বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ঈদের একদিনের ছুটি শেষে মেট্রোরেল চলাচল শুরু ড. ইউনূসকে শেহবাজের ফোন, পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার প্রয়াত সাংবাদিকদের স্মরণে পটুয়াখালী জেলা রিপোর্টার্স ক্লাবে দোয়া ও ইফতার ভাঙ্গায় দরিদ্র ও অসহায় পরিবারের মাঝে বিনামূল্যে ছাগল বিতরণ ময়মনসিংহে ৫২ ঘন্টায় সাজিত হত্যাকাণ্ডের মুলহোতা মন্টি গ্রেফতার গাজীপুরে ৫ জনকে আটক করে ৩ জনকে ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা ও ২ জনকে ননএফআইআর চরভদ্রাসনে আব্দুল করিম কল্যাণ ট্রাস্টের উদ্যোগে নগদ অর্থ বিতরণ ভাঙ্গায় হত্যা মামলা দিয়ে হয়রানির প্রতিবাদে এলাকাবাসীর মানববন্ধন, হৃদরোগে মৃত্যুর অভিযোগ দৈনিক প্রলয় প্রত্রিকার উদ্যোগে ময়মনসিংহে আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত

ঋতুরাজ বসন্তে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে পলাশ শিমুল

মামুন হোসেন, পাবনা সংবাদদাতা

ঋতুরাজ বসন্তে প্রকৃতি সেজে উঠেছে আপন রূপ, রং আর বৈচিত্রে। গাছে গাছে সোভা পাচ্ছে পলাশ আর শিমুল। প্রকৃতি যেন জানান দিচ্ছে ঋতু রাজ বসন্তের। আর সেই বসন্তের সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে গ্রামের পথে-প্রান্তরে। যেন উদাসী মনে আকাশ পানে চেয়ে আছে সদ্য ফোটা শিমুলের দল। বাংলা সাহিত্যে পাতায়ও স্থান পেয়েছে শিমুলের রক্তরাঙা ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য। এছাড়াও কিংবদন্তি সংগীতশিল্পী তপন চৌধুরীর গানেও ফুটে উঠেছে পলাশ শিমুল নিয়ে বিখ্যাত গান। পলাশ ফুটেছে শিমুল ফুটেছে, এসেছে দারুন মাস, আমি জেনি গেছি তুমি, আসিবেনা ফিরে মিটিবেনা পিয়াস।

বসন্তের রুক্ষতায় যখন পাতাশূন্য হচ্ছে প্রকৃতি, ঠিক তখনি মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে পলাশ ও শিমুল ফুল। গ্রামীণ আবহে হরহামেশাই রাস্তের ধারে দেখা মিলে গাছ দুইটির। কিন্তু কংক্রিটের শহরে গাছ দুইটির দেখা মেলা কষ্টসাধ্য বটে। তবে কালের পরিক্রমায় এখন গ্রামীণ আবহ থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে এ গাছগুলো।

জানা যায়, চলনবিল অধ্যুষিত চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া অঞ্চল সহ পাবনার বিভিন্ন গ্রাম-গ্রঞ্জের রাস্তার পাশে শিমুল ফুলের সৌন্দর্য এখন প্রকৃতি প্রেমীদের নজর কাড়ছে। রক্ত শিমুল আর তপ্ত পলাশের ফাগুন হাওয়ার পরশ লেগেছে প্রকৃতিতে। এ যেন সবুজের রাজ্য রক্তিম আভার শাসন। আগুন লাগা পলাশের কাছে বিদায়ের গল্প বলছে ঝড়া পাতা। পাখির কলতান আরও মধুর করে তুলছে ঋতু রাজের অস্তিত্বকে। সেই সঙ্গে পাখ- পাখালি আর মৌমাছিদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত দৃশ্য পথচারীদের মুগ্ধ করছে। কিন্তু কালের পরিক্রমায় অপরূপ সাজে সজ্জিত শিমুল গাছ ও পলাশ ফুল এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে।

