ঢাকা ০১:৩৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মদিনার ঐতিহাসিক কয়েকটি স্থান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫
  • / ৩১ বার পড়া হয়েছে

মুমিন হৃদয়ের গভীরতম ভালোবাসার প্রতীক মদিনা। এখানে শুয়ে আছেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (সা.)। তার কারণেই এ শহর হয়ে উঠেছে প্রেমের মদিনা, প্রাণের মদিনা। মদিনার প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি ধূলিকণা যেন নবীর স্মৃতিতে পূর্ণ। এ শহরের বাতাসে মিশে আছে নবীজির সুবাস। যা মুমিনদের হৃদয়ে এনে দেয় প্রশান্তি ও উচ্ছ্বাস।

আল্লাহতায়ালা কুরআনুল কারিমে এ পবিত্র ভূমিকে অসংখ্য নামে সম্বোধন করেছেন। ‘আরদুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর ভূমি, ‘আরদুল হিজর’ অর্থাৎ হিজরতের ভূমি।

এই নামগুলো মদিনার মর্যাদা ও তাৎপর্যের সাক্ষী। দুনিয়ার বুকে মদিনা মুনাওয়ারার মতো এত অধিক নামবিশিষ্ট আর কোনো জনপদ নেই। যদিও হজের রুকন হিসাবে মদিনার জিয়ারত ফরজ নয়, তবুও মদিনার প্রতি মুমিনের গভীর প্রেম তাকে জিয়ারতের জন্য অনুরক্ত করে, এমনকি পাগলপারা আত্মহারায় পরিণত হয়। যুগে যুগে প্রিয় নবী (সা.)-এর আশেক বান্দারা এ ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছেন।

মদিনার ঐতিহাসিক কয়েকটি স্থান সম্পর্কে আজ আমরা জানবো-

মসজিদে নববী

‘মসজিদে নববী’ অর্থ নবীর মসজিদ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে আসার পর এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

এর ভিত্তি ছিল পাথরের, দেয়াল ছিল ইটের, খুটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ডের আর ছাদ ছিল খেজুর পাতার। বর্তমানে এ মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে রওজা বরাবর উপরে সবুজ গম্বুজ, রিয়াজুল জান্নাত, মিম্বারুন্নবী, মিহরাবুন্নবী, মিহরাবে তাহাজ্জুদ ও আছহাবে ছুফফার স্থান।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে যুগে যুগে এ মসজিদটির সংস্কার হতে থাকে। নবীজিসহ এ পর্যন্ত নির্মাণ ও সংস্কার কর্মে ৯ জনের নাম তালিকাভূক্ত হয়েছে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লির স্থান সংকুলান হয়।

রিয়াজুল জান্নাত

এটি মসজিদে নববীতে অবস্থিত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটুকু হল ‘রিয়াজুল জান্নাত’ (বেহেশতের বাগান)। বর্তমানে এতে সবুজ ডিজাইন বিশিষ্ট সাদা কার্পেট বিছানো থাকে।

‘রিয়াজুল জান্নাত’ অংশের মধ্যে ৭টি উস্তুওয়ানা বা স্তম্ভ রয়েছে, এগুলোকে ‘রহমতের স্তম্ভ’ বলা হয়। যথা: ১. উস্তুওয়ানা ছারীর, ২. উস্তুওয়ানা র্হাছ বা উস্তুওয়ানা আলী, ৩. উস্তুওয়ানা উফূদ, ৪. উস্তুওয়ানা আবূ লুবাবা বা উস্তুওয়ানাতুত্তাওবা, ৫. উস্তুওয়ানা আয়েশা বা উস্তুওয়ানাতুল র্কুআহ, ৬. উস্তুওয়ানা মুখাল্লাক্বাহ বা উস্তুওয়ানা হান্নানাহ, ৭. উস্তুওয়ানা জিব্রীল।

মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে সম্ভব হলে এগুলোর পাশে নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতের।

জান্নাতুল বাক্বী

এটি মদিনার কবরস্থান। এ কবরস্থান মসজিদে নববীর সামনের অংশের পূর্ব দিকে পাকা প্রাচীর বেষ্টিত। এর মূল নাম ‘বাক্বীউল গারক্বাদ’।

‘বাক্বী’ শব্দের অর্থ যেখানে বহু রকম গাছের মূল রয়েছে। আর ‘গারক্বাদ’ হল বিশেষ এক ধরনের কাঁটাদার বৃক্ষ। এ স্থানকে কবরস্থান বানানোর আগে এখানে এসব বৃক্ষ ছিল।

এ কবরস্থানে হজরত উসমান (রা.), হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত আব্বাস (রা.) সহ প্রায় দশ হাজার সাহাবী, তাবেয়ী, আহলে বাইত, আলেম-উলামা ও বুযুর্গের কবর রয়েছে।

