ঢাকা ০৯:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫, ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রয়াত সাংবাদিক রিমনের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া মাহফিল ও স্মরণ সভা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনে কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির দোয়া মাহফিল সৌদি আরবে খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন ঋণের দায়ে ২ সন্তানসহ স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যা সারাদেশে আওয়াজ উঠছে বিএনপি এবার ক্ষমতায় আসবে: আমান উল্লাহ আমান দেশের ক্রান্তিকালীন সময়ে জিয়া পরিবারই নেতৃত্ব দেয়: ব্যারিস্টার অমি মোমেনা বেওয়ার কান্নায় সাড়া দিয়ে সহায়তায় ছুটলেন উলিপুরের ইউএনও নয়ন কুমার সাহা বিজিবির অভিযানে ৩০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধারসহ আটক ১ বেগম খালেদা জিয়ার জন্মবার্ষিকীতে ত্রিশালে কুরআনখানী ও দোয়া মাহফিল কক্সবাজার-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীতকরণের জোরালো দাবি

চলনবিলে ছোট নৌকার চাহিদা বাড়লেও কমছে যাত্রীবাহী নৌকার

প্রলয় ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০১:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৬৫ বার পড়া হয়েছে

মামুন হোসেন, পাবনা সংবাদদাতা

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। তাই আবহমান কাল থেকেই নদী পথে বাহন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে নৌকা। বর্ষা মৌসুমে গ্রামগঞ্জের নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায়, চলাচলে চাহিদা বাড়ে নৌকার। ভারি বর্ষণে জেলার বিভিন্ন নদী, বিলঝিল ও জলাশয়গুলোতে বাড়তে শুরু করেছে পানি। ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন গ্রাম। বিল ও নদীর নতুন পানিতে মাছ ধরতে নেমেছে জেলেরাও। তাই বর্ষার ভরা মৌসুমে বাড়ছে নৌকার চাহিদা। ভরা মৌসুমে নৌকার চাহিদা জোগান দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছে কারিগররাও। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত, হাট-বাজার, মাছ ধরা, গোখাদ্য সংগ্রহ, বিভিন্ন এলাকায় খেয়া পারাপারের জন্য বাহন হিসেবে বিলাঞ্চলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নৌকা।

তাই বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকা তৈরিতে ব্যস্তত সময় পার করছেন চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার নৌকা তৈরির কারিগররা। বর্ষা মৌসুমে নৌকা বিক্রি করে বেশ লাভবান হন তারা।

চাটমোহর উপজেলার নৌকা তৈরির কারিগর আব্দুল মজিদ জানান, বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকার চাহিদা বাড়ছে। তাই দিন-রাত পরিশ্রম করে নৌকা তৈরি করছেন তারা। তিনি জানান, আষাঢ় ও শ্রাবণ বর্ষা কাল হলেও বিলাঞ্চলে আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্ত, বর্ষার পানিতে নীচু গ্রাম ও রাস্তা-ঘাট ডুবে যায়। ফলে এসব অঞ্চলের মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকাতে যাতায়াত করে। দৈনন্দিন প্রতিটি কাজে নৌকার প্রয়োজন তাদের। আর এ কারণেই বর্ষা মৌসুমে এলাকাগুলোতে বাড়ে নৌকার কদর। তিনি বলেন, জেলার সব উপজেলাতেই কম-বেশি নৌকার প্রয়োজন হলেও চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার হান্ডিয়াল, খান মরিচ, দিল পাশার, নিমাইচড়া, অষ্টমনিষা, ছাইকোলা ও পুংগলী ইউনিয়নের নীচু গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি নৌকার প্রয়োজন হয়।

হান্ডিয়াল নলডাঙ্গা এলাকার নৌকা ক্রেতা মঞ্জিল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে নৌকা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া, মাছ ধরা, গো খাদ্য সংগ্রহ, হাট-বাজারে যাওয়া সহ যেকোনো কাজে নৌকার প্রয়োজন হয় তাদের। এ কারণেই নৌকা কিনতে হাটে আসছেন তিনি।

চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল মিস্ত্রি পাড়ার প্রবীণ নৌকা কারিগর প্রাণ কৃষ্ণের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৭০ সাল থেকে নৌকা তৈরির কাজ করছেন তিনি। প্রায় ৫৮ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি। এ পেশায় কাজ করেই ছেলে-মেয়েকে করিয়েছেন পড়াশোনা, চালাচ্ছেন সংসার। নৌকার হাত প্রতি দুই থেকে তিনশো টাকা মুজুরিতে নৌকা তৈরির কাজ করেন তিনি। একটা ১২-১৩ হাতের মাছ ধরা ছোট ডিঙি নৌকা বানাতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে তার। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ২০ টি নৌকা তৈরি করেছেন তিনি। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে আরও নৌকা তৈরি করবেন বলে জানান এই কারিগর। তিনি জানান, আগে ১২-১৩ হাতের ডিঙি নৌকা দুই’শ থেকে পাঁচ’শ টাকা বিক্রি করতেন তিনি। এখন সে নৌকা বিক্রি করেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আগে নৌকার দাম কম থাকলেও নৌকার চাহিদা ছিলো বেশি, বর্তমানে ছোট মাছ ধরা ডিঙি নৌকার দাম বাড়লেও কমেছে ইঞ্জিন চালিত যাত্রীবাহী ও অন্যন্য নৌকার চাহিদা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে বিলে ৪ থেকে ৫ মাস ও নদীগুলোতে প্রায় সারা বছরই পানি থাকতো। বর্তমানে বিল ও নদীগুলোতে পানি না থাকায়, মাছ ধরা ছোট ডিঙি নৌকার চাহিদা থাকলেও, কমে গেছে বড় নৌকার চাহিদা।

চাটমোহর উপজেলার নৌকার মহাজন আব্দুল হামিদ জানান, আমাদের এলাকাটি চলনবিল অধ্যুষিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। তবে কয়েকবছর যাবত বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট কালর্ভাট, ব্রিজ ও রাস্তাঘাট এবং নদীগুলো খনন না করার কারণে ভরাট হয়ে যাওয়ায়। আগের মতো আর নৌকা চলাচল করতে পারে না বলে জানান তিনি। এ কারণে আর আগের মতো নৌকা বিক্রিও হয় না বলে জানান এই কারিগর। তিনি আরও বলেন, আগে চলনবিল দিয়ে নাটোরের গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপর উপজেলার মানুষ নৌপথে যাতায়াত করতো। তিনি বলেন, আগে যদি এক’শটি নৌকা তৈরি করতেন এখন তারা তৈরি করেন ১০ টি। তিনি বলেন, আগে মাছ ধরা ছোট নৌকার পাশাপাশি যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌকা তৈরি করতেন তিনি। বর্তমানে বিলে অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে নৌকা চলাচল করতে না পারায়, আগের মতো আর বড় নৌকা তৈরি করেন না তারা। তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নদী ও বিলগুলো যদি এখনই রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কার না করা হয় ভবিষ্যতে এঅঞ্চলটিতে আর নৌকার প্রচলন থাকবে না বলে জানান তিনি।

 

নিউজটি শেয়ার করুন

চলনবিলে ছোট নৌকার চাহিদা বাড়লেও কমছে যাত্রীবাহী নৌকার

আপডেট সময় : ০১:৩৫:৪০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

মামুন হোসেন, পাবনা সংবাদদাতা

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। তাই আবহমান কাল থেকেই নদী পথে বাহন হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে নৌকা। বর্ষা মৌসুমে গ্রামগঞ্জের নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হওয়ায়, চলাচলে চাহিদা বাড়ে নৌকার। ভারি বর্ষণে জেলার বিভিন্ন নদী, বিলঝিল ও জলাশয়গুলোতে বাড়তে শুরু করেছে পানি। ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন গ্রাম। বিল ও নদীর নতুন পানিতে মাছ ধরতে নেমেছে জেলেরাও। তাই বর্ষার ভরা মৌসুমে বাড়ছে নৌকার চাহিদা। ভরা মৌসুমে নৌকার চাহিদা জোগান দিতে দিনরাত পরিশ্রম করছে কারিগররাও। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাতায়াত, হাট-বাজার, মাছ ধরা, গোখাদ্য সংগ্রহ, বিভিন্ন এলাকায় খেয়া পারাপারের জন্য বাহন হিসেবে বিলাঞ্চলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নৌকা।

তাই বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকা তৈরিতে ব্যস্তত সময় পার করছেন চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার নৌকা তৈরির কারিগররা। বর্ষা মৌসুমে নৌকা বিক্রি করে বেশ লাভবান হন তারা।

