ঢাকা ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
জিয়াউর রহমান এক দূরদর্শী নেতা ও দেশ গঠনের রূপকার: মোহাম্মদ মাসুদ ভালুকায় ইয়াবাসহ ৪ মাদক কারবারি গ্রেফতার রোহিঙ্গা ইস্যুতে চলতি বছরই ৩টি আন্তর্জাতিক সম্মেলন: প্রধান উপদেষ্টা এদেশে সবার অধিকার সমান, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ থাকবে না: সেনাপ্রধান ইসলামী জোটে নির্বাচনে অংশ নেবে খেলাফত আন্দোলন জামায়াত ও এনসিপির মতো কিছু গোষ্ঠী চায় না দেশে নির্বাচন হোক: দুলু কারচুপি প্রতিহতের প্রস্তুতি নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ত্রিশালে জমকালো আয়োজনে ক্রিকেট ফাইনাল খেলায় চ্যাম্পিয়ন ‘জুনিয়র টাইগার’ দুর্গাপুরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে আনন্দ র‌্যালি চাঁদাবাজদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

মৌচাকে গাড়ির ভেতর দুই লাশ

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ১১:১০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২৫ বার পড়া হয়েছে

রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য আরও গভীর হয়েছে। প্রায় ৩২ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণেও কোনো সন্দেহজনক কিছু পায়নি পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রোববার (১০ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গাড়িটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করে এবং তারপর থেকে আর বের হয়নি। ফুটেজে দেখা যায়, ওই সময়ের মধ্যে বাইরে থেকে কেউ গাড়ির কাছে যায়নি, আবার ভেতর থেকেও কেউ বের হয়নি। সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে গাড়ির ভেতর থেকে চালক জাকির হোসেন (২৪) ও তার বন্ধু মিজান (৩৮)-এর লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। দুজনের শরীরই অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ছিল।

গাড়ির মালিক নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার জোবায়ের আল মাহমুদ জানান, তিন মাস ধরে জাকির তার গাড়ি চালাচ্ছিলেন। শনিবার (৯ আগস্ট) তিনি পরিবারের আত্মীয়কে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে ঢাকায় যান। এ সময় গাড়িতে জাকির ও মিজানও ছিলেন। রোববার ভোরে বিমানবন্দর থেকে তারা হাসপাতাল এলাকায় আসেন। মিজান একজন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন, আর জাকির জানিয়েছিলেন, সকাল ১১টার দিকে রোগী ছাড়পত্র পাবেন, ততক্ষণ তারা গাড়িতেই বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লাশ উদ্ধারের সময় গাড়ির গ্যাস ও ব্যাটারি পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসি ও গ্যাস থেকে নির্গত অতিমাত্রার বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তাদের শরীরে প্রবেশ করায় মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে। দীর্ঘ সময় বদ্ধ অবস্থায় থাকায় গরমে তাদের শরীর দ্রুত ফুলে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “ফুটেজে কোনো হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। এটি প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও, ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাবে না।”

নিহত জাকিরের পরিবারের দাবি, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার বড় ভাই শাহাদাৎ হোসেন জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক দালাল চক্র জাকিরের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছিল। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকার লেনদেনের কাগজপত্র তাদের কাছে আছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জাকির যেতে পারেননি। টাকা ফেরত চাইলে সম্পর্ক খারাপ হয় এবং হুমকিও পান তিনি। পরিবারের সন্দেহ, ওই দালাল চক্রই হত্যার সঙ্গে জড়িত।

পুলিশ জানায়, এর আগেও ঢাকার সেগুনবাগিচা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় গাড়ির ভেতরে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

২০২১ সালের ৩১ আগস্ট ঢাকার সেগুনবাগিচায় গাড়ির মধ্যে রং করার পর ঘুমিয়ে থাকা দুই মোটর ওয়ার্কশপ কর্মী রাকিব ও সিয়ামকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরদিন জানা যায়, বিষাক্ত গ্যাসেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

২০২২ সালের ১৮ আগস্ট গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতি এ কে এম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তারের লাশ গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়। পরে তদন্তে জানা যায়, এসির গ্যাস থেকে নির্গত বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মৌচাকের এই ঘটনায় সব দিক মাথায় রেখে অনুসন্ধান চলছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টেই চূড়ান্ত উত্তর মিলবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

মৌচাকে গাড়ির ভেতর দুই লাশ

আপডেট সময় : ১১:১০:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ অগাস্ট ২০২৫