মসজিদে কুবা

মসজিদে নববী থেকে প্রায় ৩.২ কিলোমিটার দক্ষিণে রাসূলের প্রতিষ্ঠিত মদিনার ‘প্রথম মসজিদ’। নবীজী প্রতি শনিবারে সওয়ারীতে বা পদব্রজে এখানে এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

তিনি বলেন- যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে ওজু করে এখানে এসে নামাজ আদায় করবে, সে ব্যক্তি একটি ওমরাহ করার সমান নেকি পাবে। (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে জুমআ

মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা এলাকায় কয়েকদিন অবস্থান করেন। তারপর তিনি মদিনার কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হন। তখন মসজিদে কুবা থেকে ৮০০ মিটার উত্তরে অগ্রসর হয়ে বনু সালেম গোত্রের এলাকায় পৌঁছেন।

আর এখানেই তিনি সর্বপ্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটিই হল ‘মসজিদে জুমআ’। মসজিদে নববী থেকে এটির দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার।

মসজিদে কেবলাতাইন

মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম প্রায় ১৭ মাস আল্লাহর হুকুমে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করছিলেন।  ইত্যবসরে মসজিদে নববীর পূর্বদিকে অনতিদূরে অবস্থিত অত্র ‘বনু সালামাহ’ মসজিদে যোহরের নামাজরত অবস্থায় কেবলা-পরিবর্তনের আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল মুকাদ্দাসের বিপরীতে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায় শুরু করেন।

এজন্য একে ‘মসজিদে কেবলাতাইন’ বা দুই কেবলার মসজিদ বলা হয়। মসজিদে নববী থেকে এটির দূরত্ব প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার।

সাব‘আ মাসাজিদ

সাতটি মসজিদ বলা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে ৬টি মসজিদ রয়েছে। ১. মসজিদুল ফাতাহ, ২. মসজিদে আবু বকর, ৩. মসজিদে উমর, ৪. মসজিদে আলী, ৫. মসজিদে ফাতেমা, ৬. মসজিদে সালমান ফারসী।

কেউ কেউ মসজিদে কেবলাতাইন-কে এই ৭ মসজিদের অন্তর্ভূক্ত মনে করেন। সম্মিলিত আরব শক্তির বিরুদ্ধে ৫ম হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত ‘আহযাব যুদ্ধে’ মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয় লাভ হয়। এরই স্মৃতিস্বরূপ উমাইয়া খলীফা হজরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ.)-এর যুগে এসব মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জাবালে উহুদ ও মাকবারায়ে শুহাদায়ে উহুদ

জাবালে উহুদ (উহুদ পাহাড়) মদিনা মুনাওয়ারার সর্ববৃহৎ পাহাড়। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩০০ মিটার, আর পূর্ব-পশ্চিমে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে ৩ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট।

মসজিদে নববী থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে এ পাহাড় অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- উহুদ এমন একটা পাহাড়, যা আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। (আততারগীব ওত তারহীব)

তৃতীয় হিজরি সনে উহুদ ময়দানের নিকট সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে এ যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।

রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীরা তাদের মোকাবিলা করলেন। এ যুদ্ধে সত্তরজন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন।

হুজূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও আক্রান্ত হলেন। শত্রুবাহিনী তাকেও আহত করল। তার চাচা হজরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.), হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.), হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) সহ সত্তরজন সাহাবী এ যুদ্ধে শহীদ হলেন।

এ শহীদদের মাজার একটি সংরক্ষিত স্থানে বিদ্যমান রয়েছে। সৌদি সরকার তার চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করে দিয়েছে। স্থানটি দরজা-জানালাবিশিষ্ট; কিন্তু তালাবদ্ধ থাকে। দরজা থেকে সামান্য দূরে হজরত হামযা ও হজরত মুস‘আব ইবনে উমায়ের (রা.)-এর কবর বিদ্যমান। যা বাহির থেকে পরিদৃষ্ট হয়। অন্যান্য শহীদগণের কবর চতুর্বেষ্টনীর শেষের দিকে।

প্রলয়/তাসনিম তুবা 

নিউজটি শেয়ার করুন

ই-পেপার

মদিনার ঐতিহাসিক কয়েকটি স্থান

আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

মুমিন হৃদয়ের গভীরতম ভালোবাসার প্রতীক মদিনা। এখানে শুয়ে আছেন প্রিয় নবী মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (সা.)। তার কারণেই এ শহর হয়ে উঠেছে প্রেমের মদিনা, প্রাণের মদিনা। মদিনার প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি ধূলিকণা যেন নবীর স্মৃতিতে পূর্ণ। এ শহরের বাতাসে মিশে আছে নবীজির সুবাস। যা মুমিনদের হৃদয়ে এনে দেয় প্রশান্তি ও উচ্ছ্বাস।

