ঢাকা ০৫:০২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জিয়াউর রহমান এক দূরদর্শী নেতা ও দেশ গঠনের রূপকার: মোহাম্মদ মাসুদ ভালুকায় ইয়াবাসহ ৪ মাদক কারবারি গ্রেফতার রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি বছরই ৩টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন: প্রধান উপদেষ্টা এদেশে সবার অধিকার সমান, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ থাকবে না: সেনাপ্রধান ইসলামী জোটে নির্বাচনে অংশ নেবে খেলাফত আন্দোলন জামায়াত ও এনসিপির মতো কিছু গোষ্ঠী চায় না দেশে নির্বাচন হোক: দুলু কারচুপি প্রতিহতের প্রস্তুতি নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ত্রিশালে জমকালো আয়োজনে ক্রিকেট ফাইনাল খেলায় চ্যাম্পিয়ন ‘জুনিয়র টাইগার’ দুর্গাপুরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে আনন্দ র‌্যালি চাঁদাবাজদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

তরমুজের স্বর্গরাজ্য নাজিরপুরের ভাসমান বাজার

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৮:৩০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  • / ৭০ বার পড়া হয়েছে

জালিস মাহমুদ, পিরোজপুর সংবাদদাতা

অনেকেই নাম শুনেছে অধবা স্বচক্ষে দেখেছেন থাইল্যান্ড বা কেরালার ফ্লোটিং মার্কেট যেখানে সবকিছু বিক্রি হয় পানির উপরে ভাসমান নৌকায়। এধরণের একটি ভাসমান বাজার রয়েছে বাংলাদেশে যেখানে চা-পান থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, সবজিসহ সব কিছুই বিক্রি হয় এ বাজারে।

এই মনোরম দৃশ্য দেখা যায় দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের ‘ বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে।’ ভৌগোলিকভাবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পুরোটাই নদী আর খালবেষ্টিত। পানির উপর ভাসমানভাবে সবজি ও সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা। কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য কেনাবেচার জন্য পাকিস্তান আমলে বৈঠাকাটা বাজারের সূত্রপাত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত অপূর্ব এই ভাসমান বাজারটি তিনটি জেলার (পিরোজপুর, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ) সংযোগস্থলে নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বেলুয়া নদীতে অবস্থিত। বৈঠাকাটা বাজার ও বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। এই নদীতে প্রায় ৭০ বছর ধরে ভাসমান তরমুজের হাট বসছে। মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত চলে এ বেচাকেনা। ঢাকা, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, উত্তরাঞ্চল, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় ব্যবসায়ী এই হাটে তরমুজ কিনতে আসেন।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে ভালো দাম পান। এই ভাসমান বাজারটি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বসে। আগের দিন রাত থেকেই খাল বেয়ে চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ডিঙি নৌকা বা ট্রলারে করে ভিড়তে থাকেন নাজিরপুরে। সকাল সাড়ে ৫টার মধ্যেই সরগরম হয়ে ওঠে বাজার। অন্যান্য বাজারের মতো এখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউই পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে আসেন না এখানে। সবাই আসেন নৌকা বা ট্রলারে করে।

স্বাভাবিক সময়ে ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ বাজার। সরেজমিন দেখা গেছে, বেলুয়া নদীর এ ভাসমান বাজারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০-৫০টি ট্রলার বোঝাই করে তরমুজ নিয়ে আসে ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পটুয়াখালী, চরফ্যাশন, বরগুনার ট্রলার বেশি। অনেক ব্যবসায়ী আবার নিজে না এসে ট্রলার পাঠিয়ে শ্রমিকদের মাধ্যমে তরমুজ বিক্রি করে। স্থানীয় ও বাহির থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে উঠে দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষিতে সরব তরমুজের হাট। দামে বনিবনা হলে ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে আরেক ট্রলারে তোলা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে ছোট নৌকায় তোলে ।

