ঢাকা ০৮:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
কারচুপি প্রতিহতের প্রস্তুতি নিতে হবে: ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ত্রিশালে জমকালো আয়োজনে ক্রিকেট ফাইনাল খেলায় চ্যাম্পিয়ন ‘জুনিয়র টাইগার’ দুর্গাপুরে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে আনন্দ র‌্যালি চাঁদাবাজদের বাংলাদেশে থাকতে দেওয়া হবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কুড়িগ্রামে অটোরিকশা দেখতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে প্রাণ গেলো নারীর পাবনা-১ আসনে নির্বাচনি প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী সাংবাদিক এম এ আজিজ বিস্ময়কর বিদ্যুৎ মানব আয়নাল, খালি হাতে বিদ্যুতের তারে সচলে অভ্যস্ত আজকের শিক্ষার্থীরাই আগামী দিনের রাষ্ট্র ও সমাজের কর্ণধার: শিবির সভাপতি চাকরি দেওয়ার নামে প্রতারণা: নোয়াখালীতে ভুয়া র‍্যাব সদস্য গ্রেফতার উখিয়ায় ১০ ফুট লম্বা বার্মিজ অজগর উদ্ধার: আতঙ্কের পর নিরাপদে অবমুক্তির প্রস্তুতি
বাবা আমি কোথায় যাব?

মোমেনা বেওয়ার কান্নায় সাড়া দিয়ে সহায়তায় ছুটলেন উলিপুরের ইউএনও নয়ন কুমার সাহা

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৯:২৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৮২ বার পড়া হয়েছে

নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ

তীব্র স্রোতে নদীর বুক ফুঁড়ে মাটি গিলে খাচ্ছে পানি। মুহূর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, মানুষের আজীবনের সঞ্চয়। এই ভয়াবহ নদীভাঙনের শিকার উলিপুরের চর গোড়াইপিয়ার গ্রামের মোমেনা বেওয়া (স্বামী মৃত শুজুরুদ্দি সরকার)—যার কান্নাজড়িত কণ্ঠ এবার কাঁপিয়ে দিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

ভিডিওতে দেখা যায়, মোমেনা বেওয়া মোবাইল ফোনে কাঁদতে কাঁদতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহাকে বলছেন”বাবা, আমার ঘরবাড়ি সব ভেঙে যাচ্ছে পানিতে। আমার কেউ নাই, যে আমার ঘর সরাবে। আমি এখন কোথায় যাব বাবা? মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এই আবেদন মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। সাড়া ফেলতে বেশি সময় লাগেনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইউএনও।

১৩ আগস্ট সকালে ইউএনও নয়ন কুমার সাহা খবর পেয়ে ছুটে যান ভাঙনকবলিত চর গোড়াইপিয়ার গ্রামে। তিনি মোমেনা বেওয়ার সঙ্গে কথা বলেন, সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখেন। নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে তিনি প্রত্যক্ষ করেন—কীভাবে গর্জে ওঠা স্রোত একের পর এক ঘরবাড়ি গিলে খাচ্ছে। পরদিন, ১৪ আগস্ট সকালে ইউএনও তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সরকারি ত্রাণ সহায়তা থেকে মোমেনা বেওয়াকে প্রদান করেন, দুই বান ঢেউটিন ৬ হাজার টাকা নগদ অর্থ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।

প্রশংসা, তবে ক্ষোভও আছে এই দ্রুত পদক্ষেপের জন্য ইউএনও নয়ন কুমার সাহা স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে পাশাপাশি তাদের ক্ষোভও রয়েছে—কারণ নদীভাঙন উলিপুরের মানুষের জন্য বহুদিনের দুঃসহ বাস্তবতা, আর ত্রাণ কেবল সাময়িক সান্ত্বনা দেয়।

গ্রামবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা ত্রাণ চাই, কিন্তু তার থেকেও বেশি চাই নদীভাঙন বন্ধের স্থায়ী সমাধান। প্রতি বছর ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। নদীভাঙনের নির্মম চিত্র- তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে উলিপুরের অসংখ্য মানুষ প্রতিবছর গৃহহীন হয়।

ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, জমি হারিয়ে জীবিকা হারায় কৃষকরা। কিছু পরিবার অন্যের জমিতে আশ্রয় নেয়, কেউ আবার শহরে পাড়ি জমায়। গত কয়েক দশকে বহু গ্রাম মুছে গেছে মানচিত্র থেকে। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই জীবনের শেষ বয়সেও নতুন ঠিকানা খুঁজে ফেরেন। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের দাবি বছরের পর বছর নদীভাঙন রোধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কার্যকর বাঁধ নির্মাণ হয়নি। স্থানীয়রা মনে করেন, স্থায়ী বাঁধ ও নদী রক্ষা প্রকল্প ছাড়া এই ভয়াবহতা থামানো যাবে না। তবে আমরা চাই—নদী যেন আর কাউকে গৃহহীন না করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

বাবা আমি কোথায় যাব?

