মরণফাঁদ হয়ে আছে শতাধিক অবৈধ রেলক্রসিং

- আপডেট সময় : ০১:০৭:০৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
- / ৫৩ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
রেলওয়ে কুমিল্লা অঞ্চলের ১৭২ কিলোমিটারের বিভিন্ন স্থানে এবং অবৈধ বা অনুমোদনহীন ১১৬টি লেভেল ক্রসিংয়ের অরক্ষিত স্থানে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব স্থানে গত আট বছরে দুর্ঘটনায় নানা বয়সের ৪ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত ও পঙ্গুত্ববরণ করেছে অনেকে। এসব রেলক্রসিং পথচারী, ছোট-বড় যানবাহনের যাত্রীদের জন্য অনেকটা ‘মরণফাঁদে’ পরিণত হয়েছে।
সবশেষ গত ২৬ নভেম্বর কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কালিকাপুর এলাকায় রেলপথের একটি অবৈধ লেভেল ক্রসিং অতিক্রমকালে প্রাণ হারিয়েছেন একজন অন্তঃস্বত্ত্বা নারীসহ অটোরিকশার সাতজন যাত্রী। তবে দুর্ঘটনাপ্রবণ এসব স্থানে ‘অনুমোদনহীন লেভেল ক্রসিং, নিজ দায়িত্বে পারাপার হউন’ এমন সাইন বোর্ড ঝুলিয়েই দায় এড়াচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের কুমিল্লার লাকসাম-নোয়াখালী রেলপথের ৪৯ কিলোমিটার এলাকায় বৈধ ১৯টি ও অবৈধ ৪২টি, লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথের ৫১ কিলোমিটারে বৈধ ২৩টি ও অবৈধ ৩৬টি এবং লাকসাম-আখাউড়া রেলপথের ৭২ কিলোমিটারে বৈধ ৩৩টি ও অবৈধ ৩৮টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এসব এলাকায় অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের ৩২টি স্থানে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাস্তা এবং বাকি রাস্তাগুলো পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, বিধান না মেনে এলজিইডি, সড়ক বিভাগ ও পৌরসভা ইচ্ছামতো রাস্তা নির্মাণ করে মরণফাঁদ তৈরি করছে।
সূত্র জানায়, রেলওয়ে ও এলজিইডি কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততার কারণে ঝুঁকি এড়াতে স্থানীয়রা নিজ দায়িত্বেই রেলপথের ৩২টি স্থানে অবৈধভাবে গেট নির্মাণ করেছে। এসব অবৈধ লেভেল ক্রসিং অতিক্রমকালে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। গত আট বছরে রেলপথের কুমিল্লা অঞ্চলে ট্রেনে কাটা পড়ে, ট্রেনের ধাক্কায় ও যানবাহনে করে অসতর্ক অবস্থায় পারাপারের সময় সংঘর্ষে ৪৪৪ জন নিহত হয়েছে। বেশির ভাগ স্থানেই রেলক্রসিংগুলোতে কোনো গেট ও গেটম্যান নেই। প্রাণহানির বেশির ভাগই হয়েছে অবৈধ রেলক্রসিংয়ে। লাকসাম রেলওয়ে থানার অধীন রেলপথের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় ২০১৭ সালে ৭৪ জন, ২০১৮ সালে ৬৮, ২০১৯ সালে ৬৬, ২০২০ সালে ৩৭, ২০২১ সালে ৪২ জন, ২০২২ সালে ৪৯, ২০২৩ সালে ৪৫ এবং চলতি বছরের গত ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ৬৩ জন নিহত হয়েছে|
এ তথ্য নিশ্চিত করে লাকসাম রেলওয়ে থানার ওসি এমরান হোসেন জানান, এ থানার অধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার গঙ্গাসাগর-ফেনীর ফাজিলপুর রুট, লাকসাম- নোয়াখালী রুট এবং লাকসাম-চাঁদপুর রেলপথে লাকসামের চিতোষীর আগ পর্যন্ত রুটে বেশ কিছু অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এগুলো পারাপারের সময় অসাবধানতার কারণে পথচারী, যাত্রী কাটা পড়ে এবং পণ্যবাহী যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। অনেক সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা মরদেহ নিয়ে যায়। তাই মৃত্যুর সঠিক সংখ্যা আরো অনেক বেশি হতে পারে।
এলজিইডি-কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম মজুমদার জানান, রেললাইনের জায়গা বাদ রেখেই এলজিইডি রাস্তা তৈরি করে। জনস্বার্থে তৈরি করা রাস্তার জন্য রেলওয়ের গেট নির্মাণ ও কর্মী নিয়োগ দেওয়া উচিত। রেলওয়ে কুমিল্লার উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথবিভাগ) লিয়াকত আলী মজুমদার জানান, অবৈধ এসব লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা বাড়ছে। রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে এলজিইডিসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলো রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে এমন সমস্যা হতো না। তবে শর্ত-সাপেক্ষে কুমিল্লা অঞ্চলে এলজিইডির ১৭টি গেট অনুমোদন দেওয়ার কাজ চলছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের এমনিতেই জনবল-সংকট রয়েছে, আমরা চাইলেই হঠাৎ করে ক্রসিংয়ের গেট নির্মাণ করতে পারি না।’
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মো. আমিরুল কায়সার বলেন, ‘যেখানে রেলক্রসিং আছে, সেখানে রেলগেট নির্মাণ করা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তবে সরকারের যেসব দপ্তর সড়ক নির্মাণ করে, তাদেরও উচিত কাজের সময় রেলওয়ের অনুমোদন নিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা, তাহলে এভাবে মানুষকে জীবন দিতে হয় না।