রাজধানীর মৌচাকে ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পার্কিংয়ে একটি প্রাইভেটকারের ভেতর থেকে দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধারের ঘটনায় রহস্য আরও গভীর হয়েছে। প্রায় ৩২ ঘণ্টার সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণেও কোনো সন্দেহজনক কিছু পায়নি পুলিশ।

পুলিশ জানায়, রোববার (১০ আগস্ট) ভোর সাড়ে ৫টার দিকে গাড়িটি পার্কিংয়ে প্রবেশ করে এবং তারপর থেকে আর বের হয়নি। ফুটেজে দেখা যায়, ওই সময়ের মধ্যে বাইরে থেকে কেউ গাড়ির কাছে যায়নি, আবার ভেতর থেকেও কেউ বের হয়নি। সোমবার (১১ আগস্ট) দুপুরে গাড়ির ভেতর থেকে চালক জাকির হোসেন (২৪) ও তার বন্ধু মিজান (৩৮)-এর লাশ উদ্ধার করে রমনা থানা পুলিশ। দুজনের শরীরই অস্বাভাবিকভাবে ফুলে ছিল।

গাড়ির মালিক নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার জোবায়ের আল মাহমুদ জানান, তিন মাস ধরে জাকির তার গাড়ি চালাচ্ছিলেন। শনিবার (৯ আগস্ট) তিনি পরিবারের আত্মীয়কে বিমানবন্দরে পৌঁছে দিতে ঢাকায় যান। এ সময় গাড়িতে জাকির ও মিজানও ছিলেন। রোববার ভোরে বিমানবন্দর থেকে তারা হাসপাতাল এলাকায় আসেন। মিজান একজন রোগীকে ছাড়পত্র দেওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন, আর জাকির জানিয়েছিলেন, সকাল ১১টার দিকে রোগী ছাড়পত্র পাবেন, ততক্ষণ তারা গাড়িতেই বিশ্রাম নেবেন। কিন্তু বেলা গড়িয়ে গেলেও তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, লাশ উদ্ধারের সময় গাড়ির গ্যাস ও ব্যাটারি পুরোপুরি শেষ হয়ে গিয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এসি ও গ্যাস থেকে নির্গত অতিমাত্রার বিষাক্ত কার্বন মনোঅক্সাইড গ্যাস শ্বাসপ্রশ্বাসের মাধ্যমে তাদের শরীরে প্রবেশ করায় মৃত্যু ঘটে থাকতে পারে। দীর্ঘ সময় বদ্ধ অবস্থায় থাকায় গরমে তাদের শরীর দ্রুত ফুলে যায়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেন, “ফুটেজে কোনো হত্যার আলামত পাওয়া যায়নি। এটি প্রাথমিকভাবে দুর্ঘটনা বলে মনে হলেও, ময়নাতদন্ত ও ফরেনসিক রিপোর্ট না আসা পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যাবে না।”

নিহত জাকিরের পরিবারের দাবি, এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। তার বড় ভাই শাহাদাৎ হোসেন জানান, প্রায় আড়াই বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এক দালাল চক্র জাকিরের কাছ থেকে ২৫ লাখ টাকা নিয়েছিল। এর মধ্যে ১৯ লাখ টাকার লেনদেনের কাগজপত্র তাদের কাছে আছে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও জাকির যেতে পারেননি। টাকা ফেরত চাইলে সম্পর্ক খারাপ হয় এবং হুমকিও পান তিনি। পরিবারের সন্দেহ, ওই দালাল চক্রই হত্যার সঙ্গে জড়িত।

পুলিশ জানায়, এর আগেও ঢাকার সেগুনবাগিচা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন জায়গায় গাড়ির ভেতরে বিষাক্ত গ্যাসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে।

২০২১ সালের ৩১ আগস্ট ঢাকার সেগুনবাগিচায় গাড়ির মধ্যে রং করার পর ঘুমিয়ে থাকা দুই মোটর ওয়ার্কশপ কর্মী রাকিব ও সিয়ামকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরদিন জানা যায়, বিষাক্ত গ্যাসেই তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

২০২২ সালের ১৮ আগস্ট গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতি এ কে এম জিয়াউর রহমান ও মাহমুদা আক্তারের লাশ গাড়ি থেকে উদ্ধার হয়। পরে তদন্তে জানা যায়, এসির গ্যাস থেকে নির্গত বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছিল।

তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, মৌচাকের এই ঘটনায় সব দিক মাথায় রেখে অনুসন্ধান চলছে। এটি দুর্ঘটনা নাকি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টেই চূড়ান্ত উত্তর মিলবে।