মোমেনা বেওয়ার কান্নায় সাড়া দিয়ে সহায়তায় ছুটলেন উলিপুরের ইউএনও নয়ন কুমার সাহা

আপডেট সময় : ০৯:২৫:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫

নুর মোহাম্মদ (রোকন), ভ্রাম্যমাণ

তীব্র স্রোতে নদীর বুক ফুঁড়ে মাটি গিলে খাচ্ছে পানি। মুহূর্তে হারিয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি, ভিটেমাটি, মানুষের আজীবনের সঞ্চয়। এই ভয়াবহ নদীভাঙনের শিকার উলিপুরের চর গোড়াইপিয়ার গ্রামের মোমেনা বেওয়া (স্বামী মৃত শুজুরুদ্দি সরকার)—যার কান্নাজড়িত কণ্ঠ এবার কাঁপিয়ে দিল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।

ভিডিওতে দেখা যায়, মোমেনা বেওয়া মোবাইল ফোনে কাঁদতে কাঁদতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহাকে বলছেন”বাবা, আমার ঘরবাড়ি সব ভেঙে যাচ্ছে পানিতে। আমার কেউ নাই, যে আমার ঘর সরাবে। আমি এখন কোথায় যাব বাবা? মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এই আবেদন মুহূর্তেই ভাইরাল হয়। সাড়া ফেলতে বেশি সময় লাগেনি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ইউএনও।

১৩ আগস্ট সকালে ইউএনও নয়ন কুমার সাহা খবর পেয়ে ছুটে যান ভাঙনকবলিত চর গোড়াইপিয়ার গ্রামে। তিনি মোমেনা বেওয়ার সঙ্গে কথা বলেন, সরেজমিনে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র দেখেন। নদীর কিনারায় দাঁড়িয়ে তিনি প্রত্যক্ষ করেন—কীভাবে গর্জে ওঠা স্রোত একের পর এক ঘরবাড়ি গিলে খাচ্ছে। পরদিন, ১৪ আগস্ট সকালে ইউএনও তার ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও সরকারি ত্রাণ সহায়তা থেকে মোমেনা বেওয়াকে প্রদান করেন, দুই বান ঢেউটিন ৬ হাজার টাকা নগদ অর্থ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী।

প্রশংসা, তবে ক্ষোভও আছে এই দ্রুত পদক্ষেপের জন্য ইউএনও নয়ন কুমার সাহা স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তবে পাশাপাশি তাদের ক্ষোভও রয়েছে—কারণ নদীভাঙন উলিপুরের মানুষের জন্য বহুদিনের দুঃসহ বাস্তবতা, আর ত্রাণ কেবল সাময়িক সান্ত্বনা দেয়।

গ্রামবাসী রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা ত্রাণ চাই, কিন্তু তার থেকেও বেশি চাই নদীভাঙন বন্ধের স্থায়ী সমাধান। প্রতি বছর ঘরবাড়ি ভেঙে যায়, আবার নতুন করে শুরু করতে হয়। নদীভাঙনের নির্মম চিত্র- তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনে উলিপুরের অসংখ্য মানুষ প্রতিবছর গৃহহীন হয়।

ভিটেমাটি নদীতে বিলীন হয়ে যায়, জমি হারিয়ে জীবিকা হারায় কৃষকরা। কিছু পরিবার অন্যের জমিতে আশ্রয় নেয়, কেউ আবার শহরে পাড়ি জমায়। গত কয়েক দশকে বহু গ্রাম মুছে গেছে মানচিত্র থেকে। ক্ষতিগ্রস্তদের অনেকেই জীবনের শেষ বয়সেও নতুন ঠিকানা খুঁজে ফেরেন। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগের দাবি বছরের পর বছর নদীভাঙন রোধে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, স্মারকলিপি দেওয়া হলেও কার্যকর বাঁধ নির্মাণ হয়নি। স্থানীয়রা মনে করেন, স্থায়ী বাঁধ ও নদী রক্ষা প্রকল্প ছাড়া এই ভয়াবহতা থামানো যাবে না। তবে আমরা চাই—নদী যেন আর কাউকে গৃহহীন না করে।