রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ০৬:০১ পূর্বাহ্ন
আলি হায়দার, কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা
শেখ মাহমুদুল হাসান আশরাফী জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলেটি এক সময় বিশ্ব করবে কে জানতো?
বলছি, কিশোরগঞ্জ জেলার অষ্টগ্রাম উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত বালুচর গ্রামের ইনামুল হোসাইন বড় ছেলে জন্ম থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হাফেজ ক্বারি শেখ মাহমুদুল হাসান আশরাফী কথা। তিন ভাই বোনের মধ্যে তিনিই বড়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হয়েও হাফেজ হওয়া অতঃপর দেশ সেরা পরবর্তীতে বিশ্বের বিভিন্ন কোরআন প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে বিশ্ব জয়ের গল্পটা এত সহজ ছিলো না ক্বারি শেখ মাহমুদুল হাসানের।
মাহমুদুল হাসানের ছোট বোন জামাই ও বাবার সহযোগিতা সে লেখাপড়া শুরু করেন ঐতিহ্যবাহী বালুচর হাফিজিয়া মাদ্রাসায়। সে সময় তার ছোট বোন জামাই একটা একটা আয়াত করে পড়ে শুনাতো, আর আশরাফী জপে জপে তা মুখস্থ করতো। এভাবেই তার পড়ালেখার হাতেখড়ি। তখনও কে জানতো না, এ ছেলেটা একদিন বিশ্ব জয় করবে। তিনি ২০১৯ সালে দেশের একটি টেলিভিশনে প্রচারিত ‘আলোকিত কোরআন’ প্রতিযোগিতায় প্রথমে চ্যাম্পিয়ন হন, এরপর আরও একটি টেলিভিশনে তৃতীয় স্থান অর্জন করেন। এরপর তাকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। বাংলাদেশের পাশাপাশি তিনি ভারত, ইরান, লিবিয়া এবং অস্ট্রিয়ায় বিভিন্ন কোরআন প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণ করে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা শান্তিধারা এলাকার মারকাযুল মদিনা আল লতিফি আল ইসলামি মাদরাসায় পড়ছেন। তার বাবা ইনামুল হোসাইনও কোরআনের হাফেজ।
ক্বারি শেখ মাহমুদুল হাসান আশরাফী বর্তমানে মালদ্বীপে তারবির নামাজের ইমামতি করছেন। সম্প্রতি ইরানের কোরআন প্রতিযোগিতায় জয়ী হয়ে দেশের ভাবমূর্তিকে এক গৌরবোজ্জ্বল মহিমায় নিয়ে গেছেন তিনি। ইরানে শ্রেষ্ঠত্বের পর মালদ্বীপের ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে সেখানে তারাবির নামাজের ইমামতির পবিত্র দায়িত্ব পান তিনি।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি মালদ্বীপের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণের পর, ২৪ ফেব্রুয়ারি তিনি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মালদ্বীপের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। রমজানের পুরো মাসজুড়ে তার মধুর কণ্ঠের হৃদয়গ্রাহী তিলাওয়াত মালদ্বীপবাসীর অন্তরে কোরআনের সুর ও সৌন্দর্যের অনন্য আবেদন ছড়িয়ে যাবেন।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এই হাফেজ মালদ্বীপের হুলহুমালে সিটির মসজিদ আল–ওয়ালিদাইনে এই মর্যাদাপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের কোরআন চর্চার গৌরব আরও উজ্জ্বল করে তুলবে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী বলেন, আমাদের এই প্রত্যন্ত একটা গ্রামের ছেলে, যে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এমন একটা ছেলে বিদেশ থেকে এত এত পুরষ্কার আনতেছে, এটা আমাদের গর্বের শেষ নেই। তারা বলেন, এটা শুধু আমাদের গ্রামের না, পুরো কিশোরগঞ্জ ততা পুরো বাংলাদেশের জন্য গর্বের বিষয়।
মাহমুদুল হাসানের আশরাফীর বড় চাচা আব্দুর রহিম সেলিম বলেন, তার জীবনটাই অনেক সংগ্রামের সেটা বলতে গেলে অনেক লম্বা ঘটনা। তার বাবা তার জন্য অনেক মেহনত করেছেন। সে আমাদের এ গ্রামের মাদ্রাসা থেকে হাফেজ হয়েছেন। তার বাবাও একজন হাফেজ। আসলে আমাদের পরিবারটাই হাফেজ এবং আলেমের বংশধর। আমার আব্বা (আশরাফীর দাদা) ছিলেন একজন হাফেজ, তার বাবা (মাহমুদুল হাসানের দাদার বাবা) ছিলেন একজন ভালো মানের ক্বারি।
রোজা ও ঈদ শেষে আগামী ৬ এপ্রিল দেশে ফেরার কথা রয়েছে হাফেজ শেখ মাহমুদুল হাসান আশরাফী।
মুঠোফোনে কথা হলে হাফেজ মাহমুদুল হাসান আশরাফী মালদ্বীপ থেকে বলেন, আমি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে বর্তমানে মালদ্বীপের হুলহুমালে সিটির আল-ওয়ালিদাইন মসজিদে তারাবির নামাজে ইমামতি দ্বায়িত্ব পালন করছি।
তিনি বলেন, আমি এ সু-মহান দায়িত্ব পালন করতে পেরে আমি অনেক আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত। আলহামদুলিল্লাহ আমি মনে করি এটা আমার জন্য, বাংলাদশের জন্য এবং বাংলাদেশের কোরআনিক প্লাটফর্ম যারা কাজ করে তাদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
তবে তিনি একটু অভিযোগ করেই বলেন, বহির্বিশ্বের আমাদেরকে যেভাবে মূল্যায়ন করা হয়, নিজ দেশে আমাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এসময় রাষ্ট্রীয় ভাবে যেনো তাদের মূল্যায়ন করা হয় এ আহবান জানান।