আইনের শিথিলতায় বেড়ে চলেছে সাংবাদিকদের হত্যা, নির্যাতন ও হুমকি

- আপডেট সময় : ০৫:৫৮:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১১ অগাস্ট ২০২৫
- / ৭০ বার পড়া হয়েছে
কলম যখন সত্যের পথে পা বাড়ায়, তখনই তার চারপাশে জমতে শুরু করে অন্ধকারের ছায়া। বাংলাদেশে আজ সাংবাদিকতা এক কঠিন যুদ্ধে পরিণত হয়েছে। স্বাধীন ও সাহসী সাংবাদিকদের ওপর ক্রমশ বেড়ে চলেছে হত্যার ছায়া, নির্যাতন আর বেপরোয়া হুমকি।
এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো দেশের আইনের শিথিলতা ও বিচার ব্যবস্থার অকার্যকরতা। সাংবাদিকরা দেশের চোখ, কান ও কণ্ঠস্বর। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হলে দেশের গণতন্ত্র সংকটাপন্ন হয়। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, যারা দেশের সত্য-অসত্য তুলে ধরার সাহস দেখাচ্ছে, তাদের ওপর বীভৎস আক্রমণ হচ্ছে, হত্যার ঘটনাও ঘটছে। অপরাধীরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও আইনের শিথিলতাকে হাতিয়ার করে ভয়ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করছে, যাতে সংবাদ পরিবেশনের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সম্প্রতি গাজীপুরে ঘটে যাওয়া সাংবাদিক তুহিন হত্যার ঘটনা এ দেশের সাংবাদিক সম্প্রদায়ের জন্য এক মর্মান্তিক স্মৃতি হয়ে থাকবে। নির্ভীক সংবাদকর্মী যিনি কলমের জোরে সমাজের অনেক অন্ধকার চেহারা তুলে ধরেছিলেন, তাকে নির্মমভাবে প্রাণে ন্যস্ত করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন ব্যক্তির জীবনহানি নয়, এটি গণতন্ত্রের ওপর এক প্রখর আঘাত। তদন্তে স্বচ্ছতা ও দ্রুততার অভাবে অপরাধীরা এখনও নিশ্চিন্ত।
এর আগে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র হামলা, প্রাণনাশের চেষ্টাসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের খবর পাওয়া গেছে। আইনের শিথিলতা ও বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা শাস্তিমুক্ত থাকার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। রাষ্ট্র ও প্রশাসন এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ না নেয়ায় সাংবাদিকদের ওপর সহিংসতার মাত্রা বেড়েই চলেছে। আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগে শিথিলতা সাংবাদিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা এক প্রতিরোধহীন অবস্থায় ফেলেছে। সাংবাদিকরা আজ অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করছেন, যার কারণে তারা অনিচ্ছায় হলেও আত্মসংযমে বাধ্য হচ্ছেন।
স্বাধীনতা ও মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য এটি এক বড় ধাক্কা। সাংবাদিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। শুধু আইনের কাঠামোই নয়, বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও দ্রুততা আনা জরুরি। অপরাধীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সাংবাদিকতা পেশাকে সম্মানজনক ও নিরাপদ করে গড়ে তোলার জন্য সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতেও হবে। আইনের শিথিলতা ও রাষ্ট্রীয় অবহেলা দূর না করলে সত্য বলার পথ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন সাংবাদিকরা আর কলম ধরবে না, সত্যই লুকিয়ে থাকবে, আর গণতন্ত্র হারাবে তার অটুট প্রহরী। আজকের বাংলাদেশে সাংবাদিকদের জীবন রক্ষায় শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ সময়ের দাবি। নয়তো সাংবাদিকতা হয়ে উঠবে মৃত্যুর খেলা, এবং আমরা হারিয়ে ফেলব সেই গণতন্ত্র যেটা আমরা গর্ব করতাম।
লেখক- শিক্ষার্থী, সাংবাদিক।