বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৫৫ পূর্বাহ্ন
জাফর আহমেদ, কুড়িগ্রাম
পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলায় ১৬ বছর কারা ভোগের পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের ল্যান্স কর্পোরাল কুড়িগ্রামের ফজলুর রহমান। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাড়িতে ফিরে স্ত্রী ও স্বজনদের কাছে পেয়ে অঝোড়ে কাঁদলেন তিনি। এসময় তাকে দেখতে বাড়িতে ভীড় জমান পাড়া প্রতিবেশী ও স্বজনরা।
গত ২৩ জানুয়ারী কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ২৪ জানুয়ারী তার নিজ বাড়িতে ফেরেন ফজলুল রহমান। ফজলুর রহমান কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার আন্ধারীঝাড় ইউনিয়নের ধাউরারকুঠি গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবার নাম মৃত শাহার আলী। দেশ সেবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে যোগ দেন বাংলাদেশ রাইফেলস এ। যৌবনের দিনগুলো কেটেছে দেশের সীমান্ত রক্ষায় চৌকশ সিপাহি হিসেবে। সিপাহি থেকে লেন্সনায়েক পদে পদন্নতি পেয়েছিলেন তিনি। তার কর্মস্থল বিডিআর হেডকোয়র্টার পিলখানায় থাকায় ফেঁসে যায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারী ঘটে যাওয়া বিডিয়ার হত্যাকান্ডের ঘটনার বিষ্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায়। প্রহসনের বিচারে ১৬ বছর কারাভোগ করে সদ্য জামিন পান তিনি। এখন মুক্ত হলেও ফজলুর রহমান কিছুটা মানষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।
স্বাভাবিক কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে তার। ৭ ভাই বোনের মধ্েয ফজলুর ৩য়। দীর্ঘ অপেক্ষার পর মুক্ত বাতাসে স্বামীকে ফিরে পেয়েও স্বামীর শাররীক অবস্থা আর চাকুরী না থাকায় সামনের দিনগুলো কিভাবে চলবে এ নিয়ে শঙ্কায় তার স্ত্রী। স্ত্রী রাশেদা বেগম বলেন, ১৬টি বছর সমাজের নানা সমালোচনা সহ্য করে খেয়ে না খেয়ে স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেছি। নিজের সন্তান না থাকায় ননদের সন্তানকে নিয়ে মানুষ করেছি। ছোট থেকেই সেই মেয়ে তার বাবাকে (ফজলুর রহমান) খুজেছে, আমি কোন উত্তর দিতে পারি নাই। এখন স্বামী ফিরে আসলেও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছে। অনেককে চিনতে পারছে, আবার অনেককে চিনতে পারছে না। আবোল তাবল বলছে।
আমি এখন কি করবো, কোথায় যাবো। ফজলুর রহমানের বড় ভাই ছামাদ আলী বলেন, সংসারে অভাব অনটন থাকায় ফজলুর রহমানের লেখা পড়া বন্ধ করে বিডিআরে পাঠাই। সে খুব ভালো ছিলো, ছোট দুই ভাইকে তার অনুপ্রেরণায় সেনাবাহীনিতে দেই। ফজলুর রহমান দেশের জন্য কাজ করেছে। হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে পারিনাই। ১৬ বছর ভাই কারাগারে ছিলো আমরা তাকে দেখতে পর্যন্ত যেতে পারি নাই। মানুষ আমাদের ঘৃর্ণার চোখে দেখেছে। এই কয়েক বছরে আমাদের বাবা- মা, এক বোনসহ ৯জন নিকট আত্মীয় মারা গেছে ও দেখতে পারে নাই। ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ইউসুফ আলী জানান, বড় ভাই ফজলুর রহমানের অনুপ্রেণার আমরা দুই ভাই সেনাবাহীনিতে যোগ দেই। সেই পরিবারের সদস্য হয়েও আমার ভাইকে বিনা দোষে ১৬ বছর কারাভোগ করতে হলো।
১৯ তারিখের যে জাজমেন্ট ছিলো সেটাতে আমরা খুশি। আমাদের ভাইকে ফিরে পেয়েছি। তবে ভাইয়ের চাকরি নাই। এখন অসুস্থ্য। কিভাবে তার সংসার চলবে তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা আছে। সরকারের কাছে তার চাকুরী ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানাই। স্থানীয় আনিচুর রহমান ও তাসলিমা খাতুন জানান, ১৬ বছর এই পরিবারের উপর দিয়ে অনেক দুঃখ কষ্ট গেছে। এখন ফজলুর ভাই ফিরে আসলেও রোগে শোকে আক্রান্ত।
তার চিকিৎসা দরকার। সরকারকে তার চিকিৎসা এবং পূনর্বাসন করতে হবে। বিডিআর সদস্য ফজলুর রহমান বলেন, এ মামলার সাথে কোন সংশ্লিষ্ঠতা ছিলো না বলে মুক্ত হয়েছি। ১৬ বছরে বাবা- মা, বোন মারা গেছেন,২ ফুফু মারা গেছেন, জ্যাঠা-মামাসহ ৯ জন নিকট আত্মীয় মারা গেছেন তাদেরও দেখতে পারি নাই। তাদের তো আর ফিরে পাবো না। তাদের না দেখার কষ্ট নিয়েই থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমার চাকুরীটাই ছিলো একমাত্র সম্বল। এখন তো চাকুরীটাও নেই। সরকারের কাছে দাবী আমাদের পূনর্বাসন করুক। সরকার চাইলে এটা করতে পারে। পূনর্বাসন করা হলে আমার আর চাওয়ার কিছু নাই।