কয়েক কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয় ভাসমান বাজারে। খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে তরমুজের খেত কিনে পাইকারী ধরে ভাসমান বাজারে তরমুজ বিক্রি করতে আসা ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মোতাহার আলী বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ উৎপাদন হয়। তরমুজ সচারাচর বেচাকেনা হয় খেত হিসেবে। প্রতি বিঘা খেতের দাম পড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা শুরু করে ১২-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপর খেত থেকে তরমুজ কেটে পাইকারী বাজারে বিক্রয় করা হয়। পাইকারি বাজারে শত (১০০টি) হিসেবে তরমুজ বিক্রয় করা হয়। তিনি আরও বলেন, এবছর ৫ কোটি টাকা বিক্রি করেছি এ পর্যন্ত আরো খেত বাকি আছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে তরমুজের উৎপাদন ও ব্যবসা ভালো হচ্ছে।

বৈঠাকাটা বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভোলার চরফ্যাশন, পটুয়াখালী, বরগুনার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত তরমুজের খেত কেনেন ব্যবসায়ীরা। এরপর খেত থেকে পাকা তরমুজ ট্রলারে করে বৈঠাকাটাসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। বড় আকারের ১০০টি তরমুজের পাইকারি মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার। মাঝারি আকারের তরমুজ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। ছোট তরমুজ আকার ভেদে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

এই বাজার থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান পার্শবর্তী নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার ব্যবসায়ী ওমর আলী। তিনি জানান, প্রত্যেক বাজারের দিন কয়েক কোটি টাকার তরমুজ কেনাবেচা হয় এখানে। আমিও এবছর এই বাজার থেকে তরমুজ কিনে বিভিন্ন বাজারে পাইকারী বিক্রি করেছি যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। বৈঠাকাটা বাজার কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারটি প্রায় শতবছরের পুরানো।

এ বাজারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাচাঁমাল ট্রালারযোগে আসে এবং ট্রলারেই হাট বসে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও তরমুজের বাজার জমজমাট। তরমুজ শেষের দিকে হলেও বাজারে এখনও অনেক ট্রলারে তরমুজ আসে। এই ভাসমান বাজারে তুলনামূলক খাজনা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেচাকেনায় স্বাচ্ছন্দবোধ করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

তরমুজের স্বর্গরাজ্য নাজিরপুরের ভাসমান বাজার

আপডেট সময় : ০৮:৩০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫

জালিস মাহমুদ, পিরোজপুর সংবাদদাতা

অনেকেই নাম শুনেছে অধবা স্বচক্ষে দেখেছেন থাইল্যান্ড বা কেরালার ফ্লোটিং মার্কেট যেখানে সবকিছু বিক্রি হয় পানির উপরে ভাসমান নৌকায়। এধরণের একটি ভাসমান বাজার রয়েছে বাংলাদেশে যেখানে চা-পান থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, সবজিসহ সব কিছুই বিক্রি হয় এ বাজারে।

এই মনোরম দৃশ্য দেখা যায় দক্ষিণের জেলা পিরোজপুরের ‘ বৈঠাকাটা ভাসমান বাজারে।’ ভৌগোলিকভাবে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার পুরোটাই নদী আর খালবেষ্টিত। পানির উপর ভাসমানভাবে সবজি ও সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত এই এলাকা। কৃষকের উৎপাদিত সবজি ও বিভিন্ন কৃষিজ পণ্য কেনাবেচার জন্য পাকিস্তান আমলে বৈঠাকাটা বাজারের সূত্রপাত।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যমন্ডিত অপূর্ব এই ভাসমান বাজারটি তিনটি জেলার (পিরোজপুর, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ) সংযোগস্থলে নাজিরপুর উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে বেলুয়া নদীতে অবস্থিত। বৈঠাকাটা বাজার ও বেলুয়া মুগারঝোর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে এই নদী। এই নদীতে প্রায় ৭০ বছর ধরে ভাসমান তরমুজের হাট বসছে। মার্চ থেকে শুরু করে এপ্রিল পর্যন্ত চলে এ বেচাকেনা। ঢাকা, খুলনা, যশোর, নরসিংদী, উত্তরাঞ্চল, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের বড় বড় ব্যবসায়ী এই হাটে তরমুজ কিনতে আসেন।