আল্লাহতায়ালা কুরআনুল কারিমে এ পবিত্র ভূমিকে অসংখ্য নামে সম্বোধন করেছেন। ‘আরদুল্লাহ’ অর্থাৎ আল্লাহর ভূমি, ‘আরদুল হিজর’ অর্থাৎ হিজরতের ভূমি।

এই নামগুলো মদিনার মর্যাদা ও তাৎপর্যের সাক্ষী। দুনিয়ার বুকে মদিনা মুনাওয়ারার মতো এত অধিক নামবিশিষ্ট আর কোনো জনপদ নেই। যদিও হজের রুকন হিসাবে মদিনার জিয়ারত ফরজ নয়, তবুও মদিনার প্রতি মুমিনের গভীর প্রেম তাকে জিয়ারতের জন্য অনুরক্ত করে, এমনকি পাগলপারা আত্মহারায় পরিণত হয়। যুগে যুগে প্রিয় নবী (সা.)-এর আশেক বান্দারা এ ভালোবাসার স্বাক্ষর রেখেছেন।

মদিনার ঐতিহাসিক কয়েকটি স্থান সম্পর্কে আজ আমরা জানবো-

মসজিদে নববী

‘মসজিদে নববী’ অর্থ নবীর মসজিদ। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করে আসার পর এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন।

এর ভিত্তি ছিল পাথরের, দেয়াল ছিল ইটের, খুটি ছিল খেজুর গাছের কাণ্ডের আর ছাদ ছিল খেজুর পাতার। বর্তমানে এ মসজিদের অভ্যন্তরে রয়েছে রওজা বরাবর উপরে সবুজ গম্বুজ, রিয়াজুল জান্নাত, মিম্বারুন্নবী, মিহরাবুন্নবী, মিহরাবে তাহাজ্জুদ ও আছহাবে ছুফফার স্থান।

নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরে যুগে যুগে এ মসজিদটির সংস্কার হতে থাকে। নবীজিসহ এ পর্যন্ত নির্মাণ ও সংস্কার কর্মে ৯ জনের নাম তালিকাভূক্ত হয়েছে। বর্তমানে এখানে একসঙ্গে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লির স্থান সংকুলান হয়।

রিয়াজুল জান্নাত

এটি মসজিদে নববীতে অবস্থিত। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রওজা মোবারক ও মিম্বরের মধ্যবর্তী স্থানটুকু হল ‘রিয়াজুল জান্নাত’ (বেহেশতের বাগান)। বর্তমানে এতে সবুজ ডিজাইন বিশিষ্ট সাদা কার্পেট বিছানো থাকে।

‘রিয়াজুল জান্নাত’ অংশের মধ্যে ৭টি উস্তুওয়ানা বা স্তম্ভ রয়েছে, এগুলোকে ‘রহমতের স্তম্ভ’ বলা হয়। যথা: ১. উস্তুওয়ানা ছারীর, ২. উস্তুওয়ানা র্হাছ বা উস্তুওয়ানা আলী, ৩. উস্তুওয়ানা উফূদ, ৪. উস্তুওয়ানা আবূ লুবাবা বা উস্তুওয়ানাতুত্তাওবা, ৫. উস্তুওয়ানা আয়েশা বা উস্তুওয়ানাতুল র্কুআহ, ৬. উস্তুওয়ানা মুখাল্লাক্বাহ বা উস্তুওয়ানা হান্নানাহ, ৭. উস্তুওয়ানা জিব্রীল।

মাকরূহ ওয়াক্ত না হলে এবং কাউকে কষ্ট না দিয়ে সম্ভব হলে এগুলোর পাশে নফল নামাজ পড়া অত্যন্ত ফজিলতের।

জান্নাতুল বাক্বী

এটি মদিনার কবরস্থান। এ কবরস্থান মসজিদে নববীর সামনের অংশের পূর্ব দিকে পাকা প্রাচীর বেষ্টিত। এর মূল নাম ‘বাক্বীউল গারক্বাদ’।

‘বাক্বী’ শব্দের অর্থ যেখানে বহু রকম গাছের মূল রয়েছে। আর ‘গারক্বাদ’ হল বিশেষ এক ধরনের কাঁটাদার বৃক্ষ। এ স্থানকে কবরস্থান বানানোর আগে এখানে এসব বৃক্ষ ছিল।

এ কবরস্থানে হজরত উসমান (রা.), হজরত ফাতেমা (রা.), হজরত আব্বাস (রা.) সহ প্রায় দশ হাজার সাহাবী, তাবেয়ী, আহলে বাইত, আলেম-উলামা ও বুযুর্গের কবর রয়েছে।

মসজিদে কুবা

মসজিদে নববী থেকে প্রায় ৩.২ কিলোমিটার দক্ষিণে রাসূলের প্রতিষ্ঠিত মদিনার ‘প্রথম মসজিদ’। নবীজী প্রতি শনিবারে সওয়ারীতে বা পদব্রজে এখানে এসে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন।

