ঢাকা ০৫:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব : মিথ্যা মামলা দিয়ে ছোট ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা বড় ভাইয়ের

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:১১:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৬৪৫ বার পড়া হয়েছে

শরীয়তপুর সংবাদদাতা

শরীয়তপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আপন ছোট ভাইকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের চর চিকন্দী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ভুক্তভোগী সহ এলাকাবাসী।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার চর চিকন্দী গ্রামের আপন দুই ভাই আ: হামিদ খান (৬৫) ও মনির হোসেন খানের (৫৫) মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ দরবারও হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে তাদের বাড়ির পাশের সড়কে দোকানের সামনে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দুই ভাই হামিদ খান ও মনির খানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর দুই দিন পর ৫ ডিসেম্বর ছোট ভাই মনির খান, মনির খানের স্ত্রী, দুই ছেলে সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলা করেন বড় ভাই হামিদ খান। মামলা নম্বর সিআর ৮০৯/২০২৪ (পালং)।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ নভেম্বর ও ৩ ডিসেম্বর হামিদ খান ও স্ত্রী সাজেদা বেগমের ওপর দুই দফায় হামলা করে আসামীরা। আসামীরা হামিদ খান ও তার স্ত্রী সাজেদা বেগমকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। এছাড়া আসামীরা সাজেদা বেগমকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করে।

মামলাটি আমলে নিয়ে পালং মডেল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে মামলাটিকে মিথ্যা হয়রানিমূলক বলে দাবি করেছেন সকল আসামি সহ স্থানীয়রা। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে এ বিষয়ে কথা হয় মামলার বাদী, আসামী ও স্থানীয়দের সাথে।

মামলার প্রধান আসামি মনির খান বলেন, আমি প্রায় ৪৫ বছর ঢাকায় থেকে ব্যবসা বানিজ্য করেছি। ঢাকায় থাকতেই কামাই রোজগারের টাকা দিয়া বড় ভাই হামিদ খানের মাধ্যমে আমি কিছু জায়গা-জমি কিনেছি। কিন্তু বড় ভাই আমার নামে কোন জমি রেকর্ড না করে বিভিন্ন নামে রেকর্ড করে তিনি নিজেই ভোগ দখল করেন। আমি ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসি দশ বছর হয়। এরমধ্যে কয়েক দফায় দেন-দরবারের পর সে কিছু জমি আমাকে বুঝিয়ে দেয়। বাকি জমি এখনও বুঝিয়ে দেয়নি। আমার জমি ফেরত দিতে একাধিকবার সালিশ দিয়েছি। কিন্তু সে কোন সালিশ মানে না এবং বাকি জমি বুঝিয়ে না দিয়ে উলটো প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তখন আমি আইনের আশ্রয় নিয়ে ৭ধারায় একটি মামলা করি। পরে গত ৩ ডিসেম্বর আমি আমার জমিতে হালচাষ করে ফসল বুনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই হামিদ খান সন্ধ্যায় আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ ও হুমকি দেয় এবং তার ছেলেরা দা নিয়ে আমাকে কোপাতে আসে। তখন দোকানে আসা লোকজন তাদের থামায়। এ ঘটনায় আমি অভিযোগ নিয়ে পালং মডেল থানায় যাই। তখন থানার ওসি চিকন্দী পুলিশ ফাঁড়ির আইসিকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেন। আইসি বড় ভাই হামিদ খানকে ফাঁড়িতে ডাকলে তিনি না গিয়ে পরের দিন আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

স্থানীয় রফিক আকন, খলিল হাওলাদার, ইউনুস হাওলাদার, খোরশেদ মাদবর, আব্দুল হক আকন, আব্দুল জব্বার মাদবর ও আব্দুর রাজ্জাক হাওলার সহ আরও অনেকে বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আমরা মনির খানের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এ সময় তার বড় ভাই হামিদ খান এসে জমিতে কেন হালচাষ করছে তা মনির খানের কাছে জানতে চান। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। পরে আমরা দুই ভাইকে মানিয়ে দেই। এ নিয়ে আর কোন ঝগড়াঝাটি বা মারামারির ঘটনা ঘটেনি। হামিদ খান যে মামলা করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এ বিষয়ে বড় ভাই আ: হামিদ খান বলেন, ছোট ভাই মনির খানের সাথে আমার জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব। সে বিরোধপূর্ণ জমিতে জোর করে হালচাষ করেছে। তাই আমি মামলা করেছি। আর মামলা করতে হলে কিছুটা সত্যমিথ্যা মিলিয়েই করতে হয়। উকিল তার সুবিধা মতো মামলা লিখেছে। এখন কি করতে হবে তা উকিলই বুঝবে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, সিআর ৮০৯ মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত পালং মডেল থানাকে নির্দেশ দিয়েছে। শীঘ্রই সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব : মিথ্যা মামলা দিয়ে ছোট ভাইকে ফাঁসানোর চেষ্টা বড় ভাইয়ের

আপডেট সময় : ০৪:১১:০৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪

শরীয়তপুর সংবাদদাতা

শরীয়তপুরে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে আপন ছোট ভাইকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বড় ভাইয়ের বিরুদ্ধে। শরীয়তপুর সদর উপজেলার শৌলপাড়া ইউনিয়নের চর চিকন্দী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন ভুক্তভোগী সহ এলাকাবাসী।

মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুর সদর উপজেলার চর চিকন্দী গ্রামের আপন দুই ভাই আ: হামিদ খান (৬৫) ও মনির হোসেন খানের (৫৫) মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশ দরবারও হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যার দিকে তাদের বাড়ির পাশের সড়কে দোকানের সামনে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে দুই ভাই হামিদ খান ও মনির খানের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এর দুই দিন পর ৫ ডিসেম্বর ছোট ভাই মনির খান, মনির খানের স্ত্রী, দুই ছেলে সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলা করেন বড় ভাই হামিদ খান। মামলা নম্বর সিআর ৮০৯/২০২৪ (পালং)।

মামলায় উল্লেখ করা হয়, গত ২৬ নভেম্বর ও ৩ ডিসেম্বর হামিদ খান ও স্ত্রী সাজেদা বেগমের ওপর দুই দফায় হামলা করে আসামীরা। আসামীরা হামিদ খান ও তার স্ত্রী সাজেদা বেগমকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম করে। এছাড়া আসামীরা সাজেদা বেগমকে বিবস্ত্র করে শ্লীলতাহানি করে।

মামলাটি আমলে নিয়ে পালং মডেল থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে মামলাটিকে মিথ্যা হয়রানিমূলক বলে দাবি করেছেন সকল আসামি সহ স্থানীয়রা। গতকাল শনিবার দুপুরে সরেজমিন গিয়ে এ বিষয়ে কথা হয় মামলার বাদী, আসামী ও স্থানীয়দের সাথে।

মামলার প্রধান আসামি মনির খান বলেন, আমি প্রায় ৪৫ বছর ঢাকায় থেকে ব্যবসা বানিজ্য করেছি। ঢাকায় থাকতেই কামাই রোজগারের টাকা দিয়া বড় ভাই হামিদ খানের মাধ্যমে আমি কিছু জায়গা-জমি কিনেছি। কিন্তু বড় ভাই আমার নামে কোন জমি রেকর্ড না করে বিভিন্ন নামে রেকর্ড করে তিনি নিজেই ভোগ দখল করেন। আমি ঢাকা থেকে বাড়ি চলে আসি দশ বছর হয়। এরমধ্যে কয়েক দফায় দেন-দরবারের পর সে কিছু জমি আমাকে বুঝিয়ে দেয়। বাকি জমি এখনও বুঝিয়ে দেয়নি। আমার জমি ফেরত দিতে একাধিকবার সালিশ দিয়েছি। কিন্তু সে কোন সালিশ মানে না এবং বাকি জমি বুঝিয়ে না দিয়ে উলটো প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তখন আমি আইনের আশ্রয় নিয়ে ৭ধারায় একটি মামলা করি। পরে গত ৩ ডিসেম্বর আমি আমার জমিতে হালচাষ করে ফসল বুনি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই হামিদ খান সন্ধ্যায় আমার দোকানে এসে আমাকে গালিগালাজ ও হুমকি দেয় এবং তার ছেলেরা দা নিয়ে আমাকে কোপাতে আসে। তখন দোকানে আসা লোকজন তাদের থামায়। এ ঘটনায় আমি অভিযোগ নিয়ে পালং মডেল থানায় যাই। তখন থানার ওসি চিকন্দী পুলিশ ফাঁড়ির আইসিকে বিষয়টি তদন্ত করতে বলেন। আইসি বড় ভাই হামিদ খানকে ফাঁড়িতে ডাকলে তিনি না গিয়ে পরের দিন আমার ও আমার পরিবারের সদস্যদের নামে আদালতে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।

স্থানীয় রফিক আকন, খলিল হাওলাদার, ইউনুস হাওলাদার, খোরশেদ মাদবর, আব্দুল হক আকন, আব্দুল জব্বার মাদবর ও আব্দুর রাজ্জাক হাওলার সহ আরও অনেকে বলেন, গত ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আমরা মনির খানের দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। এ সময় তার বড় ভাই হামিদ খান এসে জমিতে কেন হালচাষ করছে তা মনির খানের কাছে জানতে চান। এ নিয়ে দুই ভাইয়ের মধ্যে কিছুটা কথা কাটাকাটি হয়। পরে আমরা দুই ভাইকে মানিয়ে দেই। এ নিয়ে আর কোন ঝগড়াঝাটি বা মারামারির ঘটনা ঘটেনি। হামিদ খান যে মামলা করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

এ বিষয়ে বড় ভাই আ: হামিদ খান বলেন, ছোট ভাই মনির খানের সাথে আমার জমি নিয়ে দ্বন্দ্ব। সে বিরোধপূর্ণ জমিতে জোর করে হালচাষ করেছে। তাই আমি মামলা করেছি। আর মামলা করতে হলে কিছুটা সত্যমিথ্যা মিলিয়েই করতে হয়। উকিল তার সুবিধা মতো মামলা লিখেছে। এখন কি করতে হবে তা উকিলই বুঝবে।

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন বলেন, সিআর ৮০৯ মামলাটি তদন্তের জন্য আদালত পালং মডেল থানাকে নির্দেশ দিয়েছে। শীঘ্রই সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হবে।