অনিয়ন্ত্রিত যাত্রাবিরতি কমিয়ে দিচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেনের সেবার মান

- আপডেট সময় : ০৯:৩০:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪
- / ৪৮ বার পড়া হয়েছে
প্রলয় ডেস্ক
অনিয়ন্ত্রিত যাত্রা বিরতি কমিয়ে দিচ্ছে আন্তঃনগর ট্রেনের সেবার মান। অথচ স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছার জনপ্রিয় মাধ্যম আন্তঃনগর ট্রেন। কিন্তু এখন ওসব ট্রেনের সেবার মান দ্বিতীয় শ্রেণীর পর্যায়ে নেমে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে বিগত সরকারের রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতিগুলো প্রত্যাহারের পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। তাতে রেলের যাত্রীসেবার মান বৃদ্ধি ছাড়াও রাজস্ব আয় বাড়বে বলে রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশের বিভিন্ন স্টেশনে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির হার অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। রাজনৈতিক বিবেচনায় শুধু রেলের পূর্বাঞ্চলেই ২৩টি আন্তঃনগর ট্রেনকে ২৩টি স্টেশনে উভয় মুখে (৪৬ বার) যাত্রাবিরতি দেয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, প্রধান বিচারপতি থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি পর্যন্ত আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির জন্য রেলওয়েকে সুপারিশ করেছেন। রেলের মাঠ পর্যায়ের অপারেশন ও বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে অনীহা থাকলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে কর্তৃপক্ষ প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করেছে। করোনাকালীন সংকটের পর সারা দেশে ৯৩টি দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের সার্ভিস বন্ধ করে দেয়া হয়। আর দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনের সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্টেশনে ট্রেন থাকার হারও কমে যায়। পরে স্থানীয়দের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রেলের অনাগ্রহ সত্ত্বেও রেলওয়েকে আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতি বাড়াতে হয়েছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলকারী মহানগর এক্সপ্রেসের মাধ্যমে ১৯৮৫ সালে আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু হয়। ওই ট্রেনগুলোর বিরতির সংখ্যা যথাসম্ভব সীমিত এবং গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন বা জংশন ছাড়া কোথাও না থামার সিদ্ধান্ত রাখা হয়। সম্প্রতি রেলের পরিবহন বিভাগের কাছে বিভিন্ন স্টেশনে দেয়া আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রাবিরতির তালিকা চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পূর্বাঞ্চলে ১৫ বছরের ২৩ জোড়া ট্রেনের যাত্রাবিরতির তালিকা রেলভবনে পাঠানো হয়। এখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অফিস কাজের পাশাপাশি নিয়মিত বিরতিতে রানিং ট্রেনের সেবার মান যাচাই, পরিদর্শন ও সেবা গ্রহীতার মনোভাব পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ট্রাফিক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে গুরুত্ব বিবেচনায় এনে আন্তঃনগর ট্রেনগুলোর অনাকাক্সিক্ষত যাত্রাবিরতির বিষয়েও রেলওয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।
সূত্র আরো জানায়, পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল রেলের প্রায় ১০০টি দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেন বন্ধ থাকায় এখনই আন্তঃনগর ট্রেনের অপ্রয়োজনীয় যাত্রাবিরতি তুলে নেয়া হলে স্থানীয়দের ক্ষোভ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য রেলওয়ে প্রাথমিকভাবে বন্ধ থাকা দ্বিতীয় শ্রেণীর ট্রেনগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। একটি আন্তঃনগর ট্রেনে দূরত্ব হিসাবে ৫-১০টি কিংবা তারও বেশি যাত্রাবিরতি দেয়া থাকে। কিন্তু ন্যূনতম ২ মিনিট যাত্রাবিরতির জন্য প্রতিটি ট্রেনের অন্তত ১০ মিনিট সময়ক্ষেপণ হয়। রেলের জনবল কমে যাওয়ায় বাড়তি যাত্রাবিরতির কারণে সংকটগুলো প্রকট হচ্ছে। রেলওয়ের বেশির ভাগ ট্রেনেই কানেক্টিং ইঞ্জিন ও রেকের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহন করা হয়। ফলে নতুন নতুন যাত্রাবিরতির কারণে ট্রেনগুলোর রানিং টাইম বেড়ে যাওয়ায় অন্যান্য ট্রেনের যাত্রার সময় ও গন্তব্যে পৌঁছতেও বিলম্ব হচ্ছে। এজন্য কিছু ট্রেনের অনাকাক্সিক্ষত যাত্রাবিরতি তুলে দিয়ে সেবার মান বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, রেলওয়ে সেবার মান বাড়ানোর দিকে বাড়তি নজর দিচ্ছে। নিয়মিত প্রোগ্রামের পাশাপাশি ট্রাফিকের কর্মকর্তারা ট্রেন ভ্রমণে সরেজমিনে সমস্যা সমাধানসহ যাত্রীদের মতামত নিচ্ছেন। পাশাপাশি অনাকাক্সিক্ষত যাত্রাবিরতিগুলো নিয়েও ভাবছে রেলওয়ে।