তিনি বলেন- যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে ওজু করে এখানে এসে নামাজ আদায় করবে, সে ব্যক্তি একটি ওমরাহ করার সমান নেকি পাবে। (বুখারি ও মুসলিম)

মসজিদে জুমআ

মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুবা এলাকায় কয়েকদিন অবস্থান করেন। তারপর তিনি মদিনার কেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হন। তখন মসজিদে কুবা থেকে ৮০০ মিটার উত্তরে অগ্রসর হয়ে বনু সালেম গোত্রের এলাকায় পৌঁছেন।

আর এখানেই তিনি সর্বপ্রথম জুমার নামাজ আদায় করেন এবং একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এটিই হল ‘মসজিদে জুমআ’। মসজিদে নববী থেকে এটির দূরত্ব প্রায় ২.৫ কিলোমিটার।

মসজিদে কেবলাতাইন

মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় আসার পর থেকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম প্রায় ১৭ মাস আল্লাহর হুকুমে বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করছিলেন।  ইত্যবসরে মসজিদে নববীর পূর্বদিকে অনতিদূরে অবস্থিত অত্র ‘বনু সালামাহ’ মসজিদে যোহরের নামাজরত অবস্থায় কেবলা-পরিবর্তনের আয়াত নাযিল হওয়ার প্রেক্ষিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল মুকাদ্দাসের বিপরীতে কাবার দিকে মুখ ফিরিয়ে নামাজ আদায় শুরু করেন।

এজন্য একে ‘মসজিদে কেবলাতাইন’ বা দুই কেবলার মসজিদ বলা হয়। মসজিদে নববী থেকে এটির দূরত্ব প্রায় ৩.৫ কিলোমিটার।

সাব‘আ মাসাজিদ

সাতটি মসজিদ বলা হলেও প্রকৃত প্রস্তাবে ৬টি মসজিদ রয়েছে। ১. মসজিদুল ফাতাহ, ২. মসজিদে আবু বকর, ৩. মসজিদে উমর, ৪. মসজিদে আলী, ৫. মসজিদে ফাতেমা, ৬. মসজিদে সালমান ফারসী।

কেউ কেউ মসজিদে কেবলাতাইন-কে এই ৭ মসজিদের অন্তর্ভূক্ত মনে করেন। সম্মিলিত আরব শক্তির বিরুদ্ধে ৫ম হিজরির শাওয়াল মাসে সংঘটিত ‘আহযাব যুদ্ধে’ মুসলমানদের অবিস্মরণীয় বিজয় লাভ হয়। এরই স্মৃতিস্বরূপ উমাইয়া খলীফা হজরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রহ.)-এর যুগে এসব মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়।

জাবালে উহুদ ও মাকবারায়ে শুহাদায়ে উহুদ

জাবালে উহুদ (উহুদ পাহাড়) মদিনা মুনাওয়ারার সর্ববৃহৎ পাহাড়। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে এর সর্বোচ্চ উচ্চতা ৩০০ মিটার, আর পূর্ব-পশ্চিমে ৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে ৩ কিলোমিটার প্রস্থ বিশিষ্ট।

মসজিদে নববী থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তরে এ পাহাড় অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- উহুদ এমন একটা পাহাড়, যা আমাদেরকে ভালোবাসে এবং আমরাও তাকে ভালোবাসি। (আততারগীব ওত তারহীব)

তৃতীয় হিজরি সনে উহুদ ময়দানের নিকট সশস্ত্র যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ করে এ যুদ্ধ চাপিয়ে দিয়েছিল।

রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীরা তাদের মোকাবিলা করলেন। এ যুদ্ধে সত্তরজন সাহাবী শাহাদাত বরণ করেন।

হুজূরে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও আক্রান্ত হলেন। শত্রুবাহিনী তাকেও আহত করল। তার চাচা হজরত হামযা ইবনে আব্দুল মুত্তালিব (রা.), হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ (রা.), হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) সহ সত্তরজন সাহাবী এ যুদ্ধে শহীদ হলেন।

এ শহীদদের মাজার একটি সংরক্ষিত স্থানে বিদ্যমান রয়েছে। সৌদি সরকার তার চারদিকে প্রাচীর নির্মাণ করে দিয়েছে। স্থানটি দরজা-জানালাবিশিষ্ট; কিন্তু তালাবদ্ধ থাকে। দরজা থেকে সামান্য দূরে হজরত হামযা ও হজরত মুস‘আব ইবনে উমায়ের (রা.)-এর কবর বিদ্যমান। যা বাহির থেকে পরিদৃষ্ট হয়। অন্যান্য শহীদগণের কবর চতুর্বেষ্টনীর শেষের দিকে।

প্রলয়/তাসনিম তুবা