স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছে তরমুজ বিক্রি করে ভালো দাম পান। এই ভাসমান বাজারটি সপ্তাহের শনিবার ও মঙ্গলবার বসে। আগের দিন রাত থেকেই খাল বেয়ে চিতলমারী, মোড়েলগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়াসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার কৃষকরা ডিঙি নৌকা বা ট্রলারে করে ভিড়তে থাকেন নাজিরপুরে। সকাল সাড়ে ৫টার মধ্যেই সরগরম হয়ে ওঠে বাজার। অন্যান্য বাজারের মতো এখানে ক্রেতা-বিক্রেতারা কেউই পায়ে হেঁটে বা গাড়িতে আসেন না এখানে। সবাই আসেন নৌকা বা ট্রলারে করে।

স্বাভাবিক সময়ে ভোর থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে এ বাজার। সরেজমিন দেখা গেছে, বেলুয়া নদীর এ ভাসমান বাজারে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০-৫০টি ট্রলার বোঝাই করে তরমুজ নিয়ে আসে ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে পটুয়াখালী, চরফ্যাশন, বরগুনার ট্রলার বেশি। অনেক ব্যবসায়ী আবার নিজে না এসে ট্রলার পাঠিয়ে শ্রমিকদের মাধ্যমে তরমুজ বিক্রি করে। স্থানীয় ও বাহির থেকে আসা ব্যবসায়ীরা ট্রলারে উঠে দরদাম করছেন। ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষিতে সরব তরমুজের হাট। দামে বনিবনা হলে ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে আরেক ট্রলারে তোলা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও ট্রলার থেকে তরমুজ কিনে ছোট নৌকায় তোলে ।

কয়েক কোটি টাকার তরমুজ বিক্রি হয় ভাসমান বাজারে। খুলনার কয়রা উপজেলা থেকে তরমুজের খেত কিনে পাইকারী ধরে ভাসমান বাজারে তরমুজ বিক্রি করতে আসা ষাটোর্ধ বৃদ্ধ মোতাহার আলী বলেন, উপকূলীয় জেলাগুলোর চরাঞ্চলে প্রচুর তরমুজ উৎপাদন হয়। তরমুজ সচারাচর বেচাকেনা হয় খেত হিসেবে। প্রতি বিঘা খেতের দাম পড়ে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা শুরু করে ১২-২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এরপর খেত থেকে তরমুজ কেটে পাইকারী বাজারে বিক্রয় করা হয়। পাইকারি বাজারে শত (১০০টি) হিসেবে তরমুজ বিক্রয় করা হয়। তিনি আরও বলেন, এবছর ৫ কোটি টাকা বিক্রি করেছি এ পর্যন্ত আরো খেত বাকি আছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারে তরমুজের উৎপাদন ও ব্যবসা ভালো হচ্ছে।

বৈঠাকাটা বাজারের পাইকারী ব্যবসায়ী মো. আলমগীর হোসেন জানান, ভোলার চরফ্যাশন, পটুয়াখালী, বরগুনার বিভিন্ন চরে উৎপাদিত তরমুজের খেত কেনেন ব্যবসায়ীরা। এরপর খেত থেকে পাকা তরমুজ ট্রলারে করে বৈঠাকাটাসহ বিভিন্ন বাজারে নিয়ে বিক্রি করা হয়। বড় আকারের ১০০টি তরমুজের পাইকারি মূল্য ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার। মাঝারি আকারের তরমুজ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। ছোট তরমুজ আকার ভেদে ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

এই বাজার থেকে তরমুজ কিনে নিয়ে যান পার্শবর্তী নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার ব্যবসায়ী ওমর আলী। তিনি জানান, প্রত্যেক বাজারের দিন কয়েক কোটি টাকার তরমুজ কেনাবেচা হয় এখানে। আমিও এবছর এই বাজার থেকে তরমুজ কিনে বিভিন্ন বাজারে পাইকারী বিক্রি করেছি যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। বৈঠাকাটা বাজার কমিটির কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারটি প্রায় শতবছরের পুরানো।

এ বাজারে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে কাচাঁমাল ট্রালারযোগে আসে এবং ট্রলারেই হাট বসে। অন্যান্য বছরের মতো এবারও তরমুজের বাজার জমজমাট। তরমুজ শেষের দিকে হলেও বাজারে এখনও অনেক ট্রলারে তরমুজ আসে। এই ভাসমান বাজারে তুলনামূলক খাজনা কম হওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেচাকেনায় স্বাচ্ছন্দবোধ করে।