ঢাকা ০৮:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জিয়াউর রহমান এক দূরদর্শী নেতা ও দেশ গঠনের রূপকার: মোহাম্মদ মাসুদ ভালুকায় ইয়াবাসহ ৪ মাদক কারবারি গ্রেফতার রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি বছরই ৩টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন: প্রধান উপদেষ্টা এদেশে সবার অধিকার সমান, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ থাকবে না: সেনাপ্রধান ইসলামী জোটে নির্বাচনে অংশ নেবে খেলাফত আন্দোলন জামায়াত ও এনসিপির মতো কিছু গোষ্ঠী চায় না দেশে নির্বাচন হোক: দুলু কারচুপি প্রতিহতের প্রস্তুতি নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ত্রিশালে জমকালো আয়োজনে ক্রিকেট ফাইনাল খেলায় চ্যাম্পিয়ন ‘জুনিয়র টাইগার’ দুর্গাপুরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে আনন্দ র‌্যালি চাঁদাবাজদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ঠাকুরগাঁওয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:১৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
  • / ৭১ বার পড়া হয়েছে

সিরাজুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ অসংখ্য নদ নদী হাওড় বাওড় জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর এই নদী হাওড় বাওড় পুকুর গুলোতে এক সময় চলত পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব, কিন্তু ইতিহাস আর কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব।

তলাবিহীন কলসির আদলে বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে ছোট ছোট ছিদ্র রেখে শৈল্পিক কারুকার্যে সুনিপুণভাবে মাছ ধরার যে যন্ত্রটি তৈরি হয় ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম এর নাম পলো’। এই এলাকায় পলো দিয়ে মাছ ধরাকে বলা হয় পলো বাওয়া।

শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।
জানা গেছে, আগে প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতেই থাকতো দু-একটি পলো। ‘পলো’ মাছ ধরার কাজ ছাড়াও হাঁস-মুরগী ধরে রাখার কাজেও ব্যবহার হতো। শুকনো মৌসুমে বিশেষ করে পৌষ মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত শুরু হয়ে যেত পলো দিয়ে মাছ ধরার মহড়া।

শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিল হাওর খাল ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয় গুলোতে পূর্ব থেকেই দিন তারিখ ঠিক করে আশপাশের প্রত্যেক গ্রামের জনসাধারণকে দাওয়াত দেয়া হতো। নির্দিষ্ট দিনে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সৌখিন মৎস শিকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জড়ো হতেন।
জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করতেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় থাকতো গামছা বাঁধা। চলতো পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হৈ হুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য।

মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দিত। এতে বুঝা যেত শিকার এবার হাতের মুঠোয়। তখন পলোটিকে কাদা মাটির সাথে ভালোভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হতো যাতে নিচের কোন দিকে ফাঁক না থাকে। এরপর ওপরের খোলা মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মনের আনন্দে ধরে আনা হতো সেই শিকার।

বর্তমানে অনেক হাওর খাল বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন নদী-নালা হাওর-বাওর খাল-বিলে নিজেরাই মাছ চাষ করেছে, যার ফলে আর পরিত্যাক্ত পুকুর না থাকায় পলো দিয়ে মাছ চাষ এখন আর নজরে পরেনা।

হরিপুর উপজেলার জেলে, রবিউল ইসলাম জানান আগে কত আনন্দের সাথে সবাই মিলে নদী, পুকুর, হাওর গুলোতে মাছ ধরার উৎসব কিন্তু, আজ এই বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক ও পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব বিলুপ্ত প্রায়।
এক সময় নদী-নালা, তাই তিনি বলেন আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে এসব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন,তা না হলে বাঙ্গালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব ইতিহাস থেকে মুছে যাবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

ঠাকুরগাঁওয়ে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব

আপডেট সময় : ০৫:১৩:৫৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সিরাজুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ অসংখ্য নদ নদী হাওড় বাওড় জালের মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। আর এই নদী হাওড় বাওড় পুকুর গুলোতে এক সময় চলত পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব, কিন্তু ইতিহাস আর কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে। ঠাকুরগাঁও জেলা থেকে পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব।

