বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:৫৬ পূর্বাহ্ন
আশিক হোসেন, বদলগাছী
নাক ফজলি আমের আতুড়ঘর নওগাঁর বদলগাছী উপজেলায় প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে মধুমাসে ফাল্গুনের প্রকৃতি। বাতাসে ভাসছে আমের মুকুলের গন্ধ। ফুলে ফুলে মধু সংগ্রহ করতে বিচরণ করছে মৌমাছি। যে গন্ধ বিমোহিত করছে প্রকৃতি প্রেমী মনকে। উপজেলা জুড়ে আম বাগানের সারি সারি গাছে ছেয়ে গেছে মুকুল। তবে চলতি মৌসুমে আমের ফলন নির্ভর করছে পরবর্তী সময়ের আবহাওয়ার ওপর। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন বদলগাছী উপজেলার আম বাগান মালিকরা।
মৌসুমের শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুকুলে ভরে গেছে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে লাগানো বাগানসহ আশপাশের বাড়ির গাছগুলোতে। তবে বড় আকারের চেয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের গাছ গুলোতে বেশি মুকুল ফুটেছে। সেই মুকুলের মৌ মৌ গন্ধে বাগান মালিকদের চোখে ভাসছে সফলতার স্বপ্ন। স্বাদে গুণে ভরপুর বিখ্যাত স্থানীয় জাত নাক ফজলী ও দেশি আমের পাশাপাশি ফজলী, আম্রপালি, গৌড়মতি, হাড়িভাঙ্গা, গোপালভোগ, ল্যাংড়াসহ বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে লাগানো বারি-৪, বারি-১০, বারি-১১, কাটিমণ, ব্যানানা ম্যাংগো জাতের আম অন্যতম।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আম গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। মুকুলের ভারে নুয়ে পড়ার উপক্রম যেন প্রতিটি আমগাছে। সেই সুবাদে মৌমাছিরাও আসতে শুরু করেছে মধু আহরণে। রঙিন-বন ফুলের সমারোহে প্রকৃতি যেমন সেজেছে বর্ণিল সাজে, তেমনি নতুন সাজে যেন সেজেছে আম বাগানগুলো। আমের মুকুলে ভরপুর আর ঘ্রাণে, বদলগাছী উপজেলার সর্বত্র জানান দিচ্ছে বসন্তের বার্তা।
প্রায় শতভাগ গাছেই এসেছে মুকুল। কোনো কোনো গাছে আমের মুকুল থেকে বেরিয়েছে ছোট ছোট আমের গুটি। ৩ রা মার্চ সোমবার সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, উপজেলার মথুরাপুর ইউপির জাবারীপুর, নালুকাবাড়ি, চাঁপাইনগর, থুপশহর, চকজালাল, লক্ষীকোলসহ আধাইপুর ইউপির চকআলম, শ্রীকৃষ্ণপুর, রসূলপুর, বালুভরা ইউপির প্রধানকুন্ডি, বারাতৈল, পালশা, মহদীপুর গ্রামগুলোতে মুকুলে ছেয়ে গেছে। হলুদ বর্ণের মুকুল সূর্যের সোনালী আলোয় যেনো অপরূপ রঙ ছড়াচ্ছে। কৃষিতে আগ্রহী বাগান মালিক ও আমচাষীরা আশা করছেন বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ উপজেলায় আমের বাম্পার ফলন হবে। আমচাষী ও বাগান মালিকরা বাগানে পরিচর্যা নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। অবশ্য গাছে মুকুল আসার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করে আসছেন তারা। যাতে করে গাছে মুকুল বা গুটি বাঁধার সময় কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়।
রাস্তার দুই পাশে সারিবদ্ধ গাছে ভরপুর আমের মুকুল যেন শোভা ছড়াচ্ছে তার নিজস্ব মহিমায়। উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের চাঁপাইনগর গ্রামের আম বাগান মালিক শেখ ফরিদ বলেন, বাগানের অধিকাংশ গাছে এরই মধ্যে মুকুলে ছেয়ে গেছে। এবার আবহাওয়া ভালো থাকায় মুকুল ভালোভাবে প্রস্ফুটিত হয়েছে। আমের ভালো ফলন পেতে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সানোয়ার হোসেনের পরামর্শে ছত্রাকনাশক প্রয়োগসহ বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাবাব ফারহান জানান, উপজেলায় আম আবাদকৃত জমি রয়েছে প্রায় ৫’শ ৩০ হেক্টর। বানিজ্যিক বাগানের সংখ্যা রয়েছে ২৫০ টি। এই উপজেলায় বিরাজমান আবহাওয়া ও মাটি আম চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। তার কারণে এখন শুধু আম বাগানেই নয়, বরং প্রতিটি বাড়িতে হচ্ছে আমের ফলন। মাঠ পর্যায়ে আম চাষীদের সঠিক পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষি অফিস সর্বদা কাজ করছে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূল থাকায় আমের উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ার আশা করা যাচ্ছে।