কথা হয় খেলা দেখতে আসা জামিনুলের সাথে তিনি জানান, আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির অংশ এই লাঠি খেলা। এই খেলাটি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী যুদ্ধকৌশল ভিত্তিক খেলা। তিনি জানান, একসময় আত্মরক্ষার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতো এই খেলাটি। বিশেষ করে বীর বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামে লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজ গ্রামে নয় খেলাটি ছড়িয়ে পড়ুক সারাদেশে এমন প্রত্যাশাই তার।
খেলা দেখতে আসা মাহমুদা খাতুনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, অনেকদিন পর খেলাটি দেখে খুব ভালো লেগেছে। তিনি জানান, কালের আবর্তে এই খেলাটি হারিয়ে গেলেও বর্তমানে গ্রামবাংলার লোকজও মেলা, ঈদ এবং পূজা-পার্বণ সহ বিভিন্ন উৎসবে এই খেলাটি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এই খেলাটি গ্রাম বাংলার লোকসংস্কৃতি থেকে এখন অনেকটাই হারিয়ে যাওয়ায় পথে।
খেলা দেখতে আসা হাফিজুর রহমান নামের একজন জানান, প্রায় বছরই ঈদে তাদের গ্রামে এই খেলাটি হয়ে থাকে। তাদের এলাকার যুব সমাজকে মাদক ও মোবাইল ফোনের আসক্ত থেকে মুক্ত রাখতে এলাকাবাসী নিজ উদ্যােগে এই খেলার আয়োজন করে। তাই গ্রামে ঈদ আনন্দ বাড়াতে প্রতিবছরই এমন খেলা আয়োজনের দাবি তার।
কথা হয় আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য সরোয়ার হোসেনের সঙ্গে তিনি জানান, গ্রাম বা শহর সব জায়গাতেই এখন তরুণ প্রজন্ম সোসাল মিডিয়ার উপর নির্ভর। তারা আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে না। তাই যুব সমাজের মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ এবং তরুণ প্রজন্মের মাঝে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা ও সংস্কৃতি তুলে ধরতেই এমন আয়োজন। ভবিষ্যৎতে গ্রাম-বাসীকে সাথে নিয়ে আরও বৃহৎ পরিসরে এ আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
হান্ডিয়াল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এফ এম ছহির উদ্দিন স্বপন’র সাথে কথা হলে তিনি জানান, ঢাক-ঢোলা আর কাঁসার ঘন্টার তালে তালে চলছে লাঠির কসরত। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পরেন লাঠিয়ালরা। তাতে উৎসাহ দিচ্ছেন শত শত দর্শক। আবহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই আয়োজনকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে ছিল উৎসবের আমেজ। দেখে মনে হবে আবার যেন ফিরে এসেছে সেই বাংলার চিরচেনা রুপ। তিনি জানান, যুব সমাজকে মাদক থেকে দূরে রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে এই লাঠি খেলা। তাই নিয়মিত এ ধরনের খেলাধুলা আয়োজনের দাবি জানান তিনি।
কথা হয় চাটমোহর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুর রহিম’র সাথে তিনি জানান, বর্তমান সমাজ থেকে অন্যায় অপরাধ দূর করতে ও হারানো ঐতিহ্য ধরে রাখতে ভূমিকা রাখতে পারে এই লাঠি খেলা। তিনি জানান, বিপথগামী যুব সমাজের মাদকাসক্ততা ও সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে লাঠি খেলার মত আয়োজন পথ দেখাবে, যুক্ত করবে সম্প্রীতির বাঁধনে। নিয়মিত এ আয়োজনের জন্য পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান তিনি।
এবিষয়ে পাবনা-৩ সাবেক সংসদ সদস্য কে এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এই খেলাকে আজও টিকিয়ে রেখেছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। তিনি জানান, চলনবিল অধ্যুষিত এই প্রত্যান্ত এলাকায় এমন আয়োজন সত্যিই প্রসংসনীয়। তবে এই গ্রামীন ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলাকে টিকে রাখতে নিয়মিত এমন আয়োজন ও লাঠিয়াল বাহিনীদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে খেলাটি আবারও নবরূপে ফিরে আসবে বলে জানান তিনি।
পরে খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরুস্কার বিতরণ করা হয়। গ্রামীন ঐতিহ্য থেকে হারিয়ে যাওয়া এই ঐতিহ্যকে বাঁচাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এলাকার সচেতন মহল।