ঈদুল আজহা সামনে রেখে কুরবানির পশু প্রস্তুতিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গৃহস্থ ও খামারিরা

- আপডেট সময় : ০৮:১৪:১৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
- / ৮৪ বার পড়া হয়েছে
বগুড়ার শাজাহানপুরে আসন্ন ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের গৃহস্ত ও খামারিরা। দম ফেলারও সময় পাচ্ছেন না তারা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে তাদের ব্যস্ততা। স্থানীয় খামারিরা রিষ্টপুষ্ট গরু-ছাগল বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এবছর গৃহস্থ ও খামারিরা মিলে ৫৭ হাজার ৪শ ৫৩ টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করেছে। যা চাহিদার তুলনায় ১ হাজার ৭৯৩টি বেশি। জানা গেছে, শাজাহানপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে বিভিন্ন স্থানে অল্প পরিসরে গবাদি পশু পালন করছেন গৃহস্থ ও খামারিরা। এছাড়া বাণিজ্যিকভাবে কোরবানির পশু পালন করছে খামারিরা। এসব খামারে কোরবানির জন্য নানান জাতের ষাড়, বলদ, ছাগল ও ভেড়া পালন করা হচ্ছে। আসন্ন কোরবানির ঈদে এসব গরুর-ছাগল কাঙ্খিত মূল্যে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন উদ্যোক্তরা।
বিভিন্ন খামার ঘুরে দেখা গেছে, পবিত্র ঈদুল আযহাকে সামনে রেখে কোরবানির গরু-ছাগলের যত্ন করে দিনপার করেছেন খামারীরা। কাঁচাঘাস ও ভেজালমুক্ত দানাদার গো-খাদ্য দিয়ে পরম যত্নে গবাদি পশুর লালন পালন করছেন তারা। অনেকেই জানান, খোলাবাজারে গো-খাদ্যের দাম বেশী হওয়ায় গবাদি পশু পালনে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। খামারিরা জানান, আর কদিন পরেই পুরোদমে শুরু হবে কোরবানির পশু কেনা-বেচা। তাই আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
যে পরিমাণ দেশি গরু ও ছাগল প্রস্তুত করা হয়েছে এগুলো দিয়েই শাজাহানপুর উপজেলার মানুষের কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। খামারিরা আরও জানান, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে পর্যাপ্ত দেশি জাতের গরু ও ছাগল পালন করা হয়েছে। গরুকে খাবার হিসেবে কাঁচা ঘাস, খৈল, ভুট্টা এবং ধানের কুড়াসহ প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। তবে পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেকটা বেড়েছে। একই সঙ্গে চোরাই পথে যাতে ভারতীয় পশু ঢুকতে না পারে সেদিকে নজর রাখার দাবি জানান তারা। উপজেলার মাঝিড়া ইউনিয়নের সাজাপুর গ্রামের খামারি সুমন হোসেনের ফার্মে গিয়ে দেখা গেছে, পশু পালনে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
তিনি বলেন, আমাদের খামারে কোরবানির জন্য সব দেশি প্রজাতির গরু প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পশুখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় গরু পালনে খরচ অনেক বেড়েছে। গরুগুলোকে প্রতিদিন দুই বেলা প্রাকৃতিক খাদ্য যেমন ভুট্টা, খৈল, কাঁচা ঘাস, গমের ভুসি ও খড় খাওয়ানো হয়। গোসল করানো হয় প্রায় প্রতিদিনই। পশুর থাকার জায়গা পরিষ্কার রাখা হয় প্রতিনিয়ত। এ ছাড়া সার্বক্ষণিক ফ্যান চালিয়ে পরিবেশ ঠিক রাখা হয়। শাজাহানপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানাযায়, খামারি ছাড়াও সাধারণ কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে দুই একটি করে গরু পালন করে থাকেন। কোরবানির সময় তারা তাদের পালন করা পশুগুলো বিক্রি করে ভাল দাম পেয়ে থাকেন।
এবছর শাজাহানপুর উপজেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে ৫৫ হাজার ৬৬০টি। তার বিপরীতে বিভিন্ন খামারি ও প্রান্তিক কৃষক মিলে এবার কৃষক ৫৭ হাজার ৪৫৩টি পশু প্রস্তুত করেছেন। এর মধ্যে ১৯ হাজার ৮৪০টি ষাঁড়, বলদ ৩ হাজার ১২৪টি, গাভী ২ হাজার ১৭৮টি, ছাগল ২৮ হাজার ৯২৬টি, ভেড়া ৩ হাজার ৩৮৫টি প্রস্তুত রয়েছে। উপজেলায় অবস্থিত ২টি স্থায়ী এবং ৯টি অস্থায়ীসহ মোট ১১টি পশুর হাটে কোরবানির পশু কেনা বেচা হবে। এবারে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে খামারিদের প্রস্তুত করা পশু সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
শাজাহানপুর উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ফিরোজ আহমেদ খান বলেন, এবছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি কোরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। গরুকে দানাদার খাদ্য ও কাঁচা ঘাস খাওয়ানোর জন্য খামারিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিটামিন খাওয়াতেও বলা হচ্ছে। তবে গরুকে নিষিদ্ধ কোনো রাসায়নিক ও হরমোন ওষুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষাসহ সুরক্ষায় প্রতিটি হাটে থাকবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের মেডিকেল টিম।প্রাণিসম্পদ বিভাগের মেডিকেল টিম। এ বছর কোরবাণির পশু বিক্রির মাধ্যমে ৩৫০ কোটি টাকা লেনদেন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।