মেরিন ড্রাইভ সড়কে মোটরসাইকেলের ধাক্কায় সার্ভেয়ার নিহত, পরিবারে শোকের ছায়া

- আপডেট সময় : ০৩:৫৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ১১৭ বার পড়া হয়েছে
শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া থেকে
কক্সবাজার – টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের উখিয়া উপজেলার সোনার পাড়ায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন মো. সুজা মিয়া (৪০) নামের এক সার্ভেয়ার। তিনি গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ মরুয়াদহ এলাকার সাহাব উদ্দিনের ছেলে ছিলেন। আজ সোমবার (৩ ডিসেম্বর) বেলা ১২টার দিকে সড়কটি দিয়ে ভূমি পরিমাপের কাজ করার সময় একটি বেপরোয়া গতির মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন এবং ঘটনাস্থলে উপস্থিত সহকর্মীরা তাকে দ্রুত কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। তবে, হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সুজা মিয়া কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভ সড়কে ভূমি পরিমাপের কাজ করছিলেন, ওই সময় একটি দ্রুতগতির মোটরসাইকেল তাকে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। তার সহকর্মীরা তৎক্ষণাত তাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান, কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর আগেই তিনি মারা যান। পুলিশ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন যে, দুর্ঘটনায় তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন।
মো. সুজা মিয়া কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার হিমছড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর ইসিবি ক্যাম্পের অধীনে ভূমি পরিমাপক (সার্ভেয়ার) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে তার সহকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের মাঝে। দুর্ঘটনায় নিহত সুজা মিয়ার পরিবারে শোকের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণও অত্যন্ত মর্মাহত।
স্থানীয়রা জানান, এই সড়কটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এবং প্রায়ই বেপরোয়া গতির গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। মেরিন ড্রাইভ সড়কটি কক্সবাজার ও টেকনাফের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে, যা একদিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অন্যদিকে বিশেষ করে স্থানীয়দের জন্য নিরাপত্তার সংকট তৈরি করছে। প্রতিদিন এই সড়কটি দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে, তবে সড়কের অবস্থা এবং চালকদের বেপরোয়া চালনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে উদ্বেগ রয়েছে।
কক্সবাজার সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর মোহাম্মদ জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে ঘটনার সাথে জড়িত মোটরসাইকেল চালকের খোঁজে অভিযান শুরু করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং চালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। তারা জানান, এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবারকে এমন মর্মান্তিক ঘটনার শিকার না হতে হয়।
সড়ক নিরাপদ নেতা মোঃ সেলিম জানান, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সড়ক নিরাপত্তা ব্যবস্থা শক্তিশালী করা জরুরি। সড়কগুলোতে স্পিড ব্রেকার, সিগনাল, ডিভাইডার এবং পর্যাপ্ত আলো সরবরাহ করা হলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমানো সম্ভব হবে। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে আরো গুরুত্ব সহকারে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
এ ঘটনায় নিহত সুজা মিয়ার পরিবার ও তার সহকর্মীরা গভীর শোকের মধ্যে আছেন। পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা সুজার মৃত্যুর জন্য বেপরোয়া চালকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন। তারা আরও বলেন, সুজা মিয়া ছিল একজন পরিশ্রমী ও ন্যায্য কাজকর্মের মানুষ, তার অকাল মৃত্যু তাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ দুর্ঘটনা একদিকে যেমন সড়ক নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ তুলে ধরেছে, তেমনি এটি আমাদের প্রমাণ করছে যে, সড়ক পরিবহন ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে আরো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া উচিত।