পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে জোট বেঁধেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি?

- আপডেট সময় : ০৭:৩৮:০৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
- / ৬২ বার পড়া হয়েছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া একাধিক সমন্বিত হামলা নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) ও তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি) এর মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে। একদিকে বিএলএ একটি ধর্মনিরপেক্ষ জাতীয়তাবাদী সংগঠন, যার লক্ষ্য পাকিস্তান থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা।
অন্যদিকে, টিটিপি শারিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে। এমন ভিন্ন আদর্শের দুটি সংগঠন কি সত্যিই একে অপরের সঙ্গে জোট বাঁধতে পারে, নাকি এর নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে। এই প্রশ্ন বর্তমানে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এর এক প্রতিবেদনে এসব কথা জানা গেছে।
২৬ আগস্টেই কেন সহিংসতা?
আলোড়ন সৃষ্টিকারী হামলা
সম্প্রতি বেলুচিস্তানে সহিংসতা এমন কিছু এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা আগে তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল। ২৬ আগস্ট মুসাখাইলে সংঘটিত একটি হামলা বিশেষভাবে উদ্বেগজনক ছিল, যেখানে বাসযাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখে পাঞ্জাবি যাত্রীদের গুলি করে হত্যা করা হয়। এটি ছিল মুসাখাইল জেলায় কোনও বেলুচ সংগঠনের প্রথম বড় ধরনের হামলা। একইদিনে লাসবেলায় বিএলএ একটি আত্মঘাতী হামলা চালায়, যেখানে আত্মঘাতী বোমারু ছিলেন তুরবাত বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন নারী আইন শিক্ষার্থী।
এ ধরনের হামলার জটিলতা ও ব্যাপকতা জনমনে প্রশ্ন তুলেছে যে কীভাবে বিএলএ এত বড় আকারে হামলা চালাতে সক্ষম হলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০২১ সালে আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই বেলুচিস্তানে সহিংসতা বেড়েছে। ২৬ আগস্টের হামলার পর পাকিস্তান সরকার ও সামরিক বাহিনী চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য শত্রুপক্ষকে দায়ী করেছে।
বেলুচ যোদ্ধাদের ফাইল ছবি: এক্স
বেলুচ যুবকদের বিদ্রোহে যোগদান
বেলুচিস্তানে সহিংসতার বৃদ্ধি কিছুটা হলেও প্রদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির সঙ্গে যুক্ত। ২০১৮ সালের পর থেকে বেলুচিস্তানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা দ্রুত ভেঙে পড়েছে। বিশেষ করে বেলুচিস্তান আওয়ামী পার্টির (বিএপি) উদ্ভব প্রদেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করেছে। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি প্রদেশের শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে, যা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জন্য একটি উর্বর মাটি হিসেবে কাজ করছে।
রাষ্ট্রের কঠোর পদক্ষেপ, বিশেষ করে কথিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বেলুচ যুবকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়িয়েছে। ২০২০ সালে হায়াত বেলুচ নামে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে তার বাবা-মায়ের সামনে হত্যা করা হয়। এর পাশাপাশি, ৪ বছর বয়সী ব্রামশ বেলুচ, যার মা একটি মৃত্যু দলের হাতে মারা যান, এই ঘটনারও ক্ষোভ তৈরি করেছে।
সম্প্রতি, বেলুচিস্তানে ব্যাপক প্রতিবাদের সূত্রপাত ঘটে, যখন বেলুচ মোলা বখশ নামে একজনকে সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগ (সিটিডি) এর হেফাজতে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এছাড়া, ইসলামাবাদে বেলুচ নারী প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ আরও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
সরকারের বক্তব্য
সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, বিএলএ এর সাম্প্রতিক হামলাগুলোর পেছনে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হাত রয়েছে, বিশেষ করে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর। এছাড়া, আফগানিস্তানে তালেবান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে নতুন ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিও সহিংসতার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বলেছেন, এই হামলাগুলোর লক্ষ্য ছিল চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর এবং অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকে ব্যাহত করা। সরকারের আরও দাবি, টিটিপি ও বিএলএ এর মধ্যে মিত্রতা গড়ে উঠেছে এবং এই সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তান থেকে আমেরিকার অস্ত্রের সহায়তায় শক্তি বৃদ্ধি করছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, টিটিপি ও বিএলএ এর আদর্শগত পার্থক্য থাকলেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের মধ্যে কিছু কার্যকরী সহযোগিতা হতে পারে।
মিত্রতা নাকি কৌশলগত সমঝোতা?
বেলুচিস্তানে সহিংসতার পেছনে বহিরাগত সংগঠনগুলোর হাত রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে বহুবার। সরকার মনে করে, বিএলএ সম্প্রতি টিটিপির সঙ্গে জোট গঠন করেছে এবং আফগানিস্তান থেকে প্রাপ্ত আধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করছে। তবে, বিএলএ ও টিটিপির রাজনৈতিক ও আদর্শগত পার্থক্য স্পষ্ট। বিএলএ বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে, যেখানে টিটিপি শারিয়া আইন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে।
কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এ ধরনের দুটি ভিন্ন আদর্শিক সংগঠনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী মিত্রতার সম্ভাবনা কম। ইসলামাবাদভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুহাম্মদ আমির রানা বলেন, তাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক ভিন্নতা এতটাই প্রকট যে তাদের মধ্যে গভীর সহযোগিতার কোনও প্রমাণ নেই। তবে, তিনি স্বীকার করেন যে অস্ত্র আদান-প্রদান বা কৌশলগত সহযোগিতা থাকতে পারে।