রোহিঙ্গা নাগরিকদের সঙ্গে ঐতিহাসিক ইফতার করলেন ড. ইউনূস ও গুতেরেস

- আপডেট সময় : ০৮:০৮:৪৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫
- / ১০৬ বার পড়া হয়েছে
শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া সংবাদদাতা
কক্সবাজার জেলার উখিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শণে গিয়ে প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে ইফতার করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। যা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানই নয়, বরং বিশ্বজুড়ে রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি সংহতি এবং মানবিক সহানুভূতির এক বড় বার্তা প্রদান করে।
শুক্রবার (১৪ মার্চ) অনুষ্ঠিত এই ইফতার আয়োজনটি আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে, যা রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগের প্রতি সচেতনতা তৈরি এবং তাদের মানবাধিকার সংরক্ষণে আরও কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানায়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুক্রবার দুপুর ১২টা ৪৮ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দরে পৌঁছান। তাদের স্বাগত জানাতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। বিমানবন্দরে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের উদ্দেশে রওনা দেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বেলা ২টা ১২ মিনিটে উখিয়ার ১৮ নম্বর ক্যাম্পে পৌঁছান। সেখানে তিনি প্রথমে লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন, যেখানে তিনি রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান এবং তাদের শিক্ষা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান। তিনি তাদের ভবিষ্যত এবং তাদের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সম্পর্কে আলোচনা করেন। এরপর, তিনি রোহিঙ্গা সাংস্কৃতিক স্মৃতিকেন্দ্র পরিদর্শন করেন, যেখানে রোহিঙ্গা জনগণের সাংস্কৃতিক জীবন এবং তাদের সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ পান। সেখানে রোহিঙ্গা শিশুদের সঙ্গে ছবিও তোলেন, যা রোহিঙ্গাদের প্রতি তার সহানুভূতির একটি প্রতীক হয়ে থাকবে।
এরপর, জাতিসংঘ মহাসচিব উখিয়া শরণার্থী শিবিরের এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিকের সঙ্গে ইফতার করেন। অনুষ্ঠানে ৩৩টি ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লক থেকে ৭০ জন রোহিঙ্গা অংশ নেন। এই ইফতার আয়োজনের মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা পৌঁছান—রোহিঙ্গা জনগণের মানবিক বিপর্যয়ের দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং তাদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করা। ইফতারের এই বিশেষ আয়োজন শুধুমাত্র এক ধর্মীয় অনুশীলন ছিল না, বরং এটি ছিল জাতিসংঘ মহাসচিবের আন্তর্জাতিক মঞ্চে রোহিঙ্গাদের অধিকারের পক্ষে একটি দৃঢ় অবস্থান।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস এই সফরের মাধ্যমে শুধু রোহিঙ্গা জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেননি, বরং তিনি বিশ্বের সকল দেশের কাছে রোহিঙ্গা জনগণের মানবাধিকার রক্ষার এবং তাদের নিরাপদ ও সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, এই দুর্ভোগের মুখে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের মানবিক দায়িত্ব। আমরা তাদের পাশে আছি, তাদের সংকটের সমাধান করতে এবং তাদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করছি। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এটি কেবল রোহিঙ্গা সংকটের আলোকে আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে, বরং রোহিঙ্গাদের অবস্থা সম্পর্কে একটি স্পষ্ট বার্তা প্রদান করেছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের সরকারের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং রোহিঙ্গাদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের পথ সুগম করতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সহযোগিতা ও সহায়তার প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর রোহিঙ্গা জনগণের দুর্ভোগের প্রতি বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে রোহিঙ্গাদের জন্য আরও সহায়তার এবং তাদের নিরাপদ, সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। এই সফর রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের একটি সুস্পষ্ট প্রতীক হয়ে থাকবে। জাতিসংঘ মহাসচিবের কক্সবাজার সফর এবং ইফতার অনুষ্ঠানটি নিঃসন্দেহে রোহিঙ্গা জনগণের জন্য এক নতুন আশার সঞ্চার করেছে, যা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও মনোযোগ ও সহায়তার প্রেরণা যোগাবে।