চাটমোহর উপজেলার নৌকা তৈরির কারিগর আব্দুল মজিদ জানান, বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকার চাহিদা বাড়ছে। তাই দিন-রাত পরিশ্রম করে নৌকা তৈরি করছেন তারা। তিনি জানান, আষাঢ় ও শ্রাবণ বর্ষা কাল হলেও বিলাঞ্চলে আষাঢ়, শ্রাবণ, ভাদ্র ও আশ্বিন মাস পর্যন্ত, বর্ষার পানিতে নীচু গ্রাম ও রাস্তা-ঘাট ডুবে যায়। ফলে এসব অঞ্চলের মানুষ বর্ষা মৌসুমে নৌকাতে যাতায়াত করে। দৈনন্দিন প্রতিটি কাজে নৌকার প্রয়োজন তাদের। আর এ কারণেই বর্ষা মৌসুমে এলাকাগুলোতে বাড়ে নৌকার কদর। তিনি বলেন, জেলার সব উপজেলাতেই কম-বেশি নৌকার প্রয়োজন হলেও চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার হান্ডিয়াল, খান মরিচ, দিল পাশার, নিমাইচড়া, অষ্টমনিষা, ছাইকোলা ও পুংগলী ইউনিয়নের নীচু গ্রামগুলোতে সবচেয়ে বেশি নৌকার প্রয়োজন হয়।

হান্ডিয়াল নলডাঙ্গা এলাকার নৌকা ক্রেতা মঞ্জিল হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে নৌকা আমাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে যাওয়া, মাছ ধরা, গো খাদ্য সংগ্রহ, হাট-বাজারে যাওয়া সহ যেকোনো কাজে নৌকার প্রয়োজন হয় তাদের। এ কারণেই নৌকা কিনতে হাটে আসছেন তিনি।

চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল মিস্ত্রি পাড়ার প্রবীণ নৌকা কারিগর প্রাণ কৃষ্ণের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ১৯৭০ সাল থেকে নৌকা তৈরির কাজ করছেন তিনি। প্রায় ৫৮ বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত আছেন তিনি। এ পেশায় কাজ করেই ছেলে-মেয়েকে করিয়েছেন পড়াশোনা, চালাচ্ছেন সংসার। নৌকার হাত প্রতি দুই থেকে তিনশো টাকা মুজুরিতে নৌকা তৈরির কাজ করেন তিনি। একটা ১২-১৩ হাতের মাছ ধরা ছোট ডিঙি নৌকা বানাতে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগে তার। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত ২০ টি নৌকা তৈরি করেছেন তিনি। নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে আরও নৌকা তৈরি করবেন বলে জানান এই কারিগর। তিনি জানান, আগে ১২-১৩ হাতের ডিঙি নৌকা দুই’শ থেকে পাঁচ’শ টাকা বিক্রি করতেন তিনি। এখন সে নৌকা বিক্রি করেন ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আগে নৌকার দাম কম থাকলেও নৌকার চাহিদা ছিলো বেশি, বর্তমানে ছোট মাছ ধরা ডিঙি নৌকার দাম বাড়লেও কমেছে ইঞ্জিন চালিত যাত্রীবাহী ও অন্যন্য নৌকার চাহিদা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, আগে বিলে ৪ থেকে ৫ মাস ও নদীগুলোতে প্রায় সারা বছরই পানি থাকতো। বর্তমানে বিল ও নদীগুলোতে পানি না থাকায়, মাছ ধরা ছোট ডিঙি নৌকার চাহিদা থাকলেও, কমে গেছে বড় নৌকার চাহিদা।

চাটমোহর উপজেলার নৌকার মহাজন আব্দুল হামিদ জানান, আমাদের এলাকাটি চলনবিল অধ্যুষিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। তবে কয়েকবছর যাবত বিভিন্ন স্থানে ছোট ছোট কালর্ভাট, ব্রিজ ও রাস্তাঘাট এবং নদীগুলো খনন না করার কারণে ভরাট হয়ে যাওয়ায়। আগের মতো আর নৌকা চলাচল করতে পারে না বলে জানান তিনি। এ কারণে আর আগের মতো নৌকা বিক্রিও হয় না বলে জানান এই কারিগর। তিনি আরও বলেন, আগে চলনবিল দিয়ে নাটোরের গুরুদাসপুর, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া, পাবনার চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপর উপজেলার মানুষ নৌপথে যাতায়াত করতো। তিনি বলেন, আগে যদি এক’শটি নৌকা তৈরি করতেন এখন তারা তৈরি করেন ১০ টি। তিনি বলেন, আগে মাছ ধরা ছোট নৌকার পাশাপাশি যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী নৌকা তৈরি করতেন তিনি। বর্তমানে বিলে অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে নৌকা চলাচল করতে না পারায়, আগের মতো আর বড় নৌকা তৈরি করেন না তারা। তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নদী ও বিলগুলো যদি এখনই রক্ষণাবেক্ষণ বা সংস্কার না করা হয় ভবিষ্যতে এঅঞ্চলটিতে আর নৌকার প্রচলন থাকবে না বলে জানান তিনি।