বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৩ অপরাহ্ন
একে এম আনোয়ারুল হক (দীপু)
মানসিক চাপ থাকা জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু নি:সন্দেহে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করা ক্ষতিকর। অতিরিক্ত চাপ কন্ট্রোল করা জরুরি। মানসিক চাপ কন্ট্রোল করার কতিপয় নির্দেশিকা। যথা:
১. মানুষের ব্যাপারে খরবদারী করবেন না। কে কী করছে সে বিষয়ে মাথা ঘামানো নিজের মানসিক চাপ বৃদ্ধির একটি কারণ। আরেকটি সমস্যা হবে, অন্যের বিষয়ে নিয়ে মাথা ঘামালে তখন নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করার মনোভাব সৃষ্টি হবে। টাকা-পয়সা, সামাজিক অবস্থা, পদমর্যাদা, গাড়ি-বাড়ি অলংকার, পোশাক, সৌন্দর্য ইত্যাদি দিক থেকে তখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন। তাই আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন সেটা নিয়ে খুশ থাকুন আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন তাহলে হৃদয়ে পরম প্রশান্তি অনুভব করবেন ইনশাআল্লাহ।
২. আপনার যতটুকু দায়িত্ব ও কর্তব্য ততটুকু পরম আন্তরিকতার সাথে পালন করুন। আপনার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলতে যাবেন না। অনুরোধে ঢেঁকি গিলবেন না। অন্যথায় আপনাকে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকতে হবে।
৩. মানুষের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্ক মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। তাই আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী, কলিগ, ক্লাসমেট ইত্যাদির সাথে সীমিত সম্পর্ক রাখুন। সম্পর্ক যত ব্যাপক হবে ততই আপনি নানা বাধ্যবাধকতার জালে আটকে যাবেন।
৪. অতিলোভ করবেন না। অতিলোভী ব্যক্তি অর্থ-কড়ি, ধন-দৌলত, পদমর্যাদা ইত্যাদি বৃদ্ধির চিন্তায় বিভোর থাকে। যদি সামান্য টাকা-পয়সা হাতছাড়া হয় বা চাকুরীর প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার হাহুতাশ দেখে কে? সুতরাং অল্পে তুষ্টি মানসিক শান্তির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাকওয়ারও পরিচায়ক।
৫. সাধ্যের বাইরে নিজের অর্থ-সম্পদ, আরাম-আয়েশ উজাড় করে দিবেন না। যারা কৃত্রিমভাবে নিজের সব কিছুকে উৎসর্গ করে দেয় তারা তাদের কথা-বার্তা ও আচরণে মানুষের ধন্যবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু যদি তা না পায় তখন তার মানসিক অস্থিরতা ও টেনশন বেড়ে যায়।
৬. আজকের দিনটিকে ভালভাবে উপভোগ করুন। আগামী কাল কী হবে সেটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। ইবাদত বন্দেগীর পাশাপাশি আল্লাহর দেয়া নেয়ামত স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করুন। আগামীর চিন্তায় অস্থির হয়ে মানসিক চাপ বৃদ্ধি করবেন না।
৭. প্রতিদিন একান্ত নির্জনে কিছু সময় কাটান। এ সময় দুনিয়ার কারও সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। বিশেষ ইন্টারনেট তথা হোয়াটসএ্যাপ, ফেসবুক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। এ সময় আত্মসমালোচনা করুন আর আল্লাহর নিকট দুয়া করুন। তাহলে দেখবেন, মহান আল্লাহ আপনার মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দান করবেন ইনশাআল্লাহ।
৮. জ্ঞানীদের জীবনী পড়ুন, তাদের উপদেশ ও মূল্যবান বাণীগুলো পড়ুন তাহলে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপদেশ দুনিয়ার জীবনে আপনার চলার পথকে সহজ করে দিবে ইনশাআল্লাহ।
৯. জীবনে যত বিপদ ও সমস্যাই আসুক না কেন-যেমন, আর্থিক ক্ষতি, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি) এগুলো নিয়ে খুব বেশী দু:শ্চিন্তা করবেন না। বরং সহজভাবে মেনে নিন। মনে রাখুন, মহান আল্লাহর লিখিত তাকদিরে বাইরে কিছুই ঘটে না। বিপদাপদেই হয়ত কল্যাণ রয়েছে যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু আল্লাহ নিশ্চয় হেকমত ছাড়া কিছুই করেন না।
১০. সব কিছুই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন না। মানুষের প্রতিটি কথা বা কাজ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা ঠিক নয়। সব কিছু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা ঠিক নয়। বরং মনে আনন্দ বজায় রাখুন, মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাতে হাসতে শিখুন। আপনার কথা ও আচরণে যেন ফুলের সুঘ্রাণ বের হয়। তাহলে ইনশাআল্লাহ মন ফ্রেশ থাকবে আর মানসিক চাপ কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।
১১. শরীরকে তার হক দিন। প্রয়োজনীয় খাবার, ঘুম, বিশ্রাম গ্রহণ জরুরি।
১২. দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে লিস্ট তৈরি করে আগেরটা আগে পরেরটা পরে করুন। তবে তা করতে গিয়ে নিজেকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিবেন না। মনে রাখবেন অগোছালো কার্যক্রম মানসিক অস্থিরতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ তৈরি করে।
১৩. প্রতিটি কাজ ১০০ পার্সেন্ট নির্ভুল করতে হবে এই চিন্তা মাথা থেকে সরাতে হবে। কেননা, পূর্ণাঙ্গতার গুণ কেবল মাত্র আল্লাহর। যারা সব কাজ নির্ভুল করার চিন্তায় থাকে চতুর্দিক থেকে দু:শ্চিন্তা, টেনশন,অস্থিরতা ঘিরে ধরে। ফলে মানসিক চাপ চরম আকার ধারণ করে।
১৪. নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যত গভীর হবে দুনিয়া ও আখিরাতের সব কাজ তার জন্য সহজ হবে। আল্লাহ ভীতি, নামায, সকাল সন্ধ্যার দুয়া ও যিকির, নেকীর কাজ, মানুষের কল্যাণে কাজ করা ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মনে অফুরন্ত প্রশান্তি বর্ষণ করেন, সমস্যা দূরভিত করেন আর তখন জীবন হয়ে উঠে আরও প্রাণবন্ত, স্বচ্ছন্দয় ও আল্লাহর ভালবাসায় স্নিগ্ধ।