সোমবার, ০৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
আনোয়ার হোসেন, গাজীপুর
গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে আওয়ামীলীগের দোসর একই পরিবারের সহোদর ভাই ও বোন অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ করছেন। স্থানীয়দের দাবি প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই চলছে তাদের কারবার। গাজীপুর মহানগর টঙ্গী পশ্চিম থানার মাছিমপুর এলাকার মৃত আলেক চাঁনের মেয়ে সীমা আক্তার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী এবং তার সহোদর ভাই ইয়াসিন মোল্লা স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল ইসলাম রাসেল সরকারের অনুসারী।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, টঙ্গীর মাছিমপুর মিলগেইট এলাকাটির অধিকাংশ জায়গা সাবেক ডিআইটি বর্তমানে রাজউক ১৯৬১ সালে অধিগ্রহণ করেন। এই এলাকায় গড়ে উঠেছে শিল্প কারখানা, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল মিলসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মদতে সরকারী অধিগ্রহণকৃত জায়গা দখল করে হয়ে গেছে মাছিমপুর মিলগেট বস্তি। এই বস্তিতে মাদক ব্যবসা রমরমা। কয়েক যুগ ধরে এই এলাকায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এছাড়াও সীমার বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক আইনে রুজু হওয়া ২০১২ সালের ১৭ মার্চ মাসে টঙ্গী মডেল থানার ১৮ নং মামলা, ২০১৭ সালের ২১ এপ্রিল মাসে জিএমপি’র টঙ্গী পশ্চিম থানার ৪১ নং মামলা, ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারী মাসে ২৮ নং মামলাসহ একাধিক মাদক মামলা। অনুসন্ধানে জানা যায়, সীমার আগের স্বামী সাগরের সাথে ঘর সংসার করা কালে ২ ছেলে শিমুল ও শ্যামল জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তার করার লক্ষ্যে সাগরকে তালাক দিয়ে ৫৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও স্থানীয় বিএনপি’র নেতা সেলিমের ভাগ্নে ফারুককে পুনরায় বিয়ে করে। এরপর সীমা ও তার স্বামীকে র্যাপিড একশন ব্যাটেলিয়ান র্যাব মাদক সংক্রান্তে গ্রেফতার করেন। সীমা ও তার ভাইয়ের অধিকাংশ মদতদাতারা অলৌখিক ক্ষমতাধর রাজনৈতিক দলের বড় নেতা। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে। এদিকে সীমার ভাই ইয়াসিন ৫৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি’র নেতা হাসেমের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি, সরকারী জায়গা দখলসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ পুরানো। অল্প সময়ে ঢাকা মেট্টো ট-২২৬০৬৯, ২৫০৫৯৮, ১৫৩২৪০, ন-২৩০৬০৪, ১৮৮৯১৯, ১৩৭০৭৪, ১৭৬৪৭৬, থ-২০২৬৪২, ড-১১৬৮০০ নং ট্রাকসহ আনুমানিক ১৩ টি ট্রাক ও বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েও থাকেন বস্তিতে। এই যুবলীগের নেতার রয়েছে ৪ জন স্ত্রী। তাদের নাম- সুমি, ফারজানা, স্মৃতি, তামান্না। এই ২ ভাই বোন সরকারি জায়গা দখল করে বাড়ি নির্মাণ করে প্রতি মাসে বাসা ভাড়া বাবদ উপার্জন করছে মোটা অংকের টাকা।
গত ৫ই আগস্টে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতাকে দমনে সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেলের নির্দেশনায় সীমা ও ইয়াসিনের নেতৃত্বে তাদের বাহিনীর সদস্যরা ব্যাপক নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়েছে। কিন্তু বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতাকে হত্যা ও নির্যাতনের মামলা থেকে রেহায় পেয়েছেন তারা। একারণে এদের নির্মূল করতে প্রশাসনের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। এমনকি বর্তমানে সীমা ও তার ভাইয়ের সহযোগীদের অত্যাচারে এই বস্তিতে অতিষ্ঠ ও জিম্মি গার্মেন্টস শ্রমিকসহ স্থানীয়রা। এবিষয়ে জানতে সীমার সাথে যোগাযোগ করলে সে জানায়, ফারুক উনার স্বামী। উনার বিরুদ্ধে মাদক মামলা গুলো নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।
বস্তিতে উনার কয়টি ঘর রয়েছে? জানতে চাইলে উনি তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করে। এবিষয়ে জানতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৫ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বিএনপি’র নেতা হাসেমের মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন করে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও উনি ফোন রিসিভ করে নি। এসংক্রান্তে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৫ নং সাবেক কাউন্সিলর ও স্থানীয় বিএনপি’র নেতা সেলিম জানান, একাধিক মাদক মামলার আসামী সীমার স্বামী ফারুক উনার ভাগ্নে। সীমা আগে মাদক কারবার করত। বর্তমানে ভালো হয়ে গেছে। আওয়ামীলীগের অনুসারী কিনা উনি জানেন না।
এ সংক্রান্তে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের টঙ্গী পশ্চিম থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) ইস্কান্দার জানান, সীমা ও ইয়াসিনের কর্মকান্ডের বিষয়ে পুলিশি নজরদারি অব্যাহত রয়েছে। উনার থানা এলাকায় কোন মাদক সম্রাট ও সম্রাজ্ঞী থাকতে পারবে না।
চলবে….