মীরসরাইতে মেলার নামে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি অসাধু চক্র

- আপডেট সময় : ০৮:৫১:৪৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৭১ বার পড়া হয়েছে
মীরসরাই সংবাদদাতা
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে গত ৫ আগষ্টের পর ৩ টি হত্যা কান্ডের পাশাপাশি অসংখ্য লুটপাট, চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, মারামারি হানাহানির ঘটনা ঘটেছে। নিহতের পাশাপাশি আহতের সংখ্যা শতের ও অধিক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে বদলি করা হয়েছে মীরসরাই থানার ওসি আব্দুল কাদের কে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রহস্যজনক নীরবতায় বৃদ্ধি পেয়েছে চোরাকারবারী, মাদক বানিজ্য, চুরি, ছিনতাই। ৫ আগষ্টের পট পরিবর্তনের সাথে সাথে হঠাৎ থমকে গেছে ব্যবসায়ীক কর্মকাণ্ড। মন্দা চলছে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনায়।
এমন নাজুক অবস্থায় বিভিন্ন মেলা কমিটি ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের পাশাপাশি বিভিন্ন বাণিজ্য মেলা করার চেষ্টা হলেও প্রশাসক কোন মেলার অনুমোদন দেয় নি। চট্টগ্রাম জেলা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকটি মেলা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুই একটি মেলার অনুমোদন দিলেও সেসকল মেলার আয়ুষ্কাল মাত্র দুই থেকে চারদিন কিংবা সর্বোচ্চ ১ সপ্তাহের। কিন্তু মীরসরাইয়ে অন্ধ কল্যাণ সমিতির ব্যানারে দীর্ঘ ১ মাসের মেলার আয়োজন দেখে ছানা বড়া স্থানীয় লক্ষ্য সাধারণ জনতার। বাংলাদেশ অন্ধ কল্যাণ সমিতি নামে একটি সংগঠন এই মেলার আয়োজক। মিরসরাই উপজেলা কার্যালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সরাসরি জেলা পরিষদের অনুমোদন নিয়ে মেলার আয়োজন করছেন সংগঠনটির সভাপতি এমএম মোশারফ হোসেন মাসুদ।
অন্ধ কল্যাণ সমিতি নামক সংগঠনের ব্যানারে মেলায় অনুমোদন ও আয়োজন করা হলেও মোশারফ হোসেন মাসুদ ব্যাতীত দেশের কিংবা জেলা উপজেলার কোন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে এই মেলার সাথে সম্পৃক্ত করা হয়নি। মীরসরাইয়ের কোন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিংবা তাদের পরিবারের কেউ মেলার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাহলে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক অন্ধ কল্যাণ সমিতির নামে মেলার আয়োজক কার কল্যাণে?? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে দেখা গেল অন্ধ কল্যাণ সমিতি নামে হলেও এটি একটি মোশারফ হোসেন মাসুদের পারিবারিক সংগঠন ও পারিবারিক ব্যবসা। তিনি তার অন্ধত্বকে পুঁজি করে অন্ধ কল্যাণ সমিতির নাম ব্যবহার করে দেশ ব্যাপী প্রশাসনের বিভিন্ন অসাধু কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে মেলার অনুমোদন হাতিয়ে নেন। অনুমোদন নেয়ার পর কোন কোন মেলা নিজে আয়োজন করলেও বেশীরভাগ মেলা ৪০ থেকে ৫০ লাখ টাকায় ৩য় পক্ষের কাছে বিক্রি করে দেন। একটি মেলার অনুমোদন নিতে তিনি ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করেন বাকি টাকা নিজে একাই হাতিয়ে নেন।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে অন্ধ কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোশারফ হোসেন মাসুদ স্বিকার করেন এটি একটি তার ব্যক্তিগত ব্যবসায় কোম্পানি। মীরসরাইয়ের মেলায় মীরসরাইয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের সম্পৃক্ত না করার বিষয়ে তিনি বলেন অন্ধরা তো দোকান করতে পারবেনা তাদের কিভাবে সম্পৃক্ত করা যাবে? মেলার আয় থেকে মীরসরাইয়ের দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সহায়তায় বিষয়ে তিনি বলেন এসব সমাজ সেবা কার্যালয়ের কাজ। অথচ খবর নিয়ে জানা যায়, মীরসরাইয়ের ৯৬ টি বরাদ্দ কৃত বিভিন্ন প্রকারের অস্থায়ী দোকান ও ভ্রাম্যমাণ অর্ধশতাধিক দোকান বসানোর নামে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ইতি মধ্যে হাতিয়ে নিয়েছেন। এসব টাকার ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা মেলার অনুমোদন, স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক নেতা ও অসাধু সাংবাদিকদের পেছনে ব্যয় করেছেন। ফলে মীরসরাইয়ের স্থানীয় ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, মীরসরাইয়ের দুটি প্রেসক্লাবের অর্ধশতাধিক সাংবাদিক ও স্থানীয় জনসাধারণ মেলার বিরোধীতা করলেও কর্ণপাত করছে না মেলার আয়োজন ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা। মেলার বিপক্ষে বেশ কয়েকটি আবেদন মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক ফারিদা খানম বরাবরে প্রেরণ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বরং অভিযোগ কারিদের হুমকি দেয়া ঘটনা ঘটেছে বলেও জানা গেছে।
মেলার বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মীরসরাইয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি করে কোন মেলার প্রয়োজন নেই এই বিষয়ে মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজা জেরিন কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ইউএনও মাহফুজা জেরিনের সরকারি মোবাইল নাম্বারে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
স্থানীয় ব্যবসায়িরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গত ১৬ থেকে ১৭ বছর যারা টাকা ইনকাম করেছে ৫ আগষ্টের পর তারা টাকা পয়সা নিয়ে এলাকা ছাড়া। বর্তমানে সাধারণ মানুষের হাতে টাকা নেই। দোকানে বেচাকেনা একেবারেই কম। তার উপরে মাস ব্যাপি মেলা হলে তার বিরুপ প্রভাব পড়বে স্থানীয় বাজারে।
আমরা চাইনা এই সময়ে এখানে মেলা হোক। মেলার বিপক্ষে স্থানীয় একাধিক সামাজিক সংগঠন মানববন্ধন করতে চাইলে প্রশাসনিক এক কর্মকর্তা তাদের ধমক দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা স্থানীয় ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠন ও সাংবাদিক সমাজের বিরুদ্ধে গিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এতে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি সংঘাতের ঝুঁকি রয়েছে। মেলাকে কেন্দ্র করে কোন প্রকার সংঘাত কিংবা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এটার দায় মেলার অনুমোদন দাতাদের নিতে হবে।