প্রত্যন্ত অঞ্চলে গড়েছেন বিলাসবহুল বাড়ি (পর্ব-১)
ফরিদপুরে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে অভিনব প্রতারণা

- আপডেট সময় : ০১:১৫:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫
- / ১৪৯ বার পড়া হয়েছে
স্টাফ রিপোর্টার
ইউরোপের বিভিন্ন দেশে পাঠানোর কথা বলে শতাধিক যুবকের কাছ থেকে অভিনব প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার তুজারপুর ইউপির সড়াইবাড়ী এলাকার হাবিবুর রহমান তালুকদারের পুত্র কামরুলের বিরুদ্বে।
অভিযোগ উঠেছে প্রতারক কামরুল ও তার সহযোগী একই এলাকার লায়েকুজ্জামান চুন্নুর পুত্র আসিফ ইমরান ফরিদপুরের ভাংগাসহ অন্যান্য উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ( উল্লেখ যোগ্য দেশ সমূহ, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাজ্য, পর্তুগাল, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পোল্যান্ড, গ্রিস, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, চেক প্রজাতন্ত্র, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ, এবং রাশিয়া) পাঠানোর নামে প্রতারণার মাধম্যে বেকার যুবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
সরেজমিনে গিয়ে জানাযায়, ঢাকা থেকে লুৎফর রহমান ও মফিজ উদ্দিন তার কামরুল ও তার সহযোগী আসিফ ইমরানকে দিয়ে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর নামে প্রতারণার মাধ্যমে বেকার যুবকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও মানব প্রাচারের গুরুতর অভিযোগও উঠে লুৎফর কামরুল গংদের বিরুদ্বে। লুৎফর ও মফিজ সেগুন বাগিচায় কর কমিশনে চাকরি করার পাশাপাশি কামরুল ও তার সহযোগী প্রতারণা কওে আসছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, লুৎফর রহমান ও মফিজ উদ্দিন সরকারী চাকুরী করার সুবাধে আওয়ামী ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে প্রতারণা চালিয়ে আসছিলেন। প্রতারনার অর্থে কামরুল ও তার দুই ভাই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করায় এলাকায় চলছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে এমন রাজপ্রাসাদের মত বাড়ি নির্মাণ ও প্রতারণার মাধ্যমে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করে লুৎফর কামরুল গংদের বিরুদ্বে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান স্থানীয়রা।
ভুক্তভোগীরা জানান, তারা কামরুল ও তার সহকারী আসিফ ইমরানের প্রলোভনে তারা গবাদিপশু বিক্রি, জমি বন্ধকসহ সুদে এনে লাখ লাখ টাকা তুলে দেন কামরুলের হাতে। ইউরোপের দেশগুলোতে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো পারিশ্রমিক পেয়ে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ার আশায়। কিন্তু দীর্ঘ ২-৩ বছর বা তারও অধিক সময় অতিবাহিত হলেও তাদেরকে ইউরোপে পাঠাতে পারেনি। বিদেশ পাঠাতে দিনের পর দিন তারিখ পরিবর্তন করে আসছিল। হঠাৎ করে বেশ কিছুদিন ধরে কামরুল তার সহকারী আসিফ ইমরানের সাথে দেখা বা যোগাযোগ করতে পারছিন না । চানু মোল্লা নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমি ২ বছর আগে ১৪ লাখ টাকা দিয়েছি। এরপর থেকে শুধু ঘুরাচ্ছে। এখন তাদের কাউকেই পাচ্ছিনা। বুঝতে পারছি আমি প্রতারিত হয়েছি।
মোহাম্মদ কামরুল নামে একজন বলেন ,আমি ১২ লাখ টাকা দিয়েছি। ৩ বছরেও আমাকে বিদেশ নিতে পারেনি। এখন তারা গা ডাকা দিয়েছে। সাজু চৌধুরী নামে আরেক ভুক্তভোগী বলেন, তিনি সাড়ে ৩ বছর আগে সৌদি আরব যাওয়ার জন্য ৮ লাখ টাকা দিয়েছেন । দীর্ঘদিন যাবত শুধু ঘুরাচ্ছেন। আমরা স্থানীয়ভাবে এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা। কারণ, সবাই তাদেরকে ভয় পায়। কামরুলের বড় দুই ভাই এনবিআর এ চাকরি করে। কামরুল প্রকাশ্যে থাকলেও এই প্রতারণার মূলহোতা লুৎফর রহমান , মফিজ উদ্দিন। আমি যখন টাকা আর বই দেই তখন (আমার বিশ্বাস অর্জনের জন্য সম্ভবত) ঢাকার লুৎফর রহমান নামে একজনের সাথে মোবাইলে কথা বলায় কামরুল। তিনি আমাকে কামরুলের বড় ভাই পরিচয় দেন। কামরুল তাকে বড় বাবু হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর তিনি ফোনে আমাকে বলেন, কোন সমস্যা হবেনা । আমি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে সারাদেশ থেকে বিদেশে লোক পাঠানোর অনুমতি পাইছি। কামরুলকে দিয়ে পরিচালনা করাচ্ছি। চিন্তা করোনা।
সেই বিশ্বাসে আমি কামরুলের হাতে ১৮ লাখ টাকা দেই। টাকা দেওয়ার পর আড়াই বছর যাবৎ ঘুরতেছি। সাম্প্রতিক কামরুল ও তার সহযোগী গা ডাকা দেওয়ার পর ঢাকার বড় বাবু লুৎফর রহমানের সাথেও যোগাযোগ করতে পারিনি। তারা বাসা বা অফিস কোনটাই চিনিনা বলে এখন অসহায় এর মত বসে আছি। এখন সেই বড় ভাই লুৎফর রহমানের সাথেও যোগযোগ করতে পারতেছিনা। আমি সরকারের কাছে প্রতারক কামরুল ও তার সহকারী আসিফ ইমরানকে গ্রেফতার পূর্বক আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহনসহ তাদের পাওনা টাকা উদ্বার পূর্বক ফেরত পাওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
এবিষয়ে জানতে কামরুল ও তার সহকারী আসিফ মুঠোফোনে একাধিকবার বর করা হলে তাদের ব্যবহৃত নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। তবে ঠিকানা বা যোগাযোগের কোন মাধ্যম না পাওয়ায় ঢাকার বড় বাবু লুৎফর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। প্রতারণার শিকার হওয়া ভুক্তভোগীরা প্রতারকদের খুঁজে বের করাসহ নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে প্রতারকদের গ্রেফতার পূর্বক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করার পাশাপাশি তাদের দেওয়া টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।
ভিডিও—-
https://youtube.com/shorts/7uxChpS515c?si=xxxe8QkD35RXL6vf