বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
পঞ্চগড় প্রতিনিধি
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান ইউনিয়নের বিড়ালীজোত এলাকায় ক্ষেতে বেগুন তুলছিলেন চাষি খোরশেদ আলী। তার জমিতে কাজ করছেন রফিকুল ইসলাম ও আলম নামের দুই দিনমজুর। গাঢ় লালচে বেগুনী রঙের বেগুনগুলো তুলে বাড়ির আঙিনায় জড়ো করছেন তারা। এখান থেকেই পাইকাররা এসে কিনে নিচ্ছেন।
গাঢ় লালচে বেগুনী রঙের ললিতা বেগুন। হাইব্রিড জাতের ললিতা বেগুনের ফলন ও ভালো দাম থাকায় আগ্রহ বেড়েছে উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কৃষকদের। স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বেগুন যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় জানিয়েছেন, তেঁতুলিয়ায় উপজেলায় ২০০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। বর্তমানে ৬০/৭০ হেক্টর জমিতে বেগুন আবাদ হচ্ছে। কৃষকরা নতুন করে বেগুনের চারা লাগাচ্ছেন। বেগুনগুলোর মধ্যে হাইব্রিড ললিতা অন্যতম। এই বেগুনের উৎপাদন ও দাম ভালো হওয়ায় তেঁতুলিয়ার বেশ কয়েকজন চাষি আবাদ করছেন। অনেকের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। সামনের মৌসুমে এ বেগুন আরও আবাদ বাড়বে বলে মনে করছেন কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের কর্মকর্তা-উপসহকারীরা।
জানা যায়, বেগুনটি সারাবছরই আবাদ করা যায়। বীজ বপনের পর চারা রোপণের ৬৫ থেকে ৭৫ দিনে ফসল সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বেগুন লাগানো হয়। বর্ষাকালে গাছে গাছে ফল আসে। গাছের প্রতিটি ফলের ওজন ১২০ থেকে ১৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। উচ্চমাত্রায় তুলসি বা ঝিমিয়ে পড়া রোগ (ব্যাক্টেরিয়াল উইল্ট) সহনশীল এই ললিতা বেগুন। অতি বৃষ্টিতেও তেমন একটা ক্ষতি হয় না।
বেগুন চাষি খোরশেদ আলী বলেন, এটি হাইব্রিড জাতের। আবাদে ভালো ফলন হয়েছে। বেশ ভালোই লাভবান হচ্ছি। কয়েকবার তুলে বিক্রি করেছি। বর্তমানে পাইকররা এসে ১২০০-১৩০০ টাকা মণ কিনে নিচ্ছে। ৩৫ শতক জমিতে হাইব্রিড জাতের ললিতা বেগুন লাগিয়েছি। আবাদে খরচ হয়েছে দেড় লাখ টাকা। তবে ইতিমধ্যে তিন লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করে ফেলেছি। প্রতি সপ্তাহেই ২০/২১ মণ বেগুন তুলতে পারছি। আশা করছি আগামী দুই আড়াই মাসও বেগুন তুলতে পারব।
আরও পড়ুন
সিংড়ায় বস্তায় আদা চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
কুড়িগ্রামে চুঁই ঝাল চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের
পোঁকার আক্রমণে বাদাম ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি, দিশেহারা কৃষকরা
বেগুন পাইকারি ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, চাষিদের কাছ থেকে মাঠ থেকেই বেগুন কিনছি আমরা। কৃষকরা যেমন ভালো দাম পাচ্ছে, আমরাও তাদের কাছ থেকে পাইকারিভাবে কিনে বিভিন্ন আড়ৎদারদের কাছে বিক্রি করছি। বেগুনটি প্রথম প্রথম বাজারে ওঠার সময় ২৫০০ টাকা পর্যন্ত পাইকারি বিক্রি হয়েছে। এখন সাড়ে ১২০০ টাকা দিচ্ছি। অন্য ফসলের চেয়ে ললিতা বেগুন চাষে খরচ ও পরিশ্রম কম। ফলন ও দাম বেশি পাওয়া যায়। এতে চাষির লাভ বেশি হচ্ছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তামানা ফেরদৌস বলেন, বর্তমানে দাম বেশি পাওয়ায় ললিতা বেগুনের আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। কারণ এ বেগুনে পোকা কম ধরে। গুণগত মানেও এই বেগুন খুব ভালো। ভোক্তারও চাহিদা রয়েছে। চাষিদের ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা সরকার কৃষি বিভাগের মাধ্যমে করে যাচ্ছে।