তলাবিহীন কলসির আদলে বাঁশ ও বেতের সংমিশ্রণে ছোট ছোট ছিদ্র রেখে শৈল্পিক কারুকার্যে সুনিপুণভাবে মাছ ধরার যে যন্ত্রটি তৈরি হয় ঠাকুরগাঁওয়ের আঞ্চলিক ভাষায় তার নাম এর নাম পলো’। এই এলাকায় পলো দিয়ে মাছ ধরাকে বলা হয় পলো বাওয়া।

শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।
জানা গেছে, আগে প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়িতেই থাকতো দু-একটি পলো। ‘পলো’ মাছ ধরার কাজ ছাড়াও হাঁস-মুরগী ধরে রাখার কাজেও ব্যবহার হতো। শুকনো মৌসুমে বিশেষ করে পৌষ মাস থেকে শুরু করে চৈত্র মাস পর্যন্ত শুরু হয়ে যেত পলো দিয়ে মাছ ধরার মহড়া।

শীতের সময় খাল-বিল, বাওড় পুকুরে পানি কমে গেলে দলে দলে লোক পলো নিয়ে মাছ ধরতে নামতেন। এখনো পলো দিয়ে মাছ ধরা আছে, তবে আগের মতো নয়। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে পলো দিয়ে মাছ ধরা।
ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার বিল হাওর খাল ও পুকুরসহ উন্মুক্ত জলাশয় গুলোতে পূর্ব থেকেই দিন তারিখ ঠিক করে আশপাশের প্রত্যেক গ্রামের জনসাধারণকে দাওয়াত দেয়া হতো। নির্দিষ্ট দিনে বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিভিন্ন গ্রাম থেকে সৌখিন মৎস শিকারীরা নির্দিষ্ট জায়গায় এসে জড়ো হতেন।
জলাশয়ের এক প্রান্ত থেকে সকলে একই সাথে লাইন ধরে লুঙ্গি আটঘাট করে বেধে অথবা ‘কাছা’ দিয়ে এক সঙ্গে দল বেধে নান্দনিক ছন্দের তালে তালে ঝপ ঝপাঝপ শব্দে পলো দিয়ে মাছ ধরা শুরু করতেন এবং সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে যেতেন সামনের দিকে। অনেকেরই মাথায় থাকতো গামছা বাঁধা। চলতো পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হৈ হুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া। যেন এক নিজস্ব চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ সৌন্দর্যময় দৃশ্য।

মাছ পড়লেই পলোর ভেতর নাড়া দিত। এতে বুঝা যেত শিকার এবার হাতের মুঠোয়। তখন পলোটিকে কাদা মাটির সাথে ভালোভাবে চাপ দিয়ে ধরে রাখা হতো যাতে নিচের কোন দিকে ফাঁক না থাকে। এরপর ওপরের খোলা মুখ দিয়ে হাত ঢুকিয়ে মনের আনন্দে ধরে আনা হতো সেই শিকার।

বর্তমানে অনেক হাওর খাল বিল ও উন্মুক্ত জলাশয় ভরাট কিংবা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিভিন্ন নদী-নালা হাওর-বাওর খাল-বিলে নিজেরাই মাছ চাষ করেছে, যার ফলে আর পরিত্যাক্ত পুকুর না থাকায় পলো দিয়ে মাছ চাষ এখন আর নজরে পরেনা।

হরিপুর উপজেলার জেলে, রবিউল ইসলাম জানান আগে কত আনন্দের সাথে সবাই মিলে নদী, পুকুর, হাওর গুলোতে মাছ ধরার উৎসব কিন্তু, আজ এই বাঙ্গালীর সাংস্কৃতিক ও পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব বিলুপ্ত প্রায়।
এক সময় নদী-নালা, তাই তিনি বলেন আগামী প্রজন্মকে জানান দিতে এসব সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন,তা না হলে বাঙ্গালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পলো দিয়ে মাছ ধরার উৎসব ইতিহাস থেকে মুছে যাবে।