তবে জেলার বিভিন্ন সড়কে দেখা মেলে, নতুন কুঁড়ি ও ফুলে শিমুল গাছ রঙিন হয়ে উঠার দৃশ্য। শীতের রুক্ষতা কাটিয়ে প্রকৃতি ফিরে পেতে চলছে ফুল, ফল ও সবুজের এক অপরূপ সমারোহে। যা বার্তা ছড়াচ্ছে বসন্তের। ককিল সহ নানা প্রজাতির পাখিরা তার মিষ্টি কুহুতানে মাতাল করতে আসছে ঋতুরাজ বসন্তের সবুজ-শ্যামল বাংলায়। ফাগুনের আলতো বাতাসের দোল লাগতেই গাছ থেকে ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়ে রাশি রাশি শুকনো পাতা। হালকা দমকা হাওয়ায় কিছুটা ঘূর্ণিপাকে নিচে পড়ার দৃশ্য দেখে অনেকের মনই উদাস হয়। শীত শেষে ফাগুনের এই দিনে গাছের ঝরাপাতা এখনো ঝরছে। আর কিছুদিন পর এসব ডালে ডালে নতুন পাতায় ছেয়ে যাবে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাটমোহর উপজেলার, নিমাইচড়া, হান্ডিয়াল, ছাইকোলা, বিলচলন, গুনাইগাছা, মূলগ্রাম, পার্শ্বডাঙ্গা সহ ভাঙ্গুড়া উপজেলার পার-ভাঙ্গুড়া, মন্ডতোষ, অষ্টমনিষা ইউনিয়নে গাঁয়ের পথের ধারে অযত্নে-অবহেলায় ফুটে আছে পলাশ ও শিমুল ফুল। লাল রক্তরাঙা ফুলের সৌন্দর্যে নজর কারছে পথচারীদের।

কথা হয় ভাঙ্গুড়া পৌর সদরের কৃষক সুজন আলীর সাথে তিনি জানান, তার বাড়ির কয়েকটি শিমুলগাছ থেকে যে পরিমাণ তুলা পান তিনি। তা প্রতিবছর বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হন তিনি। এছাড়াও প্রতিদিন গাছের লাল শিমুল ফুল ও বিভিন্ন প্রজাতির পাখি দেখতে গাছতলায় প্রকৃতি প্রেমী মানুষেরা ভিড় করেন বলে জানান তিনি।

কথা হয় অষ্টমনিষা এলাকার মাসুম’র সাথে তিনি জানান, একসময় শিমুল গাছ গ্রামীন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতো। তিনি জানান, একসময় গ্রামের মানুষেরা শিমুলের তুলা সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করতো, কেউ বা আবার নিজের গাছের তুলা দিয়ে লেপ, তোশক, বালিশ তৈরি করতো। এছাড়াও অনেকে শিমুল তুলা বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকতো বলে জানান তিনি।

চাটমোহর উপজেলার কাওসার নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, গ্রামাঞ্চলে শিমুল গাছ একটি ঐষধি গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল। গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা কোষ্ঠকাঠিন্য সহ বিভিন্ন রোগ নিরাময়ে গাছের মূল ব্যবহার করতো। কিন্তু নানা কারণে এখন আর শিমুল গাছ দেখা যায় না বলে জানান তিনি।

হান্ডিয়াল মুনিয়াদিঘী কারিগরি কৃষি কলেজের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রফিকুল ইসলাম রনি বলেন, বর্তমানে প্রকৃতিতে দূর্লভ হয়ে উঠেছে পলাশ ফুলের গাছ। তিনি জানান, নতুন প্রজন্মের অনেকেই পলাশ ফুলের সাথে এখন পরিচিত নয়। ঋতুরাজ বসন্তকে মনে করে দেওয়ার জন্য একটি পলাশ গাছই প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য যথেষ্ঠ। তবে বসন্তের জন্য উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই গাছ লাগানো দরকার বলে তিনি মনে করেন।

কথা হয় হান্ডিয়াল ইউনিয়নের তুলা ব্যবসায়ী ছানু খন্দকারের সাথে তিনি জানান, শিমুল তুলা স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় আগে বাজারে শিমুল তুলার ব্যাপক চাহিদা ছিল। তবে বর্তমানে শিমুল তুলার উৎপাদন কম ও অন্যান্য তুলার চেয়ে বাজারে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ এখন জুট তুলার উপর নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন জাহান বলেন, শিমুল ও পলাশ গাছ আমাদের প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ। এই গাছগুলো একদিকে যেমন চারপাশের পরিবেশ সুন্দর করে তুলে। অপরদিকে এ গাছের বৃক্ষরোপন বৃদ্ধি করা গেলে প্রকৃতিতে আরও সৌন্দর্য বাড়ানো সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত । দৈনিক প্রলয়