পুলিশের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেন। আদালতের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, পুলিশ আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় পদ্ধতি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পুরো ঘটনাটি ভারতীয় গণতান্ত্রিক সমাজের আদর্শের পরিপন্থী।

এ ঘটনার পর গোটা ভারতজুড়ে বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দেশর সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তারা ওই নারীর প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্ট দেন।

ভারতীয় সেনাবাহিনীও ওড়িশার উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতির কাছে একটি চিঠি লিখে অভিযোগ জানায়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয় ওই নারীর স্বামী একজন সেনা কর্মকর্তা। তাকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই পুলিশ ১৪ ঘণ্টা থানায় আটক রেখেছে এবং তার স্ত্রীর ‘সম্মান ও মর্যাদার প্রতি মারাত্মক আঘাত’ করা হয়েছে।

ভুক্তভোগীর পরিবার ও নারী অধিকার কর্মীরা জানান ওই নারীর বাবাও একজন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার। তিনি ঘটনার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে তার মেয়েকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছেন। এসময় পুলিশ ভুক্তোভূগীর পরিবারের কাউকেই তার গ্রেপ্তারের বিষয়ে কোন কিছুই জানায়নি।

ভারতের নারী অধিকার কর্মী নম্রতা চাড্ডা হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা ওই নারীকে দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর চোখে বারবার জল গড়িয়ে পড়ছিল। আমরা তাকে বলেছি, ‘তোমাকে সাহসী হতে হবে। উত্তরে ওই নারী বলেছে, সে শেষ পর্যন্ত লড়াই করবে।’

চাড্ডা আরো বলেন, পুলিশ একজন নারীর অভিযোগ পাওয়ার পর তাকে প্রায়োরিটি দিয়ে ধৈর্যের সঙ্গে শোনার কথা, তাকে শান্ত করার কথা। কিন্তু ঘটনার রাতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। পুলিশ এ ঘটনায় মোটেই তাদের নিয়মিত প্রটোকল মানেনি।