গেল ঈদে তিনদিনেই নিহত ১৫ জন
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণের জোরালো দাবি

- আপডেট সময় : ০৮:৩৫:৫৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ৭১ বার পড়া হয়েছে
তৌহিদ বেলাল, কক্সবাজার অফিস
কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবি দিনদিন জোরালো হচ্ছে। সবকটিতে হরহামেশাই ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। রাঙ্গামাটির সাজেক ভ্রমণে যাওয়ার পথে বৃহস্পতিবার রাতেও সড়কটিতে ঝরেছে টগবগে দুই তরুণের তাজা প্রাণ। অতি ব্যস্ত মহাসড়কটিতে নিত্য দুর্ঘটনার জন্য বহুল আলোচিত লোহাগাড়া উপজেলার চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায় দ্রুত গতির বেপরোয়া ডাম্প ট্রাকের ধাক্কায় দুই বাইক আরোহী নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাত এগারোটার দিকে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলেন- কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার সদর ইউনিয়নের আব্দুস শুক্কুরের ছেলে রাকিবুল ইসলাম ও জালালাবাদ ইউনিয়নের শামসুল ইসলামের ছেলে জিহাদ (১৯)। তারা সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই।
স্থানীয়রা জানায়, পৃথক তিনটি মোটরসাইকেলযোগে বন্ধুরা মিলে বৃহস্পতিবার রাতে রাঙ্গামাটির সাজেকে ভ্রমণের জন্য বের হয়। কক্সবাজারের ঈদগাঁও থেকে রওনা দিয়ে তারা মহাসড়কের চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায় পৌঁছালে কক্সবাজারমুখী একটি ডাম্প ট্রাক তাদের বহরে থাকা একটি মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দেয়। এতে রাকিব ও জিহাদ মারাত্মক আহত হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের দুজনকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমান জানান, দুর্ঘটনার পর বান্দরবানের লামা থানার আজিজনগর ফাঁড়ির একটি টিম ট্রাকটির চালক ও সহযোগীকে আটক করেছে। ঘাতক ট্রাক দোহাজারী হাইওয়ে থানায় জব্দ থাকবে। বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ও সমুদ্র নগরী কক্সবাজার যাতায়াতের পথে বিপজ্জনক এক ভয়াবহ, আলোচিত নাম চুনতির জাঙ্গালিয়া। হরহামেশাই সেখানে ঘটে দুর্ঘটনা, প্রাণ যায় মানুষের। দুর্ঘটনার হটস্পট হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার কারণ হিসেবে উঠে আসে- সড়কের অপ্রশস্ততা, চালকদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া, বিপজ্জনক বাঁক, লবণের পানি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হওয়ার মতো নানান বিষয়।
স্থানীয়দের কেউ কেউ আবার এখানে অতিপ্রাকৃতিক শক্তির হাতও দেখেন। তাদের মধ্যে কারও কারও ধারণা- এই এলাকায় পৌঁছালেই ‘অশুভ শক্তি’ ভর করে গাড়িচালকদের ওপর। এখানে পৌঁছাতেই পরিবহন চালকেরা সড়ক দেখতে পান কয়েকটি। এরমধ্যে একটি ধরে এগোতেই নিয়ন্ত্রণ হারান গাড়িচালকেরা। আর তাতেই ঘটে দুর্ঘটনা। সর্বশেষ, গেল ঈদুল ফিতরের সময় চুনতির জাঙ্গালিয়া এলাকায় তিন দিনের ব্যবধানে এই সড়কে মারা যান অন্তত ১৫ জন। ওইসময় কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি প্রশস্ত করার দাবি ওঠে।
কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আন্দোলন শুরু হয়। এছাড়া বর্তমান সরকারের একাধিক উপদেষ্টার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করে এবিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদনও জানানো হয়। জোর দাবি জানানো হয়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অনতিবিলম্বে ছয় লেনে উন্নীত করার। কয়েকদিন ধরে চলমান আন্দোলন প্রশাসনের আশ্বাসে থেমে যায়। এরপরও হরহামেশাই দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। তারপরও সডকটি প্রশস্ত করার বিষয়ে সরকারের দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যায়নি।
জানা যায়, কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে প্রথম থেকেই সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছে সাংবাদিকদের সংগঠন ‘কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব’ এবং পরিবেশ ও জলবায়ু বিষয়ক নাগরিক সংগঠন ‘সেভ দ্য কক্সবাজার’।
পরবর্তীতে একই দাবিতে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে আন্দোলনের আলাদা দুটি সংগঠন ‘বাস্তবায়ন পরিষদ’ গঠিত হয়। কক্সবাজার জেলা প্রেসক্লাব’র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবু মুসা মুহাম্মাদ বলেন, ‘দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রোধে অবিলম্বে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ছয় লেনে উন্নীত করার পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো, এই দাবিতে কক্সবাজার থেকে আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে’।
সেভ দ্য কক্সবাজার-এর নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জামশেদ বলেন, ‘কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক যেনো এক মৃত্যুফাঁদ। নিরাপদ যাতায়াত, জীবন রক্ষা এবং দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি রোধে মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। নয়তো মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হতেই থাকবে, যার দায়ভার সরকারকে বহন